সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


স্বাগতম, পবিত্র মাহে রমজান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী এনায়েত কবীর।।

বছর ঘুরে আবার এলো পবিত্র মাহে রমজান। এই রমজান অন্য যে কোনো মাসের মত নয়। বরং এই রমজান বাকি এগারো মাসের চাইতে শ্রেষ্ঠ এবং বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ।

কারণ এই রমজান হল রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। সারা বছরের ঈমান ও তাকওয়ার পুঁজি জোগাড়ের মাস। বেশী বেশী ইবাদত ও নেক আমলের সুবর্ণ সুযোগের মাস। কল্যাণকামিতা, মানবিকতা ও সহমর্মিতার গুণ অর্জনের অপূর্ব সম্ভাবনার মাস।
হাদিসে পাকে নবীজি ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালার কসম, একজন মুসলমানের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম মাস আর নেই এবং মুনাফিকের জন্য এর চেয়ে ক্ষতির মাস আর নেই।

মুসলমান এই মাসে সারা বছরের জন্য ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। এই মাস মুমিনের জন্য গনিমত এবং মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। মুসনাদে আহমদ২/৩৩০, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/১৪০

উক্ত হাদিস থেকে বোঝা গেল, রমজানে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রমজানের প্রকৃত শিক্ষা এবং চেতনায় নিজেকে উজ্জীবিত করতে হবে। রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের শিশির নিজেকে সিক্ত করতে হবে।
আর এসব কিছু অর্জনে যারা বিমুখ আর উদাসিন থাকবে তারা বর্ণচোরা। এরা মুনাফিক।

মহান আল্লাহর প্রিয় ইবাদত হলো রোজা। তাই অন্য ইবাদতের চাইতে রোজার বিনিময়ও দেয়া হবে ভিন্ন ভাবে। বিশেষ মর্যাদায়। অন্য সকল ইবাদতের বদলা দেয়া হবে ফেরেশতাদের মাধ্যমে। কিন্তু রোজার বদলা আল্লাহ তায়ালা নিজেই দিবেন।

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেন, রোজা ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজ তাঁর নিজের জন্য। কিন্তু রোজা আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব। সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৯০৪।

জীবন নদীর বাঁকে আমরা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অনেক ভুল করে থাকি। আমাদের গুনার কোন শেষ নেই। কিন্তু এই রাশি রাশি গুনার কালিমা থেকে মুক্তির মাধ্যম হলো রোজা। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঈমান অবস্থায় এবং সওয়াবের আশায় যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোযা পালন করলো এবং ইবাদতের উদ্দেশ্যে রাতে জেগে রইলো, তার পূর্ববর্তী গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়। জামে তিরমিজি, হাদিস নং ৬৮৩।

জান্নাত আর্জন প্রতিটি মুমিনের পরম প্রত্যাশিত বিষয়। জান্নাতে যাওয়ার চাইতে বেশি সুখ আর আনন্দের কিছু হতে পারে না। সে জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে রোজাদার ব্যক্তিরা পাবে অন্যরকম সম্মান। হযরত সাহল রাযি থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে।

এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।

ঘোষণা দেয়া হবে, সওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে করে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৬।

এসব ফজিলত অর্জনের জন্য কিভাবে রোজা রাখতে হবে? এক্ষেত্রে করণীয় এবং বর্জনীয় কি? হাদিসে পাকে রয়েছে এর পরিষ্কার উত্তর।

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রোযা থাকা অবস্থায় যে ব্যক্তি অন্যায় কথাবার্তা তথা গীবত, মিথ্যা, গালিগালাজ, অপবাদ, অভিসম্পাত ইত্যাদি এবং অন্যায় কাজ না ছাড়ে, সে লোকের পানাহার ত্যাগে আল্লাহ্‌র কোন প্রয়োজন নেই।জামে-তিরমিজি, হাদিস নং ৭০৭।

আরেক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯০৪।

রমজানের বাইরের বৈধ কাজগুলোও রোজা অবস্থায় করা যায় না। নিষেধ। সুতরাং রোজা রেখে রমজানের বাহিরের নিষিদ্ধ কাজে যুক্ত হওয়া কতটুকু গর্হিত ও জঘন্য অন্যায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সব ধরনের পাপাচারে লিপ্ত থেকে গতানুগতিক পানাহার বর্জনকারী রোজাদারের ব্যাপারে নবীজী বলেন, অনেক রোজাদার এমন আছে যারা অভুক্ত থাকা ছাড়া রোজার বিনিময়ে আর কিছুই পায় না। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯০৩।

তাই আসুন রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের এই মাসে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সচেষ্ট হই। অতীতের সব গুনাহ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। অর্জন করি আল্লাহর অফুরন্ত রহমত।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ