আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: দেশের আকাশে পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সে অনুযায়ী রোববার থেকে রোজা রাখবেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। আজ শনিবার রাতে প্রথম তারাবির নামাজ পড়া হবে এবং দিবাগত রাতে সেহরি খাবেন মুসল্লিরা।
আজ শনিবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগে ফোন করে ফাউন্ডেশনের যশোরের উপ-পরিচালক চাঁদ দেখার সংবাদ জানান। কিছুক্ষণের মধ্যে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি চাঁদ দেখার সংবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে।
এদিকে, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় শুক্রবার থেকে রোজা শুরু হয়েছে।
এদিকে শনিবার রাতের এশার নামাজের পর তারাবির নামাজ শুরু হবে। এ উপলক্ষে মসজিদে মসজিদে তারাবি নামাজ আদায়ে বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে রমজান সংযম, আত্মশুদ্ধি ও ত্যাগের মাস। রহমত (আল্লাহর অনুগ্রহ), মাগফেরাত (ক্ষমা) ও নাজাত (দোজখের আগুন থেকে মুক্তি)- এ তিন অংশে বিভক্ত এ মাস।
এ মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী-সহবাস ও যে কোনো ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে রোজা পালন করেন মুসলমানরা। এ মাসের শেষ অংশে রয়েছে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম কদরের রাত। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, এ মাসে প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহতায়ালা ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেন। রমজান শেষেই দেখা মিলবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের।
তারাবির নামাজ পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত
ইসলামের অন্যতম প্রধান দুটি ইবাদত নামাজ ও রোজা ধনী–গরিবনির্বিশেষে সবার জন্য ফরজে আইন হিসেবে প্রযোজ্য। রোজার সঙ্গে তারাবিহর নামাজের সম্পর্কও সুনিবিড়। প্রিয় নবীজি সা. ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবিহ নামাজকে সুন্নাত করেছি; যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমাদানে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে, যেরূপ নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়।’ (নাসায়ী, পৃষ্ঠা: ২৩৯)।
ইবাদত পালন করতে হয় সুন্নাত পদ্ধতি অনুসারে। রমজানের চাঁদ দেখা গেলে রোজার আগেই তারাবিহর নামাজ আদায় করা রমজানের সুন্নাত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমাদান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়বে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৬)।
এমনকি যাঁরা শরিয়তসম্মত কোনো গ্রহণযোগ্য ওজরের কারণে রোজা পালনে অক্ষম, তাঁরাও সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে তারাবিহ নামাজ পড়বেন।
‘তারাবিহ’র আভিধানিক অর্থ বিশ্রাম নেওয়া ও প্রশান্তি লাভ করা। এটি ‘তারবিহাহ’ শব্দের বহুবচন। পরিভাষায় ‘রমাদান মাসে এশার নামাজের পর আদায়কৃত সুন্নাত নামাজ তারাবিহ নামে সুপরিচিত।’ (কামুসুল ফিকহ)। চার রাকাত পরপর বিরতির মাধ্যমে বিশ্রাম নেওয়া হয় বলে এর নাম তারাবিহ। তারাবিহর নামাজে দেহ–মনে প্রশান্তি আসে বলেই এর নাম তারাবিহ বা প্রশান্তির নামাজ। ২০ রাকাত তারাবিহর নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।
পুরুষদের তারাবিহর নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নাত। ওজরের কারণে যদি মসজিদে যাওয়া সম্ভবপর না হয় এবং জামাত করা না যায়, তখন একা পড়লেও পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে। অনুরূপ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজও বিশেষ অবস্থায় একাকী আদায় করা যাবে। এতেও পরিপূর্ণ সওয়াব লাভ হবে।
তারাবিহর নামাজের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য কোরআন তিলাওয়াত করা ও শোনা। তারাবিহর নামাজে পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার পাঠ করা সুন্নাত। একে খতম তারাবিহ বলা হয়।
যাঁরা সব সময় খতম তারাবিহ পড়ে থাকেন বা পড়ার ইচ্ছা রাখেন, তাঁরা বিশেষ কোনো কারণে তা করতে না পারলেও এর পূর্ণ সওয়াব লাভ করবেন। হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি, হাদিস: ১)।
-এটি