আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: আধুনিক অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণে সক্ষম দীর্ঘস্থায়ী ও পরিবেশবান্ধব অর্থনীতিকে টেকসই অর্থনীতি বলে। পরিবেশ ও অর্থনীতি. পৃষ্ঠা ১৪৩, ঢাকেশ্বরী প্রকাশনী, প্রকাশকাল ২০১৫ ঈ.
কুরআন বা ইসলাম এই টেকসই অর্থনীতি সম্পর্কে কী বলে?
আসলে কুরআন হাদীসে সরাসরি টেকসই অর্থনীতি বলে কোন শব্দ নেই। কারণ এই পরিভাষা তৈরি হয়েছে অনেক পরে। কিন্তু সংজ্ঞায় উল্লিখিত টেকসই অর্থনীতির চাইতেও আরো মজবুত, অগ্রসর ও সমৃদ্ধ অর্থনীতির নির্দেশনা প্রদান করে ইসলাম। কিন্তু কিভাবে? সেকথাই সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করব। সবাই জানে, ইসলাম শুধু বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের মানুষেরই নয় বরং অবলা প্রাণীদের চাহিদাও পুরণ করার নির্দেশ দিয়েছে।
একদিনের ঘটনা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন একজনের বাগানে প্রবেশ করলেন। সেখানে ছিল একটি ক্ষুধার্ত উট। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চাইলেন, এই উটটি কার? মালিক এগিয়ে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা আমার। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাকে এই উটের মালিক বানিয়েছেন, অথচ তুমি এই উটের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করছ না। উটটি আমার কাছে নালিশ করেছে, তুমি তাকে ক্ষুধার্ত রাখ। সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-২৫৪৯।
খলীফা হযরত উমর রাযি. এর দায়িত্বশীল বক্তব্যটি এখানে স্মরণ করার মত। তিনি বলেছিলেন, যদি ফোরাত নদীর তীরে একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায়, এর জন্য উমরকে আল্লাহর দরবারে দায়ী হতে হবে।
উপরের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, টেকসই অর্থনীতি হল যেই অর্থনীতি বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রয়োজন পূরণে দীর্ঘস্থায়ী সক্ষমতা রাখে। বর্তমান প্রজন্মের প্রয়োজন পূরণে ইসলাম সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। একজন মানুষের পরিশ্রমের কামাই করা টাকার প্রথম খরচটা পরিবারের লোকদের জন্য করতে নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُولُ. যারা তোমার প্রতিপাল্য সর্বপ্রথম খরচটা তাদের ওপরই করবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৩১।
ভবিষ্যত প্রজন্মকে সচ্ছল ও স্বনির্ভর অবস্থায় রেখে যেতে ইসলাম পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছে। হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- إِنَّكَ أَنْ تَتْرُكَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَدَعَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ. মানুষের কাছে হাত পাতার অবস্থায় রেখে যাওয়ার চাইতে ওয়ারিসগণকে সম্পদশালী অবস্থায় রেখে যাওয়া উত্তম। -সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-২৮৬৪।
পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক আচরণ টেকসই অর্থনীতির অন্যতম শর্ত। এক্ষেত্রে ইসলাম কী বলে? ইসলাম শুধু অর্থনীতির ক্ষেত্রেই নয় বরং সব বিষয়েই পরিবেশবান্ধব আচরণের আদেশ দেয়। বিভিন্ন বর্জ্য পরিবেশকে কলুষিত করে। আবহাওয়াকে করে বিষাক্ত। তাই পরিবেশ ও আবহাওয়াকে দুষিত করে এমন বর্জ্য যত্রতত্র ফেলতে নিষেধ করেছে ইসলাম। হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবীজি যখন সিঙ্গা লাগাতেন বা লোম পরিষ্কার করতেন অথবা নখ কাটতেন, তখন এগুলো পুঁতে ফেলার জন্য পাঠাতেন।-আত তারিখুল কুবরা: ইমাম বুখারী ৮/৪৫। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا عَطَسَ غَطَّى وَجْهَهُ بِيَدِهِ أَوْ بِثَوْبِهِ وَغَضَّ بِهَا صَوْتَهُ.
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাঁচি দিতেন তখন এক টুকরা কাপড় বা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলতেন এবং আওয়াজ ছোট করতেন। সুনানে তিরমিযী: হাদীস নং- ২৭৪৫।
আসলে ইসলাম শুধু অর্থনীতির ক্ষেত্রেই নয় বরং সর্বক্ষেত্রেই পরিবেশবান্ধব আচরণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। সুতরাং বলাই চলে, ইসলামী অর্থব্যবস্থা প্রচলিত টেকসই অর্থনীতির চাইতে অনেক বেশি মযবুত ও অগ্রসর। কিন্তু টেকসই অর্থনীতি বাস্তবায়নে ইসলামের নির্দেশনা বা রূপরেখা কি? এখানে সংক্ষেপে এ বিষয়ে সরল কিছু ভাবনা তুলে ধরা হল।
মালিকানার মানসিকতায় ভারসাম্য সৃষ্টি
মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে তার মন। মন ঠিক হলে সব ঠিক। আর ভুল হলে সবই ভুল। তাই ইসলাম প্রথমে অর্থ সম্পদের ব্যাপারে মানুষের মন-মানসিকতা ঠিক করতে অনুপ্রাণিত করেছে।
অর্থসম্পদ একটি উত্তম জিনিস। কুরআনের কোথাও অর্থ সম্পদকে খায়ের, আবার কোথাও ফযল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর অর্থসম্পদের মালিকানা লাভের আশা একটি স্বভাবজাত বিষয়। ইসলাম এই স্বভাবজাত বিষয়কে স্বীকার করে। সমাজবাদের মত ব্যক্তি মালিকানাকে একেবারে উড়িয়ে দেয় না।
আবার পুঁজিবাদের মত বল্গাহীন ছেড়েও দেয় না। বরং সম্পদের সংরক্ষণ, ভোগ, হস্তান্তর ইত্যাদির নিয়ন্ত্রিত ও সমর্থিত অধিকার দেয় ইসলাম। ইসলামী অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ সম্পদের এই মালিকানাকে আমানতী মালিকানা বলেছেন। কোন কোন ইসলামী অর্থনীতিবিদ একে ওয়াকালতী মালিকানা হিসেবে ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُواْ وَلِلنِّسَاء نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبْنَ. পুরুষরা যা উপার্জন করবে তাতে তাদের মালিকানা থাকবে, আর মহিলারা যা উপার্জন করবে তাতে তাদের অধিকার থাকবে। সূরা নিসা: ৩২।
অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেন- نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُم مَّعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَتَّخِذَ بَعْضُهُم بَعْضًا سُخْرِيًّا. আমি দুনিয়ার জীবন উপকরণকে তাদের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছি এবং কাউকে কারো ওপর প্রাধান্য দিয়েছি যাতে করে একজন আরেক জনকে কাজে লাগাতে পারে। সূরা যুখরুফ: ৩২।
উপরের আয়াত দ্বারা একথা বুঝে আসে যে, ইসলাম ব্যক্তি মালিকানাকে স্বীকার করে। তবে সম্পদের একচ্ছত্র ও নিরঙ্কুশ মালিকানাকে ইসলাম স্বীকার করে না। কারণ একচ্ছত্র ও নিরঙ্কুশ মালিকানার ধারণা মানুষকে স্বেচ্ছাচারি ও বেপরোয়া করে তোলে, মানুষকে শোষণের প্রেরণা যোগায় ও অর্থনৈতিক লুটতরাজে উদ্বুব্ধ করে। তাই ইসলাম সম্পদে একচ্ছত্র ও নিরঙ্কুশ ব্যক্তি মালিকানাকে রহিত করেছে। নির্মূল করেছে শোষণবাদী, স্বেচ্ছাচারী মানসিকতাকে। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- فَسُبْحَانَ الَّذِي بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ. অতএব পবিত্র তিনি, যার হাতে সবকিছুর মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ এবং তাঁরই দিকে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। -সূরা ইয়াসিন: ৮৩।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ. তুমি কি জান না যে, নভোমণ্ডল ও ভূ-মন্ডলের আধিপত্য একমাত্র আল্লাহর। সূরা বাকারা: ১০৭। ইসলাম প্রথমে এভাবেই সম্পদের মালিকানার ধারণায় ভারসাম্য এনেছে।
ভোগ মানসিকতার নিয়ন্ত্রণ।।
অতিরিক্ত ভোগ মানসিকতা ও লোভ খুবই ক্ষতিকর বিষয়। এমন মানসিকতা সুস্থ এবং ন্যায়সংগত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা। এক শ্রেণীর মানুষের অতিরিক্ত ভোগের ফলে অন্য অংশ পতিত হয় চরম দারিদ্রে। তাই ইসলাম অতিরিক্ত ভোগ মানসিকতাকে সমর্থন করে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- كن في الدنيا كأنك غريب أو عابر سبيل. দুনিয়ায় এমনভাবে জীবন যাপন কর; যেন তুমি একজন বিদেশী অথবা পথিক। -সহীহ বুখারী: হাদীস নং- ৬০৫৩।
অরেক হাদীসে নবীজি ইরশাদ করেন- ما آمن بي من بات شبعان وجاره جائع الى جنبه وهو يعلم به. যে ব্যক্তি প্রতিবেশী অভুক্ত জেনেও সন্তুষ্টচিত্তে রাত যাপন করল,আমার ওপর এমন ব্যক্তির ঈমান নেই। -তবরানী: হাদীস নং-৭৫১।
হযরত আবূ হুরায়রা রা. বলেন- ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان لا يدخر شيئا لغد আল্লাহর নবী কখনো আগামী দিনের জন্য কিছু জমা করে রাখতেন না। -সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৩৬২।
ইসলামে অর্থ উপার্জনের মূল লক্ষ্যও ভোগলিপ্সা নয়। পরকালীন সফলতাই এখানে বড় কথা। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে,
وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الآخِرَةَ وَلا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا তোমাকে আল্লাহ তাআলা তাআলা যা দিয়েছেন তা দিয়ে পরকালের বাসস্থান তালাশ কর, তবে তোমার জাগতিক অংশকে ভুলে যেয়ো না। -সূরা কাসাস: ৭৭।
এ দুনিয়া হল পরকালের কৃষিক্ষেত্র। পরকালীন জীবনের পুঁজি সংগ্রহের স্থান। ভোগভূমি নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَن كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَن كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الآخِرَةِ مِن نَّصِيبٍ
যে আখেরাতের ফসল কামনা করে, তার জন্য আমি ফসল বাড়িয়ে দেই, আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে,আমি তাকে তা থেকে কিছু দেই। কিন্তু আখেরাতে তার জন্য কিছুই থাকবে না। -সূরা শূরা: ২০।
ইসলাম এভাবেই মানুষকে নির্মোহ হওয়ার উৎসাহ যোগায়। অন্যের কল্যাণে নিজের সুখ বিলিয়ে দিতে এবং অপরের সুখেই নিজে সুখী হওয়ার মানসিকতা তৈরি করে। পরকালীন সাফল্যের পথে করে উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত।
সম্পদের সুষ্ঠু আবর্তন নিশ্চিতকরণ
এই পৃথিবীর সবাই আল্লাহর পরিবারভুক্ত। তাই তিনি সবার রিযিকের দায়িত্ব গ্রহন করেছেন। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিচ্ছেন-
وَمَا مِن دَآبَّةٍ فِي الأَرْضِ إِلاَّ عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا.এই পৃথিবীতে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। -সূরা হুদ: ৬।
সাথে সাথে তাঁর দেয়া সম্পদের সুষম আবর্তন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ সম্পদের পাহাড় নির্মাণ করবে, কেউ টাকার কুমির হবে, ইসলাম তা সমর্থন করে না। কুরআনে কারীমে ঘোষিত হয়েছে- يْ لا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الأَغْنِيَاء مِنكُمْ. তোমাদের মাঝে যারা বিত্তশালী কেবল তাদের মাঝেই যেন সম্পদ আবর্তন না করে। -সূরা হাশর: ৭।
সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখা পরকালীন সাজার কারণ হয়ে দাড়াবে। কুরআনে ঘোষিত হয়েছে-
وَالذِينَ يَكنِزُونَ الذَّهَبَ وَالفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشّرهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ يَوْمَ يُحمَى عَلَيهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكوَى بِهَا جِبَاههم وَجنُوبُهُم وَظُهُورُهُم هَذَا مَا كَنَزتُم لِأَنفُسِكُم فَذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكنِزُونَ. যারা স্বর্ণ রুপা পুঞ্জিভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে কঠিন শাস্তির সংবাদ দাও, যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং এর দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ¦ ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। বলা হবে, এই তো যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জিভূত করেছিলে। -সূরা তওবা: ৩৫।
সুদ নিষিদ্ধকরণ
সুদ। অর্থনৈতিক শোষন ও স্থিতিশীলতা ধ্বংসের ভয়ংকর হাতিয়ার। তা অর্থনীতিকে করে ফেলে একপেশে। সম্পদের সঠিক ও সুষ্ঠু আবর্তনকে করে ব্যাহত।
সমাজের কতিপয় লোকের হাতে সম্পদকে করে দেয় কুক্ষিগত । মানবিকতা, সমবেদনা, মানবতা, ও নৈতিকতাকে করে দেয় অর্থহীন। ধনীকে বানায় আরো ধনী, নিঃস্বকে বানায় আরো নিঃস্ব। সমাজ ব্যবস্থায় আনে আকাশচুম্বী বৈষম্য। তাই সুদকে আল্লাহ তাআলা তাআলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন- أَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا. আল্লাহ তাআলা তাআলা বাণিজ্যিক বেচাকেনা জায়েয করেছেন এবং সকল দিক থেকে সুদ হারাম করেছেন। -সূরা বাকারা: ২৭৫।
عن جابر قال لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم آكل الربا وموكله وكاتبه وشاهديه وقال هم سواء. হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন সুদখোর, সুদদাতা, সুদের হিসাব রক্ষক, সুুদের সাক্ষীদের প্রতি এবং তিনি বলেছেন, তারা সকলেই সমান অপরাধী। - সহীহ মুসলিম: হাদীস নং- ১৫৯৮।
সুদ যে নামেই হোক তা হারাম। বর্তমানে আধুনিক অর্থনীতির নাম দিয়ে সুদকে বৈধ করার ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলা হয়, সুদ ও রিবার মধ্যে পার্থক্য আছে। যে সুদ প্রচলিত আইনসম্মত হার থেকে পরিমাণে বেশি হবে, তা হল রিবা। তাই হারাম। আর যে সুদ প্রচলিত আইনসম্মত, তা রিবা নয় বরং বৈধ মুনাফা। আধুনিক অর্থনীতির পরিভাষায় যাকে ইন্টারেস্ট বলা হয়।
এমন কৌশলী কথা আরবের মুশরিকরাও বলেছিলো। তারা বলত, সামান্য কিছু বেশি নেয়ার কারণে যদি সুদ হারাম হয় তবে বিক্রয় হালাল হবে কেন? কারণ এখানেও তো কিছু বেশি রয়েছে। সব রসূনের গোড়া এক বলে একটা কথা আছে। প্রাচীন ও আধুনিক অর্থনীতির কান্ডারীদের কথা শুনে প্রবাদের স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক মন্দা এবং কারণ
সুদ ও সুদের মাধ্যমে অর্জিত প্রবৃদ্ধির ক্ষয় অনিবার্য। সুদলব্ধ সমৃদ্ধির পতন আবশ্যম্ভাবী। কুরআনে পাকে ইরশাদ হয়েছে,
يَمْحَقُ اللَّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ. আল্লাহ তাআলা সুদকে মিটিয়ে দেন এবং দানকে বাড়িয়ে দেন। -সূরা বাকারা: ২৭৬।
আধুনিক অর্থপন্ডিতরা এতদিন এসব কথা মানতে নারাজ ছিলেন। কিন্তু সুদের প্রভাবে বিভিন্ন সময়ের অর্থনৈতিক মন্দায় কুরআনের বাণীই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
দারিদ্র বিমোচন
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে দারিদ্র বিমোচন আবশ্যক। তাই দারিদ্র বিমোচনে বিশ্ব এখন একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশও বসে নেই। দারিদ্র বিমোচনে কোমর বেধে নেমে পড়েছে।
গঠন করেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এছাড়া রয়েছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী, গ্রামীণ সড়ক ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচী, শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী ইত্যাদি।
বেসরকারী অনেক সংস্থাও দারিদ্র বিমোচনে ব্যতিব্যস্ত। যেমন, প্রশিকা, পল্লী কর্মসহায়তা ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক, এসো কাজ করি ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ ব্যাংক ইত্যাদি।
এগুলোর মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংক নাকি দারিদ্র দূরীকরণে রেখেছে অনেক অবদান? দারিদ্র দূর করে নাকি শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত করছে এই ব্যাংক? তাই নোবেল প্রাইজ পেয়েছে। এমনই মনে করেন নোবেল কমিটির প্রধান সহকারী সেভেরে লোজার্ড।
বিবিসিকে তিনি বলেন, প্রতি বছর যুদ্ধের চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় দারিদ্রের কারণে। সুতরাং পৃথিবীর সম্পদ নিয়ে যে চরম বিভক্তি রয়েছে, সেই সহিংসতার বিরূদ্ধে লড়াই বেশি সঙ্গত। -যুগান্তর ১৫.১০.২০০৬।
-এটি