সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


স্ত্রী বদদীন হলে, পুরো ঘরে বদদীনি ছড়িয়ে পড়ে!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুযযাম্মিল হক উমায়ের ।। হযরত কারী সিদ্দীক আহমাদ বান্দাবী রাহিমাহুল্লাহু তাআলা বলেন, একজন কর আদায়কারী অনেক দীনদার ছিলেন। তিনি কখনো ঘুষ গ্রহণ করতেন না। ঘটনাক্রমে তাঁর চাপরাশীর এখানে বিয়ের অনুষ্ঠান। চাপরাশী বেচারা দীনদার লোকের বিবিকে উক্ত অনুষ্ঠানে পাঠানোর জন্যে কাকুতি-মিনতি শুরু করলো।

বলতে লাগলো যে, জনাব! আপনার বিবি আমার অনুষ্ঠানে গেলে আমার সম্মান বাড়বে। মানুষ দেখবে, আমার বসের স্ত্রী আমার অনুষ্ঠানে যোগদান করেছে। কিন্তু কর আদায়কারী দীনদার লোক তাঁর স্ত্রীকে কোথাও বাইরে যেতে দিতেন না। তিনি অত্যন্ত সহজ-সরল, সাদাসিধে জীবন-যাপন করতেন। কাপড়ও অতি সাধারণ পরিধান করতেন।

অবশেষে মনের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চাপরাশী লোকের পীড়াপীড়িতে তিনি স্ত্রীকে উক্ত অনুষ্ঠানে পাঠাতে বাধ্য হলেন। স্ত্রী অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর দেখতে পেলেন, একেকজন মহিলা একেক রকম নীল, হলুদ, বিভিন্ন কালারের কাপড়, ও বিভিন্ন রকমের অলংকার পরিধান করে অনুষ্ঠানে যোগদান করতেছে। অন্যদিকে কর আদায়কারী দীনদার লোকের স্ত্রীর কাপড় ছিলো একদম সাদাসিধে। অন্যান্য মহিলাদের সাজগোজ দেখে ঐ মহিলা লজ্জিত হয়ে যায়। অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে নিজের স্বামীর উপর চটে বসে।

রাগে বলতে থাকে, আপনি আমাকে উক্ত অনুষ্ঠানে পাঠিয়ে ছোট করেছেন। আমাকে অপমান করেছেন। সেখানে গিয়ে তো দেখলাম, আপনার চাপরাশী, তার চেয়ে আরো নিম্ন শ্রেণীর লোকজনের স্ত্রীরাও দামি দামি কাপড় ও বিভিন্ন রকমের অলংকার পরিধান করে এসেছে। কর আদায়কারী দীনদার লোক স্ত্রীকে বুঝাতে চেষ্টা করলো যে, আমি যা বেতন পাই, তা দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে। এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব হয় না।

এই কথা শুনে স্ত্রী বললো, কেনো? তাদের বেতন তো আপনার থেকেও কম। তারা আপনার অধীনে চাকুরি করে। তারা যদি বেতন দিয়ে এসব করতে পারে, তাহলে আপনি করতে পারেন না কেনো? স্ত্রীর কথা শুনে স্বামী বললো, তারা তো ঘুষ খায়। হারাম খায়। তখন স্ত্রী বললো, তাহলে এইসব করার পথ কী আপনার জন্যে বন্ধ নাকি?

আপনি কেনো এগুলো গ্রহণ করেন না? আপনি কী সাধু হয়ে গেছেন নাকি? কর আদায়কারী দীনদার ছিলেন কথাটি ঠিক, তবে পাকাপোক্ত দীনদার তো ছিলেন না। স্ত্রী এমন পিছু নিয়েছে যে, অবশেষে তার দীনদার স্বামীকে ঘুষ গ্রহণ করতে বাধ্যই করেছে। অবশেষে স্ত্রীর কাছে পরাজয় হয়ে কর আদায়কারী দীনদার মহৎ মানুষটিও ঘুষ গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এই জন্যেই হাদিস শরীফে এসেছে, মহিলারা এমনই চতুর হয়ে থাকে। তারা জ্ঞানী ও সচেতন ব্যক্তিদের জ্ঞান ও সচেতনার উপর বিজয়ী হতে পারে।

তারপর হযরত বলেন, মহিলাদের কথা গ্রহণ করা ও সেই অনুযায়ী আমল করা নাজায়েজ নয়। তাদের জায়েজ চাওয়াগুলো সামর্থ অনুযায়ী পূর্ণ করাও জরুরি। সামর্থ অনুযায়ী তাদের আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করাও জরুরি। কারণ, হাদিস শরীফে হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

خَیْرُ کُـمْ خَیْـرُکُـمْ لِاَہْلِی َوأَناَ خَـْیرُکُــْم ِلاَہْلِـیْ

অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সে, যে তার পরিবারের সাথে ভালো আচরণ করে। আমি তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আমার পরিবারে কাছে।

মোটকথা, আল্লাহ তাআলা যদি সামর্থ দিয়ে থাকে, তাহলে তাদের আরাম-আয়েশের দিক বিবেচনা করাও জরুরি। তবে এক্ষেত্রে দেখতে হবে, কাজটি যেনো আল্লাহ তাআলা এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে না যায়। শরীয়তের বিপরিত কোন কাজ না হয়। যদি কাজটি শরীয়তের বিপরিত হয়, তাহলে এক্ষেত্রে স্ত্রীর মনোবাসনা কখনোই পূর্ণ করা যাবে না। আর এইসব ক্ষেত্রেই আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে পরিক্ষা করে থাকেন।

তিনি দেখেন বান্দা স্ত্রীর কথা মতো নাজায়েজ কাজে লিপ্ত হয়ে যায় কী না। যদি স্ত্রীর কথা মতো নাজায়েজ কাজে লিপ্ত হয়ে যায়, তখন বান্দা আল্লাহ তাআলার দেয়া পরিক্ষায় ফেল করে বসে। আর যদি নাজায়েজ কাজ হওয়ার কারণে স্ত্রীর কথা মতো কাজ না করে, আল্লাহ তাআলা ও হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুকুমকে প্রাধান্য দেয়, তখন সে আল্লাহ তাআলার পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমলের তাওফিক দান করুন। আমীন। সূত্র: মাজালিসে সিদ্দীক

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ