সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


শবে বরাত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: শবেবরাত এবং এই রাতে ইবাদত-বন্দেগী করা নির্ভরযোগ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই রাসুল সা. ও সাহাবা-তাবেয়িনের যুগ থেকে অদ্যবধি এ রাতে বিশেষভাবে নফল ইবাদত ধারাবাহিকতার সাথে চলে আসছে।

ইদানিং এক শ্রেণির লোক বাংলায় হাদীস পড়া ছাড়া যাদের কুরআন-হাদিসের আবশ্যিক কোনো জ্ঞান নেই। তারা নিজেদের অতিগবেষণার মাধ্যমে ইসলামের সুপ্রমাণিত বিষয়গুলোকে জনসাধারণের মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

তারা বলছে, শবে বরাতের হাদীসগুলো সহীহ নয়, এ রাতে ইবাদত করা বিদআত, ইত্যাদি। অথচ শবেবরাত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পরও বিদআত বলাটা হাদিস সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। আর জেনে এমনটি বলে থাকলে রাসূল সাঃ এর হাদীস অস্বিকারের মতো মারাত্মক অপরাধে অপরাধী সে ব্যক্তি।
রাসূল সা. এর হাদিসের প্রতি বিদ্বেষী হওয়া ছাড়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এ ফজিলতপূর্ণ রাতকে কেউ অস্বিকার করতে পারে না।

নিম্নে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হল-

ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻃﺎﻟﺐ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ‏( ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻘﻮﻣﻮﺍ ﻟﻴﻠﻬﺎ ﻭﺻﻮﻣﻮﺍ ﻧﻬﺎﺭﻫﺎ . ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻨﺰﻝ ﻓﻴﻬﺎ ﻟﻐﺮﻭﺏ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﺇﻟﻰ ﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ . ﻓﻴﻘﻮﻝ ﺃﻻ ﻣﻦ ﻣﺴﺘﻐﻔﺮ ﻟﻲ ﻓﺄﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﺃﻻ ﻣﻦ ﻣﺴﺘﺮﺯﻕ ﻓﺄﺭﺯﻗﻪ ﺃﻻ ﻣﺒﺘﻠﻰ ﻓﺄﻋﺎﻓﻴﻪ ﺃﻻ ﻛﺬﺍ ﺃﻻ ﻛﺬﺍ ﺣﺘﻰ ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻔﺠﺮ )

হযরত আলী বিন আবু তালীব রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে [শবে বরাত] তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয়ই আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডুবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন-কোন গোনাহগার ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চাও কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত।
[সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৩৮২২]

ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ : ﻗﺎﻟﺖ ﻓﻘﺪﺕ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻓﺨﺮﺟﺖ ﻓﺈﺫﺍ ﻫﻮ ﺑﺎﻟﺒﻘﻴﻊ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﻛﻨﺖ ﺗﺨﺎﻓﻴﻦ ﺃﻥ ﻳﺤﻴﻒ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻚ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ؟ ﻗﻠﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻧﻲ ﻇﻨﻨﺖ ﺃﻧﻚ ﺃﺗﻴﺖ ﺑﻌﺾ ﻧﺴﺎﺀﻙ ﻓﻘﺎﻝ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭ ﺟﻞ ﻳﻨﺰﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻴﻔﻐﺮ ﻷﻛﺜﺮ ﻣﻦ ﻋﺪﺩ ﺷﻌﺮ ﻏﻨﻢ ﻛﻠﺐ

অনুবাদঃ-হযরত আয়শা রাঃ বলেনঃ
-এক রাতে রাসূল সাঃ কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে (মদিনার কবরস্থান) গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন-কি ব্যাপার আয়শা? (তুমি যে তালাশে বের হলে?) তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তার রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? (তোমার পাওনা রাতে অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?)

হযরত আয়শা রা. বললেন- আমার ধারণা হয়েছিল, আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল সাঃ তখন বললেন-যখন শাবান মাসের ১৫ই রাত আসে অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন।
[সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং-৭৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৬০২৮, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদিস নং-১৫০৯]

ﻋﻦ ﻣﻌﺎﺫ ﺑﻦ ﺟﺒﻞ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ‏( ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻟﻰ ﺧﻠﻘﻪ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﺠﻤﻴﻊ ﺧﻠﻘﻪ ﺇﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺃﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ

অনুবাদ-হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-অর্ধ শাবানের রাতে [শবে বরাতে]আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন। এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।
[সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদিস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদিস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস নং-১৩৯০, মুসনাদুশ শামিন, হাদিস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৬২০৪]

বিষয়টি তাদের ঘরানা একেকজন আলেমের বক্তব্য দিয়ে প্রমাণ করছি। গায়রে মুকাল্লিদদের ইমাম শায়েখ আলবানি রহ. তার সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন। “এই হাদিসটি সহিহ” এটি সাহাবাদের এক জামাত বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন সূত্রে, যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। তাদের মাঝে রয়েছেন , মুয়াজ বিন জাবাল রা.
আবু সা’লাবা রা. , আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. আবু মুসা আশয়ারী রা. আবু হুরায়রা রা. , আবু বকর সিদ্দীক রা. ,
আউফ বিন মালিক রা. আয়েশা রা. প্রমুখ সাহাবাগণ।

উপরে বর্ণিত সবক’টি বর্ণনাকারীর হাদিস, তিনি তার কিতাবে আনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ আলোচনার পর শেষে তিনি বলেন-

ﻭ ﺟﻤﻠﺔ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺃﻥ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺑﻤﺠﻤﻮﻉ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻄﺮﻕ ﺻﺤﻴﺢ ﺑﻼ ﺭﻳﺐ ﻭ ﺍﻟﺼﺤﺔ ﺗﺜﺒﺖ ﺑﺄﻗﻞ ﻣﻨﻬﺎ
ﻋﺪﺩﺍ ﻣﺎ ﺩﺍﻣﺖ ﺳﺎﻟﻤﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻀﻌﻒ ﺍﻟﺸﺪﻳﺪ ﻛﻤﺎ ﻫﻮ ﺍﻟﺸﺄﻥ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ

অর্থাৎ সারকথা হলো, এই যে, নিশ্চয় এই হাদিসটি এই সকল সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহীহ, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর সহীহ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়। যতক্ষণ না মারাত্মক কোন দুর্বলতামুক্ত থাকে, যেমন এই হাদিসটি হয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে সহিহ বুঝ এবং আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ