মুযযাম্মিল হক উমায়ের।।
প্রিয় ভাইয়েরা! আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে ঘোষণা করবেন, দুনিয়ায় গান—বাজনা শোনা থেকে বিরত ছিলো এমন লোকেরা কোথায়? এই মিরপুরে যারা গান—বাজনা শোনা থেকে বিরত ছিলো, তাঁরা কোথায়?
তাঁরা বলবেন, হে আল্লাহ! আমরা এখানে উপস্থিত আছি। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘তোমরা চলে আসো। আজ আমি তোমাদেরকে জান্নাতের গান শুনাবো। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরকে গান শুনানোর জন্য জান্নাতের হুরদেরকে আদেশ করবেন। জান্নাতের হুরগণ উত্তম পোশাক আর সাজসজ্জা করে তাঁদেরকে জান্নাতে মজাদার গান শুনাবে।
বাতাস বাদ্যযন্ত্রের কাজ আঞ্জাম দিবে। আর হুরগণ সকলেই মিলে জান্নাতীদেরকে মজাদার গান শুনাবে। গান শুনে জান্নাতীদের মধ্যে এক বিশেষ হালত চলে আসবে। তাঁরা অকপটে গভির মনোযোগের সাথে হুরদের গান শুনতে থাকবে।
তাঁদের কাছে মনে হবে এমন মজাদার গান তাঁরা পৃথিবীতে কখনোই শুনেনি। আর জান্নাতের গানের উপমা পৃথিবীতে না থাকাই স্বাভাবিক। জান্নাতের একটি সংক্ষিপ্ত গানের দৈর্ঘ্য হবে সত্তর হাজার বছরের সমান।
জুনায়েদ জামশেদ সাহেব আমাকে বলেছেন, তাঁরা যে গান করতো সেই গান সাড়ে তিন মিনিটের হতো। আর সবচেয়ে লম্বা গানের পরিমান হতো দশ মিনিট।
আমি বললাম, জান্নাতের সব চেয়ে ছোট গানের দৈর্ঘ্য হবে সত্তর হাজার বছরের সমান। এবং জান্নাতীরা এমনভাবে হেলান দিয়ে হুরদের গান শুনতে থাকবে যে, তাঁরা একটুকুও নাড়াচাড়া করবে না। তাঁদের এই অবস্থা দেখে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, বলো! পৃথিবীতে এমন মজাদার গান কী কখনো শুনেছো? জান্নাতীরা বলবে, হে আল্লাহ! না। আমরা এমন মজাদার গান কখনো শুনিনি।
তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আচ্ছা! তাহলে এর চেয়ে আরো মজাদার কিছু শুনাবো? না তোমরা এই তবলার গানই শুনবে? তোমাদের ইচ্ছা। জান্নাতিরা বলবে, সেটি কী? আল্লাহ তায়ালা বলবেন, সেটি এখনি তোমাদেরকে শুনাবো।
তখন আল্লাহ তায়ালা হজরত দাউদ আলাইহিস সালামকে বলবেন, আপনি আসুন। মিম্বরে বসুন। আমার যেসব বান্দারা দুনিয়ায় হারাম গান—বাজনা শোনা থেকে নিজেদের কানকে হেফাজত করেছিলো— আজ আমি তাঁদেরকে সেই কোরবানীর উত্তম বিনিময় দান করবো।
আল্লাহ তায়ালা হজরত দাউদ আলাইহিস সালামকে অত্যন্ত সুমধুর কন্ঠ দান করেছিলেন। তিনি যখন জাবুর কিতাব পাঠ করতেন, তখন জঙ্গলের প্রাণীরা দৌঁড়ে এসে যেতো। পাহাড়ে খাবারে নিমগ্ন এমন সিংহও চুপ করে জবুর পাঠ শুনতো।
আর মানুষরা তো শুনে বেহুশই হয়ে যেতো। সেখানের সাজসজ্জাও হবে জান্নাতের। বাদ্যযন্ত্রও হবে জান্নাতের। আর সুর হবে হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের। হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের সুর শুনে জান্নাতেরও এক বিশেষ অবস্থা সৃষ্টি হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, বলো! তোমাদের কেমন লাগতেছে?
তাঁরা বলবে, আয় আল্লাহ! অনেক ভালো লাগতেছে। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, এর চেয়েও ভালো কিছু তোমাদেরকে শুনাবো কী?
তাঁরা বলবে, সেটি কী?
আল্লাহ তায়ালা বলবেন, সেটি এখনি তোমাদেরকে শুনাবো। তখন তিনি হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সামনে আসার জন্য আদেশ করবেন।
হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের আওয়াজ শুনে তো মানুষরা নিজেদেরকেই ভুলে যাবে। তাঁরা কোথায় বসে আসে সেটিই বুঝতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, বলো! তোমাদের কেমন লাগতেছে? তাঁরা বলবে, সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতেছে এবং মজাদার।
আবার আল্লাহ তায়ালা বলবেন, বলো! এর চেয়ে আরো বেশি মজাদার কিছু তোমাদেরকে শুনাবো কী?
তাঁরা বলবে, আয় আল্লাহ! এর চেয়েও আরো মজাদার কিছু আছে নাকি?
আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হ্যাঁ। এর চেয়েও মজাদার আছে। তাঁরা বলবে, আয় আল্লাহ! সেটি কী?
আল্লাহ তায়ালা বলবেন, সেটি এখনি তোমাদেরকে শুনাবো। আর সেটি হলো, তোমাদের রব নিজেই তোমাদেরকে শুনাবেন। তারপর জান্নাতের ফিরিস্তা রিদওয়ানকে পর্দা সরিয়ে দেওয়ার আদেশ করবেন।
যে চোখগুলি হারাম বস্তু দেখা থেকে বিরত থাকতো। যে কানগুলি হারাম কিছু শোনা থেকে বিরত থাকতো। আজ আমি নিজে তাঁদেরকে গান শুনাবো।
সূত্র: হজরত মাওলানা তারিক জামিল সাহেবের বয়ানে অনুবাদ
-এটি