সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ইসলামের দরদী একজন মালি হজরত উমর ফারুক রা.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুযযাম্মিল হক উমায়ের

এক মজলিসে আল্লামা থানবী রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা উপস্থিত লোকদেরকে বুঝানোর উদ্দেশ্যে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন। প্রশ্নটি হলো, আমাদের ইসলাম প্রয়োজন, নাকি ইসলামের আমাদের প্রয়োজন?

উক্ত প্রশ্নে উত্তরে আল্লামা থানবী রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেন, ‘সত্য ও বাস্তব কথা হলো, যদি সাত জমিনের বাদশাগণও ইসলাম গ্রহণ করে ফেলে, এতে ইসলামের কোন গৌরবের কোন কিছু নেই। বরং এতে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের জন্য গর্ব করার পাথেয় আছে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরকে ইসলাম গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। আর যদি কেউ ইসলাম গ্রহণ না করে, এতেও ইসলামের কোন ক্ষতি নেই।

যেমন জাবালা বিন আয়াহাম গাস্সানীর ঘটনা। সে হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর খেলাফত আমলে ইসলাম গ্রহণ করেছিলো। তার কাছে আরাম—আয়েশের সামান এতো বেশি পরিমানে ছিলো, যে সামান বাদশা হিরাক্ল এর কাছেও ছিলো না। সে একবার তওয়াফ করতেছিলো। পরনে লুঙ্গির আঁচল মাটিতে হেঁচড়ে চলছিলো। তার লুঙ্গির আঁচল একজন গরিব মানুষের পায়ের নীচে পড়ে যায়। এতেকরে টান লেগে তার লুঙ্গি খুলে যায়। সে গরিব বেচারার উপর রেগে যায়। রাগের আধীক্যতায় সে গরিব বেচারাকে চড় মেরে বসে। অথচ এক্ষেত্রে গরিব বেচারার কোন দোষ ছিলো না। গরিব বেচারা এই বিষয়ে হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর আদালতে মামলা দায়ের করে।

হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু গরিব বেচারাকে তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করার রায় প্রদান করেন। রায় শুনে সে হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কাছে এক দিনের সময় চায়। এক দিনের সময় নিয়ে রাতের বেলায় মুরতাদ হয়ে সে দূরে কোথাও চলে যায়। এই ঘটনাতে তার মুরতাদ হয়ে যাওয়ার কারণে হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর মোটেও আফসোস আসেনি। কারণ, তিনি হকের উপর ছিলেন। এবং সঠিক রায় প্রদান করেছিলেন।

কিন্তু দীর্ঘ সময় যাওয়ার পর সে হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর রায় না গ্রহণ করে মুরতাদ হয়ে যাওয়ার কারণে আফসোস প্রকাশ করে বলতো, আহ! যদি আমি হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর রায় মেনে নিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করার সুযোগ করে দিতাম, তাহলে আমার জন্য কতোইনা ভালো হতো!

ইসলামী এক বার্তা বাহককে এই বলেও সে প্রস্তাব করেছিলো যে, আমি শর্ত সাপেক্ষে আবার ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। যদি হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেই শর্তগুলি মেনে নেন, তাহলে আমি ইসলাম গ্রহণ করবো। সে ওই বার্তা বাহকের কাছে দুটি শর্ত দিয়েছিলো।

১. হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর পরে আমাকে খেলাফতের দায়িত্ব প্রদান করে যেতে হবে।
২. তাঁর মেয়েকে আমার সাথে বিবাহ দিতে হবে।

তার শর্ত শুনে ওই বার্তা বাহক বললো, খেলাফত দেওয়ার ব্যাপারে তো আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাকে ওয়াদা দিতে পারি। আশা করি তিনি আমার ওয়াদা ফেলে দিবেন না। তিনি তোমাকে খেলাফতের দায়িত্ব প্রদান করবেন। তবে তাঁর মেয়েকে তোমার সাথে বিবাহ দেওয়ার বিষয়ে আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাকে ওয়াদা দিতে পারি না। তবে তোমার এই বার্তাটি আমি তাঁর কাছে পৌঁছে দিবো। এই বলে তিনি সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে যান।

এই ঘটনা যখন হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর জানতে পারেন, তখন তিনি ওই বার্তা বাহককে বললেন, তুমি কেনো আমার মেয়ের বিয়ের ব্যাপারেও তাকে ওয়াদা দিয়ে তাকে ইসলাম গ্রহণের সুযোগ করে দাওনি? তার ইসলাম গ্রহণের বিনিময়ে আমি আমার সাধ্যের ভিতর যা করতে হতো, সবকিছুই করতাম। যাতে সেও ইসলামের ছায়াতলে এসে যেতে পারে।

হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর পক্ষ থেকে তার ইসলাম গ্রহণের বিনিময়ে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার আশ্বাস পেয়ে তার কাছে লোক পাঠানো হলো, তখন আর সে এই জগতের বাসিন্দা ছিলো না।
সে পরকালের বাসিন্দা হয়ে যায়।
ওই লোক যখন জাবালা বিন আয়হামের বসবাসের এলাকায় পৌঁছেন, তখন তার জানাযা লোকেরা বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলো।

তার ভাগ্যে ইসলাম গ্রহণ ছিলো না, তাই সে পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করতে পারেনি। কিন্তু দেখার ও ভাবার বিষয় হলো, কারণ ছাড়া মুরতাদ হওয়ার কারণে হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মোটেও আফসোস করেননি। কিন্তু যখন সে শর্তের সাথে ইসলাম গ্রহণ করতে চাইলো, শর্তগুলিও জটিল হওয়া সত্ত্বেও হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলামের জন্য সেসব শর্তকে কোরবানী দিয়ে তাকে ইসলামের দিকে নিয়ে আসতে চেষ্টার কোন কমতি করেননি। এমনকি নিজের মেয়ের বিয়ের ওয়াদা দিয়ে কেনো তাকে ইসলাম গ্রহন না করানোর কারণে ওই লোকের কাজের উপর নিজের আফসোস আর অনুতাপ প্রকাশ করেছেন।

সাহাবাগণের গুণাবলী এমনি ছিলো। তাঁরা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। কোরবান ছিলেন। পবিত্র কুরআনুল কারীমে তাঁদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে ইরশাদ হয়েছে, وَالَّذِيْنَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَي الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ তাঁর সাথীগণ কাফেরদের উপর কঠোর ছিলেন এবং তাঁরা নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল ছিলেন। সুরা আল—ফাতহ: আয়াত—২৯

সূত্র: মালফুজাতে হাকিমুল উম্মাত: খ.3, পৃ.23

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ