মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী।।
দুনিয়ায় যুগে যুগে যেসব মহামারির আবির্ভাব হয়েছিল এবং বর্তমানে হচ্ছে- সবগুলোর জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী- পরিবেশ দূষণ। আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা করলে সবকিছু বিনা উৎস ও বিনা কারণে করতে পারেন।
আল্লাহতায়ালা কিন্তু তা করেন না। আল্লাহতায়ালা কিছু করার জন্য কিংবা ঘটানোর জন্য কিছু নিয়ম ও উৎস নির্ধারণ করেছেন, সেই নিয়ম ও উৎসের মাধ্যমে সবকিছু করেন এবং ঘটান। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালার নিয়মের মধ্যে কোনো পরিবর্তন পাবে না।’
হ্যাঁ, উৎস ও নিয়মবহির্ভূতভাবেও কিছু কিছু ঘটনা ঘটিয়ে দেখান তার কুদরত প্রকাশের জন্য। যা আমাদের জন্য ব্যতিক্রমী। আল্লাহতায়ালার জন্য তার কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। প্রকৃতিতে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটে না। প্রতিটি ঘটনা বা উপাদান অন্য ঘটনা বা উপাদান দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত। কাজেই প্রকৃতির সঙ্গে মানুষ যে ঘটনা ঘটাচ্ছে বা প্রকৃতির ওপর মানুষ যে হস্তক্ষেপ করছে তার কারণেই পরিবেশ নষ্ট ও অপরিচ্ছন্ন হচ্ছে।
পরিবেশ নষ্ট ও অপরিচ্ছন্ন হওয়ার কারণে একেকটি দুর্যোগ পৃথিবীতে দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে যে করোনা ও তার নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন, ডেল্টার ইত্যাদির প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে- তাও মনুষ্য সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের ফল। সেজন্য রাসুলে পাক (সা.) যেমন অন্তর ও শরীরের পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। তেসনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা নিজে পরিচ্ছন্ন ও পরিচ্ছন্নতাকে পছন্দ করেন।’
উল্লেখ্য, পরিছন্নতা ও পবিত্রতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পবিত্রতা হলো- অন্তরকে গোনাহ থেকে মুক্ত রাখা, শরীরকে নাপাক থেকে মুক্ত রাখা।
পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি আরও ব্যাপক, যার কারণে একজন ব্যক্তি তার শরীরকে নাপাক থেকে মুক্ত রাখলেও ঘরের আঙ্গিনায় আবর্জনা থাকলে, বা তার বাথরুম অপরিচ্ছন্ন হলে লোকটিকে পবিত্র বলা হলে ও সবাই লোকটিকে অপরিচ্ছন্ন বলবে। সেজন্য রাসুলে পাক (সা.) পবিত্রতা অর্জনের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে পরিচ্ছন্নতার নির্দেশ দিয়ে বলেন, আল্লাহতায়ালা পবিত্র, পবিত্রতাকে ভালোবাসেন।
আল্লাহতায়ালা পরিচ্ছন্ন, পরিচ্ছন্নতাকে ভালোবাসেন। আল্লাহতায়ালা শালীন, শালীনতাকে ভালোবাসেন। আল্লাহতায়ালা দানশীল, দানশীলতাকে পছন্দ করেন। তোমরা তোমাদের আঙিনা ও মাঠকে পরিচ্ছন্ন রাখো। ইহুদিদের মত ভিটার মধ্যে ময়লা-আবর্জনা স্তুপ করে রেখো না।
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম নিজেকে এবং চতুর্দিকের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা অপরিচ্ছন্নতা পরিবেশকে দূষিত করে। আর দূষিত পরিবেশ সুস্থতার জন্য হুমকি।
অন্যদিকে বর্তমানে বিভিন্নভাবে পরিবেশকে দূষিত ও অপরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে, যা গোনাহ বা অন্যকোনো রকমের অপরাধ বলে মনে করা হচ্ছে না।
যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা, পলিথিনের অপব্যবহার গাছপালা কাটা, বনভূমি উজাড়, পাহাড় ধ্বংস, খাল দখল, নদী ভরাট, অবৈজ্ঞানিকভাব পানির সঙ্গে জৈব, অজৈব, রাসায়নিক, তেজষ্ক্রিয় পদার্থ মেশানো পরিবেশকে অপরিচ্ছন্ন করে ও দূষিত করে। দূষিত পরিবেশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ জীবাণুর বিস্তারের জন্য দায়ী। ব্যক্তিগত ও পরিবেশগত পরিছন্নতা অর্জনের মধ্যেমেই দূষিত পরিবেশ দ্বারা সৃষ্ট রোগ জীবাণুর আক্রমণ থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রক্ষা পাওয়া যাবে।