মুফতি আল আমিন রাহমানী
সুষ্ঠু চলন-ক্ষমতা মহামহিম আল্লাহর অপার নিয়ামত। জীবন-বাস্তবতার তাগিদে মানুষকে হাঁটাচলা করতে হয়। যেতে হয় স্থান থেকে স্থানে।
ইসলাম যেহেতু একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, তাই মানব জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে ছড়িয়ে আছে ইসলাম, ইসলামের সোনালী শিক্ষা। পথচলার ক্ষেত্রেও রয়েছে ইসলামের অনুপম শিক্ষা ও নির্দেশনা।
১. পথের ডানে চলা। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বক্ষেত্রে ডানদিককে প্রাধান্য দিতেন। তাই যে কোনো ভালো কাজ ডানদিক থেকে করা সুন্নত।
আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুতা পরিধান, কেশ বিন্যাস ও পবিত্রতা অর্জন করাসহ সর্বক্ষেত্রে ডানদিককে পছন্দ করতেন। (বুখারী: ১৬৮, মুসলিম : ২৬৮)
২. দৃষ্টি অবনত রাখা। পথ চলায় দৃষ্টি অবনত রাখা ইসলামের শিক্ষা। কেননা চলা-ফেরার ক্ষেত্রে এদিক-সেদিক তাকালে অপাত্রে চোখ পড়ার আশঙ্কা থাকে।
পথে চলতে এদিক সেদিক তাকানো সামাজিক বিচারেও ভদ্রতা পরিপন্থি। তাই মহান আল্লাহ আল কোরআনে ঘোষণা করেছেন (হে নবি!) আপনি মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেনো তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। নিষ্কলুশ থাকতে এটা তাদের অতি সহায়ক হবে। (সুরা নুর: ৩০)
পরবর্তী আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন (হে নবি!) আপনি মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেনো তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। (সুরা নুর: ৩১)
৩. বিনয়ের সাথে চলা। পথচলার ক্ষেত্রে নিজেকে মহান আল্লাহর একজন নগন্য বান্দা মনে করে বিনয়ের সাথে জমিনে পা ফেলতে হবে। দাম্ভিকদের ন্যায় দম্ভভরে পা ফেললে মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। মহান আল্লাহ আল কোরআনে ঘোষণা করেছেনÑ তুমি ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে চলো না, নিশ্চয়ই তুমি (দম্ভভরা পদাঘাতে) জমিনকে বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং পারবে না উচ্চতায় পাহাড়সম হতে। (সুরা বনি ইসরাইল: ৩৭)
অন্য আয়াতে বলেছেন তুমি ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে চলো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা লোকমান: ১৮)
৪. মধ্যম গতিতে পথচলা। ইসলাম আমাদের হাঁটাচলার ক্ষেত্রে পরিশীল ও মার্জিত হওয়ার শিক্ষা দেয়। মহান আল্লাহ আল কোরআনে বলেন, তুমি চলার ক্ষেত্রে পরিশীল হয়ে চলো। (সুরা লুকমান: ১৯)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীর শাস্ত্রের সর্বজনবরিত ইমাম আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেনÑ অর্থাৎ, মধ্যম গতিতে পথ চলো, অতি ধীরেও না, অতি দ্রæতও না। (তাফসীর ইবনে কাসীর: ৩০৩/৬)
৫. পথচারীদের সালাম দেওয়া। সালাম ইসলামের অনুপম অভিবাদন। মুসলমানদের পরস্পরে দেখা-সাক্ষাতে সালাম বিনিময় করা ইসলামের কালোত্তীর্ণ আদর্শ।
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন আমলটি অধিক উত্তম? তিনি উত্তর করলেন, (অনাহারীকে) আহার করানো এবং পরিচিত ও অপরিচিতদের সালাম দেওয়া। (বুখারি: ১২)
৬. পথ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরানো। আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঈমানের সত্তরোত্তর শাখা রয়েছে। সর্বোত্তমটি হলো, লা ইলাহা ইল্লাহ বলা আর সর্বনিম্নটি হলো, পথ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া। (মুসলিম: ৫৮)
অন্য হাদিসে রয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোও একটি সাদকাহ। (বুখারি: ১৩৩/৩)
আলি রা. বলেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পথ চলতেন, সামনের দিকে এমনভাবে ঝুঁকে হাঁটতেন, মনে হতো তিনি যেনো কোনো উঁচু স্থান হতে নিচে অবতরণ করছেন। (শামায়েলে তিরমিযি: ৯৫, মুসনাদে আহমাদ: ৭৪৬)
একজন মুমিন হিসেবে জীবনের পরতে পরতে ইসলামের সুমহান আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটানো আমাদের কর্তব্য। তাই চলনে-বলনে সর্বক্ষেত্রে নবিজী সা. এর প্রদর্শিত পথের অনুসরণ করতে হবে। জীবনকে রাঙাতে হবে সুন্নাহর বর্ণিল রঙে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
শিক্ষক: কাজিপুর আল জামিয়াতুল মাদানিয়া মাদরাসা, সিরাজগঞ্জ।
-এটি