মুযযাম্মিল হক উমায়ের।।
প্রিয় ভাইয়েরা! মুসায়লামাতুল কাজ্জাব মিথ্যা নবি দাবিকারী হজরত হাবিব বিন যায়েদ রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। যখন মুসায়লামার কাছে তাঁকে পেশ করা হলো, তখন মুসায়লা তাঁকে বললো, যদি তুমি আমাকে নবি হিসাবে মেনে নাও, তাহলে তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
অন্যথায় তোমাকে টুকরো টুকরো করে কেটে বটি বটি করে মেরে ফেলা হবে। এই প্রস্তাবের উত্তরে হজরত হাবিব বিন যায়েদ রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ‘আমি তোমাকে কখনোই নবি হিসাবে মেনে নিবো না এবং তুমি নবি এই কথাও মুখে উচ্চারণ করবো না। তুমি আমাকে যা করার তা করতে পারো। এতে আমার কোন পরওয়া নেই’।
মুসায়লামা এই কথা শোনার পর, তাঁর এক হাত কেটে দেয়। তারপর সে আবার একই প্রস্তাব দেয়। তিনিও একই উত্তর দেন। মুসায়লামা তখন তাঁর দ্বিতীয় হাতও কেটে দেয়।
মুসায়লামা আবার একই প্রস্তাব দেয়। তিনিও একই উত্তর দেন। মুসায়লামা তখন তাঁর এক পা কেটে দেয়।
মুসায়লামা আবার তাঁকে একই প্রস্তাব দেয়। তিনিও একই উত্তর দেন, যে আমি তোমাকে নবি হিসাবে মেনে নিবো না এবং মুখেও এই কথা উচ্চারণ করবো না। তখন মুসয়ালামা তাঁর দ্বিতীয় পা কেটে দেয়।
মুসায়লামা আবার তাঁকে একই প্রস্তাব দেয়। তিনিও একই উত্তর দেন, যে আমি তোমাকে নবি হিসাবে মেনে নিবো না এবং মুখেও এই কথা উচ্চারণ করবো না। তখন মুসয়ালামা তাঁর দুই বাজুকে কেটে দেয়।
মুসায়লামা আবার তাঁকে একই প্রস্তাব দেয়। তিনিও একই উত্তর দেন, যে আমি তোমাকে নবি হিসাবে মেনে নিবো না এবং মুখেও এই কথা উচ্চারণ করবো না। তখন মুসয়ালামা তাঁর উভয় রানকে কটে দেয়।
প্রিয় ভাইয়েরা! মুসায়লামা এইভাবে একের পর এক তাঁর শরীরে অঙ্গগুলিকে কেটে বটি বটি করে ফেলে তবুও তাঁর মুখ থেকে একট বারের জন্যও এই কথা উচ্চারিত হয়নি যে, মুসায়লামা আল্লাহ তায়ালার নবি। এটি ছিলো এশক। এমন এশক যারা নিজেদের ভিতর ধারন করেন, তাঁরাই ছিলেন প্রকৃত আশেকে রাসূল।
প্রিয় ভাইয়েরা! তাঁর মায়ের ধৈর্য ও সহনশীলতার কথাও শুনুন। যখন তাঁর শাহাদতের সংবাদ তাঁর মা উম্মে উমারা রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার কাছে পৌঁছলো।
তখন তিনি বললেন, ‘আমার ছেলেকে ইসলামের জন্য নিজেকে এমনভাবে কোরবানী করবে— এই দিনটি দেখার জন্যই তাঁকে দুধ পান করিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহি তায়ালা। আমার ছেলে আমার দুধের মূল্যায়ন পরিপূর্ণভাবে দিতে পেরেছে’।
প্রিয় ভাইয়েরা! আসুন! আমরা হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ওয়াদাবদ্ধ হই। তাঁর প্রতিটি সুন্নত পালন করার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করি।
আমাদের প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি সুন্নত সাত আসমান ও সাত জমিনের চেয়েও বেশি মূল্যবান। যিনি আমাদের জন্য সবকিছু উজাড় করে গেছেন। সবকিছু কোরবানী করে গেছেন। তাঁর সাথে সোয়া লাখ সাহাবা নিজেদের সবকিছু কোরবানী করে গেছেন।
তাঁদের সেসব কোরবানী বিনিময়ে কী আমরা আমাদের জীবনে তাঁদের জীবন আদর্শ ধারন করে চলতে পারি না? এটি কেমন অমানবিক কাজ? কতো বড় জুলুমের কাজ?
আমাদের উচিত তাঁদের সেসব কোরবানীর বিনিময়ে অন্তত আমরা আমাদের জীবন—যাপনে তাঁদের জীবন আদর্শকে বুকে ধারন করে পথ চলা।
সূত্র: মাওলানা তারিক জামিল সাহেবের বয়ানের অনুবাদ
-এটি