শেখ খালিদ সাইফুল্লাহ: সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের,যিনি তার স্বীয় বান্দাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে বছরে এমন কিছু মাস বা দিন দিয়েছেন যাতে মুমিনগণের জন্য রয়েছে অধিক পুণ্যার্জনের সু্যোগ। এতে নেক আমলের দ্বারা মুসলমানরা তার রবের আরো নৈকট্যতা লাভের সুযোগ পায়। জীবনকে করে তুলে কল্যাণময়। শা'বান হচ্ছে আল্লাহর প্রদত্ত সুবর্ণ সুযোগের অনুরূপ একটি।যা আপন মহিমায় সুশোভিত।
আরবী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চন্দ্র মাসের ৮ম মাস হলো শা’বান। শা’বান আরবি শব্দ, এর অর্থ বিস্তৃত, চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়া। এ মাসে আল্লাহ তা’য়ালা পৃথিবীবাসীর উপর তাঁর রহমতের বারিধারা বর্ষণ করেন। ইবাদতের ক্ষেত্রে এ বিস্তৃত রহমত মুমিনদের কে এমন এক নব চেতনায় উজ্জীবিত করে, যা রমযান মাস ব্যাপী কার্যকর থাকে।
নবিজী সা. এ মাসে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি আমল করতেন এবং বলতেন- اللهم بارك لنا في رجب و شعبان و بلغنا رمضان!
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শা'বানা,ওয়া বাল্লিগনা রমাযান’।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ, রজব মাস ও শা'বান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমযান মাস আমাদের নসিব করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ প্রথম খণ্ড: ২৫৯, বায়হাকি, শুআবুল ইমান,৩: ৩৭৫)।
রাসূল (সা.) রজব এবং শা'বান মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত নফল রোজা রাখার মাধ্যমে রমযানের নানাবিধ প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন।
হজরত উসামা বিন যায়দ (রা.) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনাকে শা'বান মাসে যে পরিমাণ রোজা পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা দেখি না ;এর কারণ কী? উত্তরে বলেন: রজব এবং রমযানের মধ্যবর্তী এ মাসটি সম্পর্কে মানুষ উদাসীন থাকে । অথচ এ মাস এত গুরুত্বপূর্ণ যে , এ মাসে আল্লাহ তায়ালার কাছে মানুষের আমলগুলো উপস্থাপন করা হয়। আমি চাই রোজা অবস্থায় আমার আমলগুলো উপস্থাপন করা হোক । (মুসনাদ আহমাদ ৫ম খণ্ড)
হযরত উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে শা'বান ও রমযান মাস ছাড়া অন্য কোনো দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৩৬)
তদ্রুপ, সাহাবারাও উক্ত মাসের গুরুত্ব অনুধাবন করে অধিক পরিমাণে নেক আমল করতেন। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় সাহাবীরা শা'বান মাসের চাঁদ দেখে পবিত্র কুরআনুল কারিম বেশি বেশি তেলাওয়াত করতেন।সম্পদে যাকাতের মাল আলাদা করে ফেলতেন। যাতে গরিব ও মিসকিনরা উপকৃত হতে পারে। ব্যবসায়ীরা এ মাসে তাদের ঋণ পরিশোধ করে ফেলতেন। অধিকার প্রাপ্যদের তাদের প্রাপ্য আদায় করে দিতেন।
যে মাসকে স্বয়ং নবী করীম সা. সম্মান প্রদান করেছেন,এর শান মান বর্ণনা করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামও যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্ব সহকারে পালন করেছেন। সে মাসকে আমাদের কিভাবে অতিবাহিত করা উচিৎ! সে মাসে আমল কতটুকু হওয়া উচিৎ ! ভেবে দেখেছেন কি?
এছাড়া,যে কোনো কাজ শুরু করার আগে তার অনুশীলন করা চাই এতে পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে একজন ভালো প্রতিযোগী হওয়া যায়। তাই, কাজে নিয়োজিত থেকে অথবা প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে প্রেক্টিস বা অনুশীলনের নামে অযথা সময় নষ্ট করা,প্রকৃত কাজি বা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
সুতরাং পূর্বপ্রস্তুতি বা অনুশীলন কার্য সম্পাদনের পূর্বে হওয়া বাঞ্ছনীয়। যেহেতু মুসলমানদের জন্য রমযান হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। আগে থেকে এ মাসের প্রস্তুতি না নেয়া হলে রমযানে প্রস্তুত হতে হতে অনেক সময় কেটে যাবে, ফলে উদ্দেশ্য ব্যহত হবে।
তাই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে শাবান মাসে ঐ আমলগুলোর অনুশীলন করতে হবে যা রমযান মাসে করতে হয়। যেমন কোরআন তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদের নামাজে গুরুত্ব দেয়া, মন্দ চর্চা ও পরনিন্দা পরিহার করা, দান-সদকা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।
এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত হচ্ছে শবে বরাত। এ রাতের ফযিলত ও আমল বিভিন্ন সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই শবে বরাতে আমলের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া এবং তার যথার্থ কদর্য করা উম্মতে মুহাম্মদীর আদর্শিক বৈশিষ্ট্য।মহিমান্বিত শবে বরাতকে অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলি সঠিকভাবে বুঝার এবং সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন।সাথে সাথে আমাদের উপর তাঁর রহমতের দৃষ্টি অবিরাম নিবন্ধ রাখুন;আমিন।
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, ঢাকাদক্ষিণ দারুল উলুম হুসাইনিয়া মাদ্রাসা, সিলেট।
-কেএল