মুযযাম্মিল হক উমায়ের।। হজরত উমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘একবার হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তাঁর নিয়মিত আসার নির্ধারিত সময় ছাড়া অসময়ে আমার কাছে চলে আসেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলেন, হে জিবরাঈল! আমি তোমাকে বিবর্ণ দেখতেছি এর কারণ কী?
হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, হে মুহাম্মাদ! (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমি আপনার কাছে আসিনি, যতোক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা আগুনকে প্রজ্জ্বলন করার আদেশ না করেছেন।
তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে জিবরাঈল! যেহেতু তুমি আমাকে আগুনের ভীতি প্রদর্শন করতেছো, সুতরায়ং তাহলে তুমি আমার কাছে জাহান্নামের পরিচয় বর্ণনা করো’।
উত্তরে হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামকে প্রজ্জ্বলন করার আদেশ করেছেন। তখন জাহান্নামে আগুন জ¦ালানো হলো। উক্ত আগুনকে এক হাজার বছর প্রজ্জ্বলন করার পর, এটি লাল বর্ণ ধারন করেছে। তার আবার আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামকে প্রজ্জ্বলন করার আদেশ করেছেন। তখন জাহান্নামে আগুন জ¦ালানো হলো। উক্ত আগুনকে পূণরায় এক হাজার বছর প্রজ্জ্বলন করার পর, এটি সাদা বর্ণ ধারন করেছে।
তারপর আবার আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামকে প্রজ্জ্বলন করার আদেশ করেছেন। তখন জাহান্নামে আগুন জ¦ালানো হলো। উক্ত আগুনকে আবার এক হাজার বছর প্রজ্জ্বলন করার পর, এটি কালো বর্ণ ধারন করেছে। সুতরাং বর্তমানে জাহান্নামের আগুন কালো অন্ধকার বর্ণ ধারনকৃত অবস্থায় রয়েছে। উক্ত আগুনের ফুলকিগুলি আলো দেয় না। তার শিষ নিভে না।
তারপর হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বলেন, ওই সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য নবি করে পাঠিয়েছেন। যদি সুঁই এর ছিদ্র পরিমান জাহান্নামকে দুনিয়াবাসীর দিকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, তাহলে জাহান্নামের গরমের তীব্রতায় পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী মারা যাবে।
ওই সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য নবি করে পাঠিয়েছেন। যদি জাহান্নামবাসীর একটি কাপড় আসমান—জমিনের মধ্যখানে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেটির গরমের তীব্রতায় পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী মারা যাবে।
ওই সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য নবি করে পাঠিয়েছেন। যদি জাহান্নামের রক্ষীদের একজন দুনিয়াবাসীর দিকে উঁকি দেয়, আর দুনিয়াবাসী তার দিকে তাকায়, তাহলে তার চেহারা ও শরীরের ভয়ংকর বিকৃতি রুপ ও দুর্গন্ধে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী মারা যাবে।
ওই সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য নবি করে পাঠিয়েছেন। যদি জাহান্নামের শিকলের কোন একটি আংটা বা বৃত্ত যার বর্ণনা আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে করেছেন, এমন একটি আংটাকে যদি দুনিয়ার পাহাড়ের উপর রাখা হয়, তাহলে পাহাড় সেটির গরমের তীব্রতার কারণে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। এমনকি উক্ত পাহাড় সর্বশেষ জমিনে গিয়ে পৌঁছার আগ পর্যন্ত কোন কিছু উক্ত পাহাড়ের উপর স্থীর থাকতে পারবে না।
হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামের জাহান্নামের উক্ত বর্ণনা শুনে হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমার জন্য যতেষ্ট হয়েছে হে জিবরাঈল! আমার অন্তরকে বিদীর্ণ করে দিয়েন না, তাহলে আমি মারা যাবো’।
বর্ণনাকারী বলেন, তারপর হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামের দিকে তাকান। দেখেন, হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম কান্না করতেছেন। তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে জিবরাঈল! তুমি তো আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী একজন সম্মানিত ফিরিস্তা। তুমি কেনো কান্না করতেছো?
উত্তরে হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বলেন, আমি কেনো কান্না করবো না? আমারই তো কান্না করা উচিত। কারণ, আমার তো জানা নেই, হতেও তো পারে বর্তমানে আল্লাহ তায়ালার নিকটে আমার যে অবস্থান রয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে আল্লাহ তায়ালার ইলমে আমার অবস্থা ভিন্নও তো থাকতে পারে। আমার তো এটিও জানা নেই যে, ইবলিস যে বিপদে পড়েছিলো, আমিও সেই বিপদে পড়ে যেতে পারি।
অথচ, সেও তো ফিরিস্তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। আমার তো এই বিষয়েও জানা নেই যে, হারুত—মারুত যে বিপদে পড়েছিলো, আমিও সেই বিপদে পড়ে যেতে পারি।
বর্ণনাকারী বলেন, তারপর উভয়ে কান্না শুরু করে দেন। উভয়ের কান্না চলার সময় উভয়কে অদৃশ্য থেকে ডাক আসলো, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হে জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আপনাদের দুই জনকে তাঁর অবাধ্য হওয়া থেকে নিরাপদ করে দিয়েছেন।
বর্ণনাকারী বলেন, তারপর হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম চলে যান। এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখান থেকে ওঠে আনসারদে একটি মজলিসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
তারা সেখানে গল্প—গুজব করে হাসাহাসি করতেছিলেন। তিনি তাদের হাসাহাসি দেখে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা হাসাহাসি করতেছো? অথচ, জাহান্নাম তোমাদের সামনে রয়েছে।
আমি যা জানি যদি তোমরা তা জানতে, তাহলে হাসতে কম, কান্না করতে বেশি। এবং খাবার ও পানীয়র স্বাদ আস্বাদান করা থেকে বিরত থাকতে। আর ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে এসে আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করতে’।
বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা উক্ত কথা শুনে কান্না শুরু করে দেয়। তাঁরা কান্নাই করতেছিলো, ইতোমধ্যে অদৃশ্য থেকে আওয়াজ আসলো, হে মুহাম্মাদ! (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সুসংবাদকারী এবং সহজবার্তা বাহক হিসাবে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং আপনি আমার বান্দাদেরকে হতাশ কেনো করেছেন?
অতপর হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে অদৃশ্য আওয়াজের সুসংবাদ প্রদান করেন। তখন তাঁরা কান্না বন্ধ করে শান্ত হয়ে যান। সূত্র: সিফাতুন নার লি ইবনি আবিদ দুনিয়া
-এটি