হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ রিদওয়ান একের পর এক বিপদ-মসিবত দ্বারা আমরা পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছি। চারদিকে সব মানুষ হতাশা ও পেরেশানিতে নিমজ্জিত, সবার মনে প্রশ্ন?
কবে এই বিপদ-মসিবত থেকে আমরা মুক্তি পাবো? আমরা যারা মুমিন মুসলমান, আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ তায়ালার একান্ত রহমত ও দয়া ছাড়া মুক্তির কোনো উপায় নেই। তাই আমরা জানতে চাই কোন আমল করলে আল্লাহর রহমত পাওয়া যাবে।
‘আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয় তখন তারা বলে নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। তারা সেসব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত, (সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৭)।
উল্লিখিত প্রথম আয়াতটিতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিভিন্ন রকমের বিপদ ও সঙ্কট দিয়ে পরীক্ষা করবেন বলেছেন এবং এই বিপদের সময় যারা ধৈর্য ধারণ করবে তাদের তিনি সুসংবাদ দান করেছেন। তাহলে বোঝা গেল এই মহা সঙ্কটে আমাদের প্রথম উপায় : সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করা।
সবর বা ধৈর্যের তাৎপর্য : সবর শব্দের অর্থ হচ্ছে সংযম অবলম্বন ও নফসের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করা। কুরআন ও হাদিসের পরিভাষায় সবরের তিনটি শাখা রয়েছে। ১. নফসকে হারাম ও নাজায়েজ বিষয়াদি থেকে বিরত রাখা। ২. নফসকে ইবাদত ও আনুগত্যে বাধ্য করা ৩. যেকোনো বিপদ ও সঙ্কটে ধৈর্য ধারণ করা। অর্থাৎ যেসব বিপদ-আপদ এসে উপস্থিত হয় সেগুলোকে আল্লাহর বিধান বলে মেনে নেয়া এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর তরফ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির আশা রাখা।
দ্বিতীয় করণীয় : ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (অর্থ- নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো) এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করা।
সাধারণত আমরা এই দোয়াটি যখন কোনো মৃত্যু সংবাদ শুনি তখন পড়ি, কিন্তু আসলে এই দোয়াটি যেকোনো দুঃসংবাদে বিপদে-মসিবতে পড়া যায় এবং পড়তে হয় এটাই কুরআনের শিক্ষা। এরপর উল্লিখিত তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যারা বিপদ-আপদে অভাব-অনটনে ও যেকোনো সঙ্কটে ধৈর্য ধারণ করবে এবং উপরে উল্লিখিত দোয়াটি বেশি বেশি পড়বে তারাই আল্লাহর অফুরন্ত রহমতে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে। অতএব এই মহাবিপদে আমাদের আল্লাহর রহমত ও দয়া পাওয়ার জন্য ধৈর্য ধারণ ও দোয়া পড়তে হবে (তাফসিরের মা’রেফুল কুরআন)।
তৃতীয় উপায় : আর যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখো এবং নিশ্চুপ থাকো যাতে তোমাদের ওপর রহমত হয় (সূরা আরাফ, আয়াত-২০৫)। আলোচ্য আয়াতের প্রকৃত বিষয় হলো এই যে, কুরআনুল কারিমকে যাদের জন্য রহমত সাব্যস্ত করা হয়েছে সে জন্য তাদের কুরআনের আদব ও মর্যাদা সম্পর্কে জানতে হবে এবং এর ওপর আমল করতে হবে।
আর কুরআনের বড় আদব হলো, যখন তা পাঠ করা হয় তখন শ্রোতা সে দিকে কান লাগিয়ে (মনোযোগ দিয়ে শুনবে) এবং নিশ্চুপ থাকবে। কুরআন পাঠ করা, শ্রবণ করা ও তার হুকুম আহকামের ওপর আমল করার চেষ্টা করা সবই আল্লাহর রহমত পাওয়ার মাধ্যম।
অতএব আমরা যারা কুরআন তিলাওয়াত জানি আমাদের বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। আর যারা তিলাওয়াত জানি না তাদের মনোযোগ দিয়ে তা শ্রবণ করতে হবে পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াত শিখতে হবে। তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ আমাদের ওপর রহমত করবেন।
চতুর্থ উপায় : সালেহ আ: বলেছিলেন হে আমার কওম! তোমরা কল্যাণের আগে দ্রুত অকল্যাণ চাইছ কেন? তোমরা কেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছ না? যাতে করে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও (সূরা আননামল : ৪৬)।
তাহলে এই আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি যে, নিজেদের ছোট বড় পাপের জন্য বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া ও ইস্তিগফার পাঠ করাও আল্লাহর রহমত পাওয়ার মাধ্যম। অতএব এই মহাসঙ্কটে আমাদের বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার ও ক্ষমা চাইতে হবে। ‘আস্তাগ্ফিরুল্লাহাল লাযী লা-ইলাহা ইল্লাহুওয়াল হাইয়্যুল কায়্যুমু ওয়াতুবু ইলাইহি’ এটি পাঠ করতে হবে।
রাসূল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, ১০টি নেকি দান করবেন, ১০টি গুনাহ মাফ করবেন ও ১০ গুণ মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। তো দরূদ অনেক আছে তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট ও সহজ হলো সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়া (মিশকাত)।
যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি রহম বা দয়া করে না আল্লাহ তায়ালাও তার প্রতি রহমত ও দয়া করেন না। এই দুর্যোগে কত মানুষ অনাহারে-অর্ধহারে অভাব-অনটনে আছে শ্রমজীবী, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ পরিবার নিয়ে নিদারুণ কষ্টে আছে। আমাদের যাদের সামর্থ্য আছে তাদের ওপর দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে এই পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের প্রতি দয়ার হাত বাড়িয়ে দেয়া।
মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করার এখনই মোক্ষম সময় ও সুবর্ণ সুযোগ। আসুন আমাদের যার যা সামর্থ্য আছে তা নিয়ে প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন কে কেন সমস্যায় আছে খবর নেই, তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত ও দয়া লাভ করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: ইমাম, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২ (মহিলা ও শিশু) সেগুনবাগিচা, ঢাকা-১০০০
-এটি