মুযযাম্মিল হক উমায়ের
তিনি একদিন খুতবায় বলেন, ‘হামদ ও সালাতের পর। আমি তোমাদেরকে তাকওয়া অর্জনের ওসিয়ত করতেছি। তোমরা আল্লাহ তায়ালার উপযুক্ত প্রশংসা করো।
আশার সাথে ভয়ও রাখো। বিনয়ের সাথে প্রার্থনা করো। কারণ, আল্লাহ তায়ালা উক্ত গুণের কারণে হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারে প্রশংসা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ব্যক্ত করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ , وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا , وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ (নিশ্চয় তাঁরা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়তো। তাঁরা আশা ও ভীতি সহকারে ডাকতো। আর তাঁরা ছিলো আমার কাছে বিনয়ী। সুরা আম্বিয়া: আয়াত—৯০)
তারপর বলেন, হে আল্লাহ তায়ালার বান্দাগণ! তোমরা জেনে রাখো! নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তাঁর হককে তোমাদের নিজেদের বিনিময়ে বন্ধক গ্রহণ করেছেন। এবং এই বিষয়ে তিনি তোমাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রম্নতিও গ্রহণ করেছেন।
আর তিনি তোমাদের অস্থায়ী সামান্য জিনিসকে স্থায়ী বেশি জিনিসের বিনিময়ে ক্রয় করেছেন। তোমাদের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার কিতাব। যার বিস্ময়তা কখনো শেষ হবে না।
যার নূর কেউ কখনো নিভাতে পারবে না। সুতরাং তোমরা তাঁর কথাকে সত্যায়ন করো। তাঁর কিতাব থেকে উপদেশ গ্রহণ করো। অন্ধকার দিনের প্রস্তুতির জন্য গভিরভাবে তাতে পর্যবেক্ষণ করো। কারণ, তিনি তোমাদেরকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এবং তোমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য দুই জন সম্মানিত ফিরিস্তা নিযুক্ত করেছেন। তোমরা যা করতেছো, তাঁরা সেগুলো জানেন।
তারপর বলেন, হে আল্লাহ তায়ালার বান্দাগণ! তোমরা জেনে রাখো! নিশ্চয় তোমরা একটি নির্দিষ্ট সময় শেষ করার জন্য সকাল—বিকাল পাড়ি দিচ্ছো। যে সময় সম্পর্কে তোমাদের কোন কিছুই জানা নেই।
যদি তোমাদের সক্ষমতা থাকে ওই সময়গুলোকে আল্লাহ তায়ালার কাজে ব্যয় করার, তাহলে সেটি তোমরা করতে পারো। আর তোমরা সৎকাজ আল্লাহ তায়ালার সাহায্য ছাড়া কিছুতেই করতে সক্ষম হবে না। সুতরাং তোমাদের সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই আমল করার মাধ্যমে সময় পাওয়ার সুযোগটিকে কাজে ব্যবহার করার জন্য দৌড়ে আসো।
কারণ, তখন অবসর সময় তোমাদেরকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজের দিকে নিয়ে যাবে। কারণ, অনেক জাতি তাদের সময়কে অন্য কাজে বিনিষ্ট করেছে এবং নিজেদের উপকারের কথাকে ভুলে গেছে। অতএব আমি তোমাদেরকে তাদের মতো হতে বারণ করতেছি। সুতরাং তোমরা মুক্তির দিকে দৌড়ে আসো। কারণ, তোমাদের পশ্চাতে রয়েছে দ্রুত হিসাব অনুসন্ধানী বিষয় কবরের মুয়ামালা’। সূত্র: হিলয়াতুল আওলিয়া: খ.১, পৃ.৩৫
তিনি একদিন খুতবায় বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে অভাব—অনটন ও দারিদ্রতায় আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করার ওসিয়ত করতেছি। তিনি যেমন উপযুক্ত তোমরা তাঁর তেমন প্রশংসা করো। তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। কারণ, তিনি হলেন ক্ষমাশীল।
জেনে রেখো! তোমরা যে আমল আল্লাহ তায়ালার জন্য করেছো, সেটিতে তোমাদের রবের আনুগত্য করেছো। তোমাদের হকগুলোকে হেফাজত করেছো। তোমরা ঋণগ্রস্তের সময়ও তোমাদের সম্পদের কর খুশি মনে নিজেদের হাত দ্বারা আদায় করো। অভাব—অনটন ও প্রয়োজনের সময়ও তোমাদের থেকে পাওনা আদায় করো।
তারপর বলেন, যারা তোমাদের পূর্বে ছিলো, তাদেরকে নিয়ে চিন্তা করো। গতকাল তারা কোথায় ছিলো? আজ তারা কোথায় আছে? ওইসব রাজা—বাদশাগণ কোথায় যারা পৃথিবীকে আবাদ করেছিলো? লোকজন তাদেরকে ভুলে গেছে। তাদের আলোচনা, স্মৃতিগুলোকে ভুলে গেছে। আজ তারা কোন কিছুই ছিলো না এমন হয়ে গেছে। فَتِلْكَ بُيُوتُهُمْ خَاوِيَةٌ بِمَا ظَلَمُوا (এইসব তাদের ঘর—বাড়ি বিরান পড়ে আছে। এইসব তাদের জুলুম করার কারণে হয়েছিলো। সুরা নামল: আয়াত—৫২)
অথচ, তারা এখন অন্ধকার কবরে নিথর পড়ে আছে। هَلْ تُحِسُّ مِنْهُمْ مِنْ أَحَدٍ أَوْ تَسْمَعُ لَهُمْ رِكْزًا (আপনি কি তাদের কারো থেকে সারাশব্দ অনুভব করেন নাকি কারো থেকে ক্ষীণ আওয়াজ শুনতে পান? সুরা মরিয়ম: আয়াত—৯৮)
তোমাদের সাথী—সঙ্গী, ভাই—বেরাদর, বন্ধু—বান্ধব যাদেরকে চিনতে, তারা এখন কোথায় আছে? তারা পরকালের জন্য যা পাঠিয়েছে, তারা সেখানে পৌঁছে গেছে। অতপর হয়তো কষ্টে পতিত হয়েছে, নয়তো সুখে পতিত হয়েছে।
নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর কোন সৃষ্টির মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। যে সম্পর্কের টানে কাউকে কল্যাণ প্রদান করবেন অথবা কারো থেকে অকল্যাণ দূর করবেন। তবে আদেশ পালন ও আনুগত্য করার ভিত্তিতেই কল্যাণ ও অকল্যাণ পাওয়ার উপযুক্ত সাব্যস্ত হবে।
নিশ্চয় জাহান্নামে যাওয়ার পর কোন ধরনের কল্যাণ থাকবে না আর জান্নাতে যাওয়ার পর কোন ধরনের অনিষ্টতা থাকবে না। আমি তোমাদেরকে এই কথাগুলো বলছি। আমি নিজের জন্যও আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাই। তোমাদের জন্যও আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাই’।
সূত্র: হিলয়াতুল আওলিয়া: খ.১, পৃ.৩৫—৩৬
-এটি