আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: কক্সবাজারের বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো: রাশেদ খান হত্যা মামলায় রায়ের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তার বোন ও মামলার বাদি শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।
আজ সোমবার রায়ের পর মিডিয়াকে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, ‘মামলার রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে রায় যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়।’
একইসাথে রায়ের জন্য আদালতকে ধন্যবাদ জানান তিনি। পাশাপাশি এই মামলায় যারাই যেভাবে সহযোগিতা করেছেন ও সমর্থন দিয়েছেন, তাদের সবাইকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানান তিনি। আদালতের রায়ে সাত আসামির খালাস পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারা খালাস পেয়েছেন, তাদের যে একদম সংশ্লিষ্টতা নেই তা নয়।’
শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস জানান, রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারের সাথে আলোচনার পর বিবেচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।
এর আগে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সোমবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আদালত সিনহা মো: রাশেদ খান হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সাতজনকে দেয়া হয়েছে বেকসুর খালাস।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত এবং কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব। এছাড়া কক্সবাজারের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মো: নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো: নিজাম উদ্দিন।
রায় পড়ার আগে আলোচিত এই হত্যা মামলার আসামি ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপসহ ১৫ জনকে কারাগার থেকে আদালতে তোলা হয়। এদিকে আলোচিত এই রায়কে কেন্দ্র করে কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আদালতের প্রবেশ পথ, জেলা প্রশাসক কার্যালয় এলাকা, পৌরসভা গেট ও কাঁচাবাজার এলাকাসহ আশপাশে সাত স্তরে পুলিশের চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত ৯টার দিকে কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর সাবেক চৌকস কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনার পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট ওসি প্রদীপ, লিয়াকতসহ ৯ জনকে আসামি করে কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। পরে আদালত মামলাটি র্যাবকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তবে অভিযোগপত্রে আরো ছয়জনকে আসামি করা হয়। মোট ১৫ আসামির মধ্যে ১২ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও ঘটনার মূলহোতা ওসি প্রদীপসহ তিনজন দেননি।
যেসব আসামি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তারা হলেন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো: শাহজাহান, কনস্টেবল মো: রাজীব ও মো: আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো: নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
২০২১ সালের ২৩ আগস্ট কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে মামলার বাদি শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
এনটি