আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ট্রেন চালকদের চলমান মাইলেজ জটিলতার জেরে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বিভিন্ন রুটে ১১টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চালক সংকটের কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) মাইলেজ আন্দোলনের অংশ হিসেবে চালকরা ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি না করার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে।
ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ৫টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলাচলকারী ৩টি শাটল ট্রেন এবং লালমনিরহাট থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ৩টি লোকাল ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
ট্রেনের রানিং স্টাফরা অতিরিক্ত ডিউটি পালন করায় ব্রিটিশ আমল থেকে অতিরিক্ত বেতন ভাতা পেয়ে আসছিলেন। তবে সম্প্রতি এসব সুযোগ সুবিধা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রেলের রানিং স্টাফরা আন্দোলেনের ডাক দেয়। প্রাথমিকভাবে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ না করার কর্মসূচির ফলে চালক সংকটে পড়েছে রেল। আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে মাইলেজ সমস্যার সমাধান না হলে ৩১ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে রেলের রানিং স্টাফরা।
আগের নিয়মে মাইলেজ ভাতার দাবি পূরণ না হলে আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চালানো বন্ধের ঘোষণা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদারকে চিঠি দিয়েছে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক সমিতি। তবে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) থেকে কর্মঘণ্টার বেশি কাজ না করার ঘোষণার বিষয়ে জানেন না বলে জানিয়েছেন ধীরেন্দ্রনাথ।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিষয়টি সুরাহা করতে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। অর্থ সচিবের সঙ্গেও কথা চলছে। ৩১ জানুয়ারির আগেই সমাধানের চেষ্টা চলছে।
ট্রেনের চালক (লোকো মাস্টার), গার্ড ও টিকিট পরিদর্শকদের (টিটি) রানিং স্টাফ বলা হয়। তারা দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বা ১০০ মাইলের বেশি ট্রেন চালালে একদিনের বেতনের সমপরিমাণ টাকা মাইলেজ বা রানিং ভাতা হিসেবে পেতেন। ভাতার ৭৫ শতাংশ পার্ট অব পে হিসেবে ধরে পেনশনে যোগ হতো। গত ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনে জানায়, মাইলেজ ভাতা পেনশনে যোগ হবে না। ভাতার পরিমাণ মাসিক মূল বেতনের বেশিও হতে পারবে না।
এ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে আন্দোলতরত রানিং স্টাফ সমিতির একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ৩১ জানুয়ারি থেকে ট্রেন না চালালে কী পরিস্থিতি হবে, তা রেলের কর্তৃপক্ষকে বোঝাতেই মঙ্গলবার থেকে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন না চালকরা।
নেতারা বলেন, ঢাকা থেকে পঞ্চগড় যেতে একটি ট্রেনের ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লাগে। মাঝরাস্তায় ট্রেন বন্ধ না করে ট্রেন শেষ গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হবে, যাতে যাত্রী দুর্ভোগ না হয়। কিন্তু পণ্যবাহী ট্রেন আট ঘণ্টার বেশি চালাবেন না চালকরা। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর ১২ ঘণ্টা বিশ্রাম পাওনা চালকের। চালক সংকটের কারণে তিন চার ঘণ্টার বেশি বিশ্রাম পান না। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে যাত্রা সম্পন্নের পর ১২ ঘণ্টা বিশ্রাম পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চালাবেন না।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, চালক শ্রমিকরা নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বেশি কাজ করেও যদি ভাতা না পান, তা যদি পেনশনে যোগ না হয়, তাহলে তারা কেন কাজ করবে। এখনও বহু চালক শ্রমিক ডিসেম্বর মাসের বেতন পাননি। অনুরোধ করে বেতন পেতে হলে, চালকরা কেন কাজ করবে?
-এএ