আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: নববর্ষে আতশবাজি পোড়ানো ও ফানুস উড়ানো বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল রোববার (১৬ জানুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিস্ট শাখায় রিটটি করেছেন মিজানুর রহমান নামে এক আইনজীবী।
রিটে নববর্ষ বা উৎসবে শহর এলাকায় ফানুস উড়ানো পুরোপুরি নিষিদ্ধ চাওয়া হয়েছে।
সেই সাথে থার্টি-ফাস্টে আতশবাজির আতংকে মারা যাওয়া শিশু উমায়েরের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনাও চেয়েছেন রিটকারী আইনজীবী।
এরআগে ইংরেজি নতুন বছর শুরুর রাতে (থার্টি ফার্স্ট নাইট) আতশবাজির শব্দে ভয় পেয়ে যায় তানজিম উমায়ের। বয়স মাত্র চার মাস ১৯ দিন।। এতে অসুস্থ হয় উমায়ের। এর পরদিনই তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে উমায়ের জন্ম থেকেই হৃদরোগে ভুগছিল বলেও জানা গেছে।
আরও জানা গেছে, উমায়েরের পরিবার থাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে অসুস্থ হয়ে শিশুটি। পরদিন ১ জানুয়ারি তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
শিশুটির বাবার নাম ইউসুফ রায়হান। তিনি ‘মোহাম্মদী টেলিকম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “আমার ছেলে উমায়ের জন্মের পর থেকেই হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছিল। প্রায়ই তার শ্বাসকষ্ট হতো এবং শরীর ঘেমে যেত।”
তিনি আরও জানান, “এই ঘটনার আগে উমায়ের ১২ দিন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এরপর হৃদরোগের সমস্যা থাকায় তাকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কিছুটা সুস্থবোধ করায় তাকে চারদিন পর চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় নিয়ে আসি।
এক সপ্তাহ পর আবারও চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। সে হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসককে দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু চিকিৎসক ব্যস্ত থাকায় ১ জানুয়ারি সকালে যেতে বলা হয়। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে উমায়েরের অপারেশনও করার কথা ছিল।”
ইউসুফ রায়হান বলেন, “আমার ছেলেটা সারাদিন হাসিখুশিই ছিল। কিন্তু সেদিন (৩১ ডিসেম্বর) রাত ১২টার পর থেকেই টানা আতশবাজির শব্দে ভয় পেয়ে যায়। ছেলেটা বারবার কেঁপে উঠছিল। বাড়ির কাছে যেগুলো ফুটছিল সেগুলোর কারণে বিকট শব্দ হচ্ছিল। এরপর তাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। সাধারণত রাতে তার ঘুম কম আসতো। সেদিন সারারাত সে ছটফট করছিল। শ্বাসকষ্ট হলে তাকে নেবুলাইজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। বলতে গেলে সে রাতে তাকে আধঘণ্টা পরপরই নেবুলাইজ করতে হচ্ছিল।”
পরদিন সকালে উমায়েরকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। শিশুটির বাবা বলেন, “শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় সকাল ১০টার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকাল ৪টায় তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেলে নল দিয়ে খাবার দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু প্রথমবার দেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের খাবার তার এক নাক দিয়ে গেলে অন্য নাক দিয়ে বের হয়ে আসছিল।
এসময় তার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে এলে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত আইসিইউতে নিয়ে যান। একপর্যায়ে চিকিৎসকরা জানান, উমায়েরের অবস্থা ভালো নয়। এর কিছুক্ষণ পর সে মারা যায়।”
তিনি বলেন, “আমার বাচ্চার মতো অনেক শিশুরই এ ধরনের সমস্যা থাকে। যাদের হৃদরোগের সমস্যা থাকে, উচ্চশব্দে তাদের সমস্যা হয়। আমি চাই না এভাবে আর কারও সন্তান বা কেউ মারা যাক।”
এ বিষয়ে আইনগত কোনও ব্যবস্থা নেবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমরা এখনও কিছু ভাবিনি। তবে এ ধরনের ব্যবস্থা নিলে যদি অন্য কোনও সন্তান বাঁচতে পারে, তাহলে আমি এজন্য ব্যবস্থা নিতে রাজি আছি।”
-এটি