বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

গান গাওয়ায় বাদ্যযন্ত্র পুড়িয়ে দিলো আফগান সেনারা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: আফগানিস্তানের পাকতিয়া প্রদেশের জাজাইয়ারুব জেলায় একজন সঙ্গীতজ্ঞের সামনেই তার বাদ্যযন্ত্র পুড়িয়ে দিয়েছে তালেবান।

আফগানিস্তানের একজন সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল হক ওমেরির পোস্ট করা একটি ভিডিওতে ওই সঙ্গীতশিল্পীকে তার যন্ত্রে আগুন দেওয়ার পরে কাঁদতে দেখা গেছে।

এর আগে তালেবানরা যানবাহনে গান নিষিদ্ধ করেছে। এ ছাড়া বিয়েতে লাইভ মিউজিক নিষিদ্ধ করেছিল এবং পুরুষ ও নারীদেরকে ভিন্ন ভিন্ন ঘরে বিয়ে উদযাপন করার নির্দেশ দিয়েছিল। সম্প্রতি আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে পোশাকের দোকানে ‘ম্যানেকুইনের’ শিরোশ্ছেদের নির্দেশও দেয় তালেবান। ইসলামি শরিয়ার উপর চলতে বারবার বলার পরও না মানায় এমন কঠোরতা করছে বলে জানা গেছে।

আফগানিস্তানের টিভি চ্যানেলগুলোকে নাটক ও সোপ অপেরায় নারীদের দেখানো বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়েও তালেবানের ‘পাপ ও পূন্য’ মন্ত্রণালয় একটি ‘ধর্মীয় নির্দেশিকা’ জারি করেছে।

তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিহউল্লাহ মুজাহিদ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যে কেউ তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে তাকে ধ্বংস করে ফেলা হবে। দেশটির ফারিয়াব প্রদেশে তালেবানের একজন উজবেক কমান্ডারকে আটকের জের ধরে তালেবানের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের পর এ হুঁশিয়ারি দিলেন মুজাহিদ।

তালেবানের মুখপাত্র বলেন, যারা শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা করবে তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলা হবে।

জবিহউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ফারিয়াব প্রদেশের তালেবান কমান্ডার মোল্লা মাখদুম মোহাম্মাদ আলম রব্বানিকে শিশু অপহরণের দায়ে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। তালেবান এর আগে তাদের যেকোনো সদস্য বা কমান্ডারের যেকোনো ধরনের দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন করার ঘোষণা দিয়েছিল।

এদিকে শনিবার (১৫ জানুয়ারি) মাখদুমকে আটকের পর তালেবানের উজবেক সদস্যরা এর প্রতিবাদ জানান এবং দু’পক্ষের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত অন্তত দু’জন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন এবং আহতদের মধ্যে দু’জন বেসামরিক নাগরিক।

এ ছাড়া ‘অপরাধমূলক কাজের’ সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাওয়ায় যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৩ হাজার তালেবান সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৮৪০ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে এএফপিকে জানান আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্যানেলপ্রধান লতিফুল্লাহ হাকিমি। তিনি বলেন, ‘তারা ইসলামিক আমিরাতের বদনাম করছিল। যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে আমরা ভবিষ্যতে পরিচ্ছন্ন একটি সেনা ও পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে পারি।’

হাকিমি আরও বলেন, বরখাস্ত হওয়া সদস্যরা দুর্নীতি, মাদক ও মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের হস্তক্ষেপের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অনেকের আবার আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল।

হাকিমি আরও বলেন, বরখাস্ত হওয়া সদস্যরা দুর্নীতি, মাদক ও মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের হস্তক্ষেপের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অনেকের আবার সন্ত্রাসী সংগঠন দায়েশের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল।

আফগানিস্তানে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল তালেবান। এরপর তাদের ক্ষমতাচ্যুত করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। গত বছরের আগস্টে আবার আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। তখন থেকেই শাসননীতি নিয়ে মত বদলেছে তারা। এ বিষয়ে আগের মেয়াদের তুলনায় নমনীয় হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর জের ধরেই সদস্যদের যাচাই-বাছাইয়ে একটি কমিশন গঠন করে তালেবান।

শাসননীতিতে পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া তালেবানের বর্তমান সরকার নানা সমালোচনার মুখে পড়েছে। তাদের অধীনে আফগানদের নানা অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বেশি প্রতিকূলতার মুখে পড়েছেন নারীরা। তালেবান কাবুল দখলের পর সরকারি অফিসগুলোতে অধিকাংশ নারী কর্মীদের ফিরতে দেওয়া হয়নি। এবং এখনো হাইস্কুলের ছাত্রীদেরও স্কুলে ফিরতে দেওয়া হয়নি।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ