আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গুয়ানতানামো বে, কিউবায় অবস্থিত হলেও এটি যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ঘাঁটি ও কুখ্যাত সামরিক কারাগার হিসেবে পরিচিত। এখানকার বন্দীদের ওপর চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা রোমহর্ষক কাহিনি বিশ্বজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত। কারাগারটি চালুর দুই দশক পূর্তিতে জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ এই কারাগার চূড়ান্তভাবে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার পর বিশ্বে কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এই যুদ্ধে আটক সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গুয়ানতানামো বে কারাগারে আটকে রাখা হতো। পরের বছরের ১০ জানুয়ারি এই কারাগারের যাত্রা শুরু হয়।
এরপর থেকে কারাগারটি শুধু কুখ্যাতি কুড়িয়েছে। বন্দীদের ওপর মার্কিন বাহিনীর চরম অত্যাচার, নির্যাতন আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন রোমহর্ষক ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর নানা মহলে কারাগারটি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি ওঠে। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও কুখ্যাত এই কারাগারের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার পক্ষে।
স্থানীয় সময় গত সোমবার এক বিবৃতিতে জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিচারের আওতায় না এনে টানা দুই দশক ধরে বন্দীদের গুয়ানতানামো বে কারাগারে আটকে রেখে শাস্তি দেয়া, অত্যাচার-নির্যাতন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষত যেই দেশের সরকার বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার রক্ষার জন্য সোচ্চার, সেই দেশ এমন কাজ করতে পারে না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই কালো অধ্যায় বন্ধ করতে হবে।
জাতিসঙ্ঘের দুটো ওয়ার্কিং গ্রুপ ও পাঁচজন স্বাধীন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এই কারাগার পুরোপুরি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, কারাগারটি বন্ধ করে দিয়ে বন্দীদের নিজ দেশে কিংবা তৃতীয় কোনো নিরাপদ দেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তাহলে এখানকার বন্দীরা তাদের ওপর বছরের পর বছর ধরে চলা অত্যাচার-নির্যাতনের ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
দুই দশকে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ধরে এনে প্রায় ৮০০ জনকে এ কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে আটকে রাখে যুক্তরাষ্ট্র। এখনো এখানে ৩৯ জন আটক আছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন একদম শুরুর সময় থেকে বন্দী আছেন। এই ৩৯ জন বন্দীর মধ্যে ১৩ জন মুক্তির অপেক্ষায়। তাঁদের প্রত্যাবাসনের নিরাপদ জায়গা খোঁজা হচ্ছে। তবে প্রক্রিয়াটি বেশ ধীরে এগোচ্ছে। ১৪ জনের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। ১০ জনের বিচার চলছে কিংবা বিচার শুরুর অপেক্ষায় আছেন। আর দুজন বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
২০০২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে গুয়ানতানামো কারাগারে ৯ বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ জন আত্মহত্যা করেছেন। তাদের কারোরই অপরাধমূলক কাজের দায়ে বিচার সম্পন্ন হয়নি। প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে বিবৃতিতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, গুয়ানতানামোর বন্দীদের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থা মানবাধিকার রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। এখানে বড় ধরনের আইনি ফাঁক তৈরি হয়েছে। হাজারো বন্দীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত কাঠামোগত অত্যাচার ও অমানবিক নির্যাতনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই কারাগার।
এনটি