হুসাইন আহমাদ খান।। প্রতিদিন পাঁচবার মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসে আজানের সুমধুর ধ্বনি। আমরা আজান শুনে নামাজের প্রস্তুতি গ্রহণ করি- নামাজ আদায় করি মসজিদে এসে। মুয়াজ্জিনের সুললিত কণ্ঠের এই আজানকে ইসলামের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়- বিবেচনা করা হয় মহান ইবাদত হিসেবে।
একইসাথে আজান হলো দাওয়াত ইলাল্লাহ তথা আল্লাহর পথে আহ্বানের একটি অংশ। আর দাওয়াত ও তাবলীগ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতসমৃদ্ধ একটি ইবাদত। তাই আজানের মতো মহান ইবাদতকর্ম সম্পাদনকারী মুয়াজ্জিনের রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা ও মহাপুরুস্কার।
মুয়াজ্জিনের সুউচ্চ মর্যাদা। আযান দেওয়া অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি ইবাদত। যারা দুনিয়াতে আযান দেবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের সুউচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করবেন। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কেয়ামতের দিন মানুষের মধ্য থেকে মুয়াজ্জিনদের গর্দান সবচেয়ে উঁচু হবে। ( সহিহ মুসলিম) এটা মুয়াজ্জিনের সুউচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হওয়ার আলামত।
এই মর্যাদার মাধ্যমে কেয়ামতের দিন তারা অন্যদের থেকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত হবেন। আরো ইরশাদ হয়েছে- 'মুয়াজ্জিনের আজান-ধ্বনি যতদূর পৌছবে, তত দূরের জ্বিন, ইনসান, অন্যান্য জিনিস যারাই শুনবে, কেয়ামতের দিন তারা তার স্বপক্ষে সাক্ষ্য দেবে।' ( সহিহ বুখারি ) উক্ত হাদীসও মুয়াজ্জিনের উচ্চ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে।
এছাড়াও আজান দেওয়ার বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- মুয়াজ্জিনের আজান-ধ্বনি যতদূর পর্যন্ত পৌছবে, ততদূর তাঁকে ক্ষমা করা হবে এবং জীবিত ও নির্জীব সকলে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।
নামাজে উপস্থিত লোকদের পঁচিশ নেকী লেখা হয় এবং তার দু’সলাতের মধ্যর্বতী কালের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।' আজানের এতো ফজিলত শুনে সাহাবায়ে কেরাম রা. সর্বদা এই আমলে অংশগ্রহণ করতে উন্মুখ হয়ে থাকতেন। এমনকি তাদের মাঝে মুয়াজ্জিন নির্বাচনের জন্য লটারি পর্যন্ত হয়েছে!
জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতের সুসংবাদ দুনিয়াতে আমাদের আমল-ইবাদতের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, জাহান্নাম থেকে নাজাত ও জান্নাত লাভ। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে জাহান্নামের শাস্তির ভয়ে ও জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামতের লোভে আমরা আমলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকি। এজন্য আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমলের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি তার সাওয়াব ও প্রতিদান উল্লেখ করেছেন। আর গুনাহের কাজ থেকে নিষেধ করার সাথে সাথে জানিয়ে দিয়েছেন তার ক্ষতি ও শাস্তির কথা।
একইভাবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও উম্মতকে আমলের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে তার ফজিলত বর্ণনা করেছেন- বিবরণ দিয়েছেন জান্নাতের অসংখ্য নিয়ামতের।
আর নাফরমানি থেকে দূরে রাখতে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন জাহান্নামের ভয়াবহ আযাবের কথা। সুখের কথা হলো, মুয়াজ্জিনের জন্য রয়েছে এই জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা।
ইরশাদ হয়েছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি নেকীর আকাঙ্ক্ষায় একাধারে সাত বছর আজান দেবে তার জন্য নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নামের আগুন হতে নাজাত। (জামে আত-তিরমিজি)
একইসাথে রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। যেমন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি বারো বছর আজান দেয় তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। আর প্রতিদিনের আজানের বিনিময়ে তার জন্য ষাট নেকী এবং প্রতি ইকামতের জন্য তিরিশ নেকী লেখা হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
শেষকথা, আজান একটি মহান ইবাদত। এই ইবাদত আদায়ের রয়েছে বহু ফজিলত ও মহাপুরুস্কার। আর ইখলাসের সাথে সাওয়াবের নিয়তে এই ইবাদত সম্পন্নকারী মুয়াজ্জিন কেয়ামতের দিন সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবেন- লাভ করবেন চিরস্থায়ী জান্নাত।
-এটি