সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বিনা হিসেবে যারা জান্নাতে যাবেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

Numan Reader

বিনা হিসাবে জান্নাত পাওয়া মহান আল্লাহর পাকের এক শ্রেষ্ঠ নেয়ামত‚ যারা সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন‚ তাদের ব্যাপারে হাদীস শরীফে বিশদভাবে বর্ননা এসেছে।

কী আমলের বিনিময়ে কারা সবার আগে বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবেন? তাদের আলামত-লক্ষণই বা কী হবে? এ সম্পর্কে বিশ্বনবিই বা কী বলেছেন?

হ্যাঁ‚ বিশ্বনবী সা. সর্ব প্রথম জান্নাতী মানুষদের সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন‚ আবার কী আমলের বিনিময় এরা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবেন তাও উল্লেখ করেছেন।

হাদীস শরীফে রয়েছে‚ ‘প্রত্যেক ব্যক্তি হাশরের মাঠে ভয়ে বলতে থাকবে —আমাকে বাঁচান‚ আমাকে বাঁচান‚ একমাত্র মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. উম্মত নিয়ে চিন্তা করবেন’ (বুখারি-হাদিস: ২৭১২)

কিয়ামতের বিভীষিকাময় ময়দানে কেউ কারো হবে না‚ সবাই ইয়া নাফসি‚ ইয়া নাফসি করতে থাকবে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে এসেছে‚ ‘সেদিন মানুষ নিজের ভাই‚ নিজের মা‚ নিজের পিতা‚ নিজের স্ত্রী ও সন্তানাদি থেকে পালাবে। এমন সময় প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেকে ছাড়া অন্য কারো প্রতি লক্ষ্য করার মতো অবস্থা থাকবে না’ (সূরা আবাসা‚ আয়াত: ৩৪-৩৭)

হাশরের মাঠে এতো ভয়াবহ অবস্থা সত্ত্বেও কিছু মানুষ বিনা বিচারে বা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। এ বিষয়ে হাদীস শরীফে এসেছে‚ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রহ. বলেন‚ একদিন রাসুল সা. বলেন ‘আমার কাছে সব উম্মতের লোকদের উপস্থাপন করা হলো‚ আমি দেখলাম‚ কোনো নবীর সঙ্গে মাত্র সামান্য কয়জন (তিন থেকে সাতজন অনুসারী) আছে‚ কোনো নবীর সঙ্গে একজন অথবা দুজন লোক রয়েছে‚ কোনো নবীকে দেখলাম তাঁর সঙ্গে কেউ নেই! ইতোমধ্যে বিরাট একটি জামাত আমার সামনে পেশ করা হলো‚ ফলে আমি মনে করলাম এটাই বুঝি আমার উম্মত কিন্তু আমাকে বলা হলো যে‚ এরা হলো মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর উম্মতের জামাত৷ আপনি অন্য দিগন্তে তাকান৷

অতঃপর আমি সেই দিকে তাকাতেই আরো একটি বিরাট জামাত দেখতে পেলাম‚ আমাকে বলা হলো যে এটি আপনার উম্মত। আর তাদের সঙ্গে এমন ৭০ হাজার লোক আছে‚ যারা বিনা হিসাবে ও বিনা আযাবে সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করবে‚ এ কথা বলে তিনি (আল্লাহর রাসুল) উঠে নিজ ঘরে প্রবেশ করলেন। এদিকে লোকেরা (উপস্থিত সাহাবিরা) ওই সব জান্নাতী লোকদের ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা শুরু করে দিল‚ (কারা হবে সেই লোক) যারা বিনা হিসাবে ও বিনা আজাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে?

কেউ কেউ বলল; সম্ভবত ওই লোকেরা হলো তারা‚ যারা আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর সাহাবা তারা৷ কিছু লোক বলল‚ বরং সম্ভবত ওরা হলো তারা যারা ইসলাম ধর্মের উপর জন্মগ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর সঙ্গে কখনো কাউকে শরিক করেনি। আরো অনেকে অনেক কিছু বলল। তাদের এরুপ আলোচনা চলাকালে কিছুক্ষণ পরে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তাদের কাছে বের হয়ে এসে বললেন; তোমরা কী ব্যাপারে আলোচনা করছ? তারা ব্যাপারটি খুলে বললে‚ আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন; (বিনা বিচারে জান্নাতি লোক) হলো তারা, যারা— ক. দাগ কেটে রোগের চিকিৎসা করায় না৷ খ. অন্যের কাছে রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁক করে দিতে বলে না৷ গ. কোনো জিনিসকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করে না৷
ঘ. বরং তারা শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে।

এ কথা শুনে হযরত উক্কাশাহ ইবনু মিহসান রা. নামক একজন সাহাবি উঠে দাঁড়ালেন এবং বলেন; হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমার জন্য দোয়া করুন, আল্লাহ যেন আমাকে তাদের দলভুক্ত করে দেয়৷ রাসুল সা. বলেন; তুমি তাদের মধ্যে একজন।

অতঃপর আর এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল‚ আপনি আমার জন্যও দুআ করুন‚ যেন আল্লাহ আমাকেও তাদের দলভুক্ত করে দেন। তিনি বলেন উক্কাশাহ এ ব্যাপারে তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে।’ (সহীহ্ বুখারি-হাদিস নং ৫৭০৫, ৩৪১০, তিরমিজি-হাদিস নং:২৪৪৬)

‘আর জান্নাতিদের প্রতিদান হবে তাদের কাঙ্খিত চাহনির চেয়েও যথাযথ‚ ফলে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে আমোদপ্রমোদ করতে থাকবে‚ এমতাবস্থায় তাদের চেহারা আলোকচ্ছটার ন্যায় প্রস্ফুটিত হবে- হাদিসে পাকে এসেছে– হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন‚ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন; ‘জান্নাতে প্রবেশকারী প্রথম দলটি পূর্ণিমা চাঁদের মতো উজ্জ্বল আকৃতিতে প্রবেশ করবে। অতপর আকাশের সবচেয়ে দীপ্তিমান তারকার মতো উজ্জ্বল আকৃতিতে প্রবেশ করবে। তাদের অন্তরগুলো হবে মানুষের ন্যায়। পরস্পর কোনো ধরনের শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না।’ (বুখারী-হাদীস; ৩২৪৬)

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন‚ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন; ‘জান্নাতে প্রবেশকারী প্রথম দল পূর্ণিমা চাঁদের মত উজ্জ্বল আকৃতিতে প্রবেশ করবে। অতপর (পরবর্তী দল হিসেবে) প্রবেশ করবে আকাশের সবচেয়ে দীপ্তিমান তারকার সুরতে। সেখানে তারা পেশাব-পায়খানা করবে না। থুতু ফেলবে না।

নাক ঝাড়বে না। তাদের চিরুনিগুলো হবে স্বর্ণের। ঘাম হবে মিশক আম্বরের মত সুগন্ধি। তাদের ধুপ হবে চন্দন কাঠের এবং স্ত্রীগণ হবে ‘হূরুলঈন’ ডাগরডোগর চক্ষু বিশিষ্ট-চির কুমারী হুরগণ।

সবার আকৃতি হবে তাদের বাবা হযরত আদম আলাইহিস সালামের মতো ষাট হাত লম্বা‚ জান্নাতে তাদের পাত্র হবে স্বর্ণের‚ তাদের গায়ের ঘাম হবে কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দু’জন স্ত্রী থাকবে‚ যাদের সৌন্দর্যের দরুন মাংসভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোনো মতভেদ থাকবে না‚ পারস্পরিক বিদ্বেষ থাকবে না‚ তাদের সবার অন্তর একটি অন্তরের মত হবে‚ তারা সকাল-সন্ধ্যায় তাসবিহ পাঠে রত থাকবে।’ (সহীহ্ বুখারী-হাদীস: ৩২৪৫)

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ