আওয়ার ইসলাম ডেস্ক:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল। সা. ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে দেয়া এমন দুটি নেয়ামত রয়েছে, যার প্রতি অধিকাংশ মানুষই উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে থাকে। তার একটি হল, সুস্থতা আর অপরটি, অবসরতা বা কর্ম শূণ্যতা।
আল্লাহ প্রদত্ত এ দুটি নেয়ামত এমন যে, যখনই এর কোনটি বা উভয়টিই কারাে হাতের নাগালে আসে তখনই সে শয়তান বা কু প্রবৃত্তির গ্রাসী থাবার শিকার হয়ে ভাবতে থাকে যে, এ নেয়ামতটি তার কাছে আজীবন থাকবে। যেমন, যখন কেউ শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকে, তখন সে একটি বারের জন্যও এ কথা ভাবে না বা ভাবার চেষ্টাও করে না, হয়তাে এক মুহুর্ত পরেই সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এমনি ভাবে যখন কারাে কোন অবসর সময় আসে তখন সে ভাবতেও পারে না যে, হয়তাে ক্ষণিক পরই তাকে ব্যস্ততা এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ধরবে যে, সে ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হয়ে পড়বে অথচ পানাহারেরও ফুরসত পাবে না।
অবসরের ব্যাপারে মানুষের সিকি ভাগের চেয়ে কম হলেও চেতনা আছে। কিন্তু সুস্থতার মূল্যায়নের প্রতি উদাসীনতার হার একেবারে এক শ’ ভাগের এক শ' ভাগই বললেও মনে হয় অত্যুক্তি হবে না। অথচ কারাে কি এটা জানা আছে যে, সে কতদিন সুস্থ থাকবে? কখন অসুস্থ
পড়বে ? এবং কি ধরণের বিপদের সম্মুখীন হবে? কত সুস্থ-সবল যুবক হঠাৎ এমন জটিল অসুস্থতার জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে যে, আর চলা-ফেরা করার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না।
তাই যখনি আল্লাহু তায়ালা সুস্থতা বা অবসর দান করেন তখনি প্রতারিত না হয়ে টাল বাহানা নীতি পরিহার করে মূল্যবান সময় কাজে লাগানাে উচিৎ। ভাল কাজ, নেক আমল, আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর প্রতি মনােনিবেশ এবং আখেরাতের চিন্তা ভাবনা করার এটাই মােক্ষম সুযােগ। কারণ এ সুযােগ পূণরায় আসবে কিনা এটা কারাে জানা নেই। কেউ যদি এ কথা মনে করে যে, এখনাে বহু সময় আছে। এখন চিত্ত বিনােদন, মনােরঞ্জন ও আমােদ-প্রমােদ করে নেই।
পরে সময় এলে নেক আমল করবাে, নামায-রােযা করবাে, দাড়ি রাখবাে, তালীগ বা কোন পীরের কাছে গিয়ে আল্লাহু ওয়ালা হয়ে যাবাে; তাহলে তার কাছে আমার জিজ্ঞাসা তার সাথে কি হযরত আযরাঈলের (আঃ) কোন গােপন চুক্তি হয়েছে ? এ ধরণের মনােভাব পােষণকারীদের অনেকেই পরে শুধুই আফসােস, পরিতাপ ও অনুতাপ করেই জীবন শেষ করে। সুস্থতাও ফিরে পায় না।
আর ইবাদত করার সামর্থ্যও হয় না। আর যারা সুস্থতার পােষাক নিয়েই হঠাৎ করে পরপারে যাত্রা শুরু করে তাদের তাে এ অনুতাপটুকুও করার অবকাশ থাকে না। যেন পৃথিবীর ইতিহাসে সে-ই বড় হতভাগা। তাই নবীজীর (স.) সেই বাণী জাতির জন্য কতটুকু হিতােপদেশ তা বিবেচনার করার এখনাে সময় আছে। তিনি বলেছেনবিপদ সঙ্কুল পাঁচটি অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার পূর্বেই তার যথার্থ মূল্যায়ন কর- (১) বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পূর্বে যৌবন (২) অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতা (৩) দারিদ্রতার পূর্বে স্বচ্ছলতা (৪) ব্যস্ততার পূর্বে অবসরতা এবং (৫) মুত্যুর পূর্বে জীবনকে মূল্যায়ন কর। (তিরমিযী)
কোরআনে কারীমেও এ ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বিবৃত হয়েছে যে, পার্থিব জীবনকে যারা হেলায়, বিনােদন, আনন্দ-বিলাস ও আমােদ-প্রমােদে কাটিয়ে রিক্ত হস্তে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে তারাই হিসাব-নিকাশের সেই ভয়াবহ মুহুর্তে আর্তচিৎকার করে বলবে- প্রভু হে! আমাদেরকে আর মাত্র একটি বারের জন্য দুনিয়ায় পাঠিয়ে দাও। আমরা সৎ কাজ ও নেক আমল করে আসব।
পূর্বে যা করেছি তা আর কখনও করবাে না। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আমি কি তােমাদেরকে এতটা সময় দেইনি; যাতে তােমরা যা চিন্তা করার করতে পারতে? অধিকন্তু তােমাদের কাছে সতর্ককারী। (নবী-রাসূল, আলেম-ওলামা, ধর্মীয় বই-পুস্তক ও দ্বীন প্রচারকারীগণ) ও আগমন করছে। (৩৫ঃ৩৭) তাই সুধী মহলের নিকট আমার সনির্বন্ধ অনুরােধ এখনাে সময় আছে। সময়কে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হােন।
আমাদের পর্থিব জীবন যে খুবই ক্ষণস্থায়ী এবং বরফ খন্ডের ন্যায় দ্রাবমান। এ কথা চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রই অনুধাবন করতে পারে। এর জন্য কোন বার্তা বাহক বা কোন ভীতি প্রদর্শনকারীর আদৌ প্রয়ােজন হয়
তুবও পরম দয়ালু মহান আল্লাহ্ রাবুল আলামীন যুগে যুগে অসংখ্য অগণিত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তারা মানুষকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তাদের সে সতর্ককরণের পাশাপাশি আমরা যদি আমাদের জীবন নিয়ে একটু চিন্তা করি তাহলে আমরা আরাে অনেক বিদায়ীবার্তা এবং সতর্ক সংকেত খুঁজে পাবাে। সূত্র: জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম