মুযযাম্মিল হক উমায়ের।।
হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু। তিনি ইসলামের তৃতীয় খলিফা ছিলেন৷ শুরুর দিকে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর দাওয়াতে ইসলাম গ্রহণ করেন৷ তিনি বলতেন, আমি ইসলামের চতুর্থ ব্যক্তি৷
হুজুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের দুই মেয়েকে তাঁর সাথে বিয়ে দেয়ার কারণে তাঁকে ‘যূন নূরাইন’ তথা দুই নূরের অধিকারী বলা হতো৷ দশ জন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীদের মধ্যে তিনি তিন নম্বর ৷ তিনি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও গণিমতের অংশ পেয়েছিলেন৷
মসজিদে নববীর স্থান তাঁর টাকা দ্বারাই ক্রয় করা হয়েছিলো৷ মুসলমানদের সুমিষ্ট পানির ব্যবস্থার জন্যে তিনিই রোমা নামক কূপ ক্রয় করে সকলের জন্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, শাহাদতের দিন জালেমরা তাঁকে মসজিদে নববীতে নামায আদায় করতে দেয়নি এবং পানির লাইনও বন্ধ করে দিয়েছিলো৷
ইসলামের জন্যে তিনি সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহয়তা করেছিলেন৷ তিনি ৩৫ হিজরীতে রাষ্ট্রদ্রোহীদের হাতে নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন৷( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)৷ তাঁর কিছু আত্মশুদ্ধিমূলক উপদেশ নিচে তুলে ধরা হলো:
১>তোমরা আল্লাহ তাআলার সাথে ব্যবসা করো, লাভবান হবে৷
২> ইবাদত বলা হয়, আল্লাহ তাআলার বিধানাবলীকে সংরক্ষণ করা৷ কারো সাথে দেয়া ওয়াদা পূর্ণ করা৷ যা কিছু হাতে আসে, তাতে সন্তুষ্ট থাকা৷ কোন কিছু না আসলে, সবর করা৷
৩> দুনিয়ার চিন্তা-ভাবনা করার দ্বারা অন্তরে অন্ধকার সৃষ্টি হয়৷ আর পরকালের ফিকির করার দ্বারা অন্তরে নূর সৃষ্টি হয়৷
৪> মুত্তাকী হলো ওই ব্যক্তি, যে মনে করে আমি ছাড়া সকলেই মুক্তি পেয়ে যাবে৷ আমিই হয়তো পরকালে ধরা পড়ে যাবো৷
৫> সবচেয়ে সর্বনাশ ওই ব্যক্তির হবে, যে লম্বা জীবন পেয়েও পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেনি৷
৬> যে ব্যক্তির জন্যে দুনিয়া জেলখানা হবে, তার জন্যে কবর আরামের স্থান হবে৷
৭> যদি তোমাদের অন্তর পবিত্র হয়ে যায়, তাহলে পবিত্র কুরআনুল কারীমের তিলাওয়াত বা শোনা থেকে তোমাদের অন্তর পরিতৃপ্ত হতে পারে না৷
আরো পড়ুন: জাতির উদ্দেশে হযরত আবু যর রা.-এর দরদমাখা ভাষণ
৮> গৃহবন্দীর দিন সাহাবাগণ তাঁর কাছে জানতে চান, আপনি তো এখন মসজিদে যেতে পারছেন না৷ যদি এইসব রাষ্ট্রদ্রোহীদের মধ্যে কেউ নামাযের ইমামতি করে, তাহলে আমরা কী তার পিছনে নামায আদায় করবো?
উত্তরে তিনি বলেন, নামায ভালো জিনিস৷ যখন তোমরা মানুষদেরকে ভালো কাজ করতে দেখো, তখন তোমরা তাদের সাথে ভালো কাজে অংশগ্রহণ করো৷ তবে মন্দ কাজে কারো সঙ্গ দেয়া থেকে বিরত থাকো৷
৯> দুনিয়া হলো চাকচিক্য ও মনোরম দৃশ্যের ন্যায়৷ যা দর্শককে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে৷ এবং অনেককে ধোঁকায় ফাঁসিয়ে দেয়৷ সুতরাং তোমরা দুনিয়ার দিকে আকৃষ্ট হয়ো না৷ দুনিয়ার উপর ভরসা করো না৷ কারণ, দুনিয়া ভরসা করার মতো উপযুক্ত বস্তু নয়৷ আর মনে রেখো! যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ছেড়ে দিয়েছে, দুনিয়া নিজে তাঁর পিছনে পিছনে অপদস্ত হয়ে ঘুরতে থাকে৷
১০> যারা দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছে তাদের থেকে উপদেশ গ্রহণ করো৷ তারপর চেষ্টা-প্রচেষ্টা করো৷ উদাসীন হয়ো না৷
সূত্র: আকওয়ালে সালফ।
আরো পড়ুন: হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.-এর হৃদয়কাড়া ১০ উপদেশ
এনটি