মুযযাম্মিল হক উমায়ের।।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ৩৭ বছর আগে পবিত্র নগরী মক্কায় জন্ম গ্রহণ করেন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রায়িাল্লাহু আনহু। ইসলাম গ্রহণের তালিকায় তার নাম ৬ নম্বরে। তিনি বদর, ওহুদ, খন্দক, বায়আতে রেদওয়ানসহ অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
আল্লাহর রাসুলের প্রিয় সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ কুরআনের সাধক হিসেবে আজো বিশ্ববিখ্যাত। তার ব্যাখ্যা এবং মতামত এখনো সবার শীর্ষে গ্রহণযোগ্য। তিনি ছিলেন কুরআনুল কারিমের একনিষ্ঠ সেবক ও গবেষক। জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় তিনি কুরআন গবেষণায় ব্যয় করেছেন। হয়েছেন রইসুল মুফাসসিরিনদের একজন। পাঠকের জন্য আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.-এর হৃদয়কাড়া ১০ উপদেশ তুলে ধরা হল:
১> অধিক বর্ণনা করার নাম ইলম নয়; ইলম হলো, আল্লাহ তাআলাকে ভয় করার নাম৷
২> দুনিয়ার স্বচ্ছতা বিদায় নিয়েছে৷ ময়লা-আবর্জনা শুধু রয়ে গেছে৷ সুতরাং বর্তমানে মুসলমানদের জন্যে মৃত্যু থেকে বড় তুহফা আর কিছু নেই৷
৩> দাঁত দ্বারা আগুণের অঙ্গার চিবিয়ে নিভিয়ে দেয়া ওই লোকের জন্যে উত্তম, যে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত বিষয়ে আফসোস করে এই কথা বলে, আফসোস! যদি এমনটি না হতো, কতোই না ভালো হতো!
৪> তাঁর ছাত্রদেরকে বলতেন, তোমরা সাহাবাগণের চেয়ে বেশি নামায পড়ছো, বেশি মুজাহাদা করছো, কিন্তু সাহাবাগণ তোমাদের তুলনায় বেশি দুনিয়া বিমূখ ছিলেন এবং বেশি আখেরাত প্রত্যাশি ছিলেন৷
৫>আল্লাহ তাআলাকে ভয় পাওয়া পরিমাণ ইলম মানুষের জন্যে যতেষ্ট৷ আর নিজের আমলের উপর অহমিকা করা, নিজের অজ্ঞতা প্রমাণের জন্যে যতেষ্ট।
৬> যে ব্যক্তি পরকাল চায়, তাঁর দুনিয়া নষ্ট হবে৷ আর যে দুনিয়া চায়, তার পরকাল নষ্ট হবে৷ সুতরাং হে লোক সকল! চিরস্থায়ী বস্তু লাভের জন্যে, অস্থায়ী বস্তুর ক্ষতিকে তোমরা আনন্দে গ্রহণ করো৷
৭> নিজের ছেলেকে ওসিয়ত করেন, হে প্রিয় ছেলে! তুমি আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো৷ নিজের ঘরকে নিজের জন্যে যতেষ্ট মনে করো৷ (ফেতনা থেকে বেঁচে যাবে) নিজের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ রাখো৷ নিজের গুনাহের কথা স্মরণ করে, কান্নাকাটি করো৷
৮> মানুষের প্রশংসা এবং নিন্দাকে পরওয়া করো না৷ তুমি ভেবে দেখো! যদি আজ তোমাকে কারো ভালো লাগে, পরদিন তার কাছেই তোমাকে খারাপ লাগবে৷ আর আজ খারাপ লাগলে, পরদিন ভালো লাগবে৷ (মানুষের ভালো-মন্দের কোন সীমা-পরিসীমা নেই৷ সুতরাং তুমি তোমার ভালো কাজে মনোযোগের সাথে জুড়ে থাকো)
৯> আল্লাহ তাআলা দুনিয়া দোস্ত-দুশমন সকলকেই দেন৷ কিন্তু ঈমান তিনি যাকে পছন্দ করেন, একমাত্র তাঁকেই দান করেন৷
১০> যার সীনার পবিত্র কুরআনুল কারীম আছে তাঁকে চেনা যাবে রাতের সময়, যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে, দিনের বেলায়, যখন মানুষ রোযা রাখে না৷ চিন্তিত অবস্থায়, যখন মানুষ আনন্দ-উল্লাসে মত্ত থাকেকান্নাকাটির সময়, যখন মানুষ হাস্যরত থাকে চুপ থাকার সময়, যখন মানুষ অযথা কথাবার্তায় লিপ্ত থাকে প্রশান্ত হৃদয়ের সময়, যখন মানুষ তাঁকে বিরক্ত ও উত্তেজিত করে৷
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উক্ত নসিহতগুলোর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন৷ আমীন৷
সূত্র: আকওয়ালে সালফ
এনটি