আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবানের সঙ্গে সোমবার ও মঙ্গলবার কাতারে দুই দিনের এক বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইতিবাচক এই আলোচনায় তালেবান প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ফিরিয়ে দিতে এবং তাদের উপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।
আফগানিস্তানে আর্থিক সাহায্য বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছে সাহায্য গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান আবেদনের মধ্যে আলোচনাটি এমন একটা সময়ে অনুষ্ঠিত হল, যখন জাতিসংঘ বলছে, দেশটিতে এই শীতে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে।
আলোচনায় আফগানিস্তানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি টমাস ওয়েস্ট, এবং তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি কাতারের রাজধানী দোহায় নিজ নিজ প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দেন। তালেবান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল কাহার বলখি বলেছেন, দুই পক্ষ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং মানবিক বিষয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় করেছে।
দোহা বৈঠকের প্রারম্ভে ওয়াশিংটন বলেছিল, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হবে সন্ত্রাসবাদ দমন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ আফগানদের জন্য নিরাপদে দেশ ত্যাগ, মানবিক সহায়তা এবং দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, মার্কিন কর্মকর্তারা ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং তালেবানকে সকল আফগানদের অধিকার রক্ষা করার জন্য, তাদের সাধারণ ক্ষমার নীতিকে সমুন্নত রাখতে ও প্রয়োগ করতে এবং আফগানিস্তানের সব পক্ষের অংশগ্রহণে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের জন্য অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন’।
মার্কিন কর্মকর্তারা তালেবানকে নারী ও মেয়েদের জন্য সকল স্তরের শিক্ষায় দেশব্যাপী প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহ্বানও জানিয়েছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘তালেবানরা শিক্ষায় নারীদের পূর্ণ প্রবেশাধিকারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নির্দেশনা মেনে চলার বিষয়ে উদার মনোভাব প্রকাশ করেছে এবং সকল স্তরের শিক্ষায় নারী ও মেয়েদের অংশ গ্রহণের সুযোগের বিষয়ে অগ্রগতি যাচাই ও নিরীক্ষণের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে’। যক্তরাষ্ট্র এই আলোচনাকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছে।
আমেরিকান নেতৃত্বাধীন বিদেশী সেনারা ২০ বছর পর সে দেশ থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর তালেবান গত আগস্টে পশ্চিমা-সমর্থিত সাবেক সরকারের কাছ থেকে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ দখল করে নেয়। তারপর ওয়াশিংটন এবং মিত্র দেশগুলো আফগানিস্তানের উপর থেকে আর্থিক সহায়তা স্থগিত করতে, আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৯৫০ কোটি ডলার সম্পদ জব্দ করে এবং তালেবানের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এছাড়া বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও কাবুলের জন্য আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। বিদেশী উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আফগান অর্থনীতি নজিরবিহীন সংকটে পড়েছে। আর্থিক খাতের কার্যত দম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে যারা রয়েছেন তারা সহ সরকারি কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না, এবং বাণিজ্য কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
তালেবান সতর্ক করেছে যে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং আফগান সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়া না হলে, গভীরতর অর্থনৈতিক সংকট বিশ্ববাসীর জন্য ব্যাপক হারে অভিবাসন এবং শরণার্থী সমস্যা সৃষ্টি করবে।
অন্তর্ভুক্তি এবং মানবাধিকারের অভাব এবং এর পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বেগের কারণে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়নি।
-এটি