বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

সৌদি আরবে আল্লামা আহমদ শফী রহ‘র সফরের স্মৃতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাইয়্যেদ রফিকুল ইসলাম মাদানী।।

শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.-এর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় আজ থেকে ২০ বছর আগে। তাঁর সাথে প্রথম দেখা আমাদের এলাকার একটি মাহফিলে এবং ১৯৯৮ সালে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারি মাদ্রাসায়। তবে সে সময় হজরতের সাথে তেমন কোনো ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়নি আমার।

গাজীপুরে আমার এলাকায় জামিআতুল উলুমিল ইসলামিয়া মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে আসতেন তিনি। এলেই তাঁর সাথে দেখা করতাম, টুকটাক কথাও হতো।এভাবেই হযরতের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।...

২০১৩ সালের জুলাই মাসের ৫ তারিখ হুজুর ওমরা করতে আসেন। তাঁকে স্বাগত জানান আমাদের সাবেক ধর্মমন্ত্রী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সাহেব। আগে থেকেই কায়কোবাদ সাহেবের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল। তিনি জানালেন যে, হুজুর সৌদিতে তাশরিফ আনছেন। তারা ভাবছেন, কোন হোটেল বুক করা যায়। এ সংবাদ পেয়েই আমরা একটা জরুরি মিটিং ডেকে হুজুরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য একটা কমিটি গঠন করি এবং সফরের পুরো সময় হুজুরের দেখভাল করার জন্য কারা কারা থাকবেন তাও ঠিক করে ফেলি।

আরো পড়ুন: আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর চলে যাওয়ার এক বছর

শায়েখ পাঁচ তারিখ রাতে মদিনায় পৌঁছলে আমি আগ থেকে বুক করা ওয়েস্টার্ন হারেসিয়া হোটেলে নিয়ে আসি। হোটেল হারিসিয়াতে যখন পৌঁছি, তখন বাজে রাত তিনটা। হুজুর বললেন, অজু করে কিছুটা ফ্রেশ হয়ে রাসুল সা.-এর রওজা জিয়ারত করতে যাবেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শায়েখ সাজিদুর রহমান সাহেব আগে থেকেই মদীনায় ছিলেন। হুজুরের সাথে তাঁর সফর সঙ্গীও ছিলেন। আমি তখন বললাম, হুজুর মাত্র এতোটা কষ্ট করে এসেছেন, আমার মনে হয় একটু বিশ্রাম নিলে ভালো হয়। সাড়ে চারটার দিকে তাহাজ্জুদের সময় গেলেই ভালো হয়। তখন হুজুর বললেন, না! এখনই যাব। আমি মদিনায় আসার পর প্রথম কাজই হলো রাসূল সা.-এর রওজা জিয়ারত করা।

ক্লান্তশ্রান্ত এ মুসাফির এ অবস্থাতেই মসজিদে নববীতে গেলেন। সেখানে গিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে রওজাপাক জিয়ারাত করে ফজর পর্যন্ত হেরেমে অবস্থান করলেন। এদিকে আমরা খাবারের ব্যাবস্থা করেছি, অথচ খাবার নিয়ে তার কোনো আগ্রহ নেই। ফজরের সালাত আদায় করার পর তিনি এশরাক নামাজের সময় হলে এশরাক আদায় করেন। এরপর হোটেলে আসেন, নাস্তা করে তারপর বিশ্রাম করতে যান।

ওইদিন (৬ জুলাই) বেলা ১১ টা পর্যন্ত হজরত বিশ্রাম করলেন। বিশ্রাম শেষে তাকে মসজিদে নববীতে নিয়ে এলাম। তার সঙ্গে জোহর পর্যন্ত ছিলাম। সালাত আদায়ের পর আমার বাসা থেকে খাবার এনে আমরা চার-পাঁচজন ও হুজুরের খাদেম মোহাম্মদ শফি, মাওলানা আনাস মাদানি এবং মাওলানা সাজিদুর রহমান সাহেবসহ আমরা আরও অনেকে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম। এভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে মসজিদে নববীতেই আদায় করছিলেন এবং নিয়মিত জিয়ারাত করেছেন। এ সফরের অধিকংশ সময় তিনি মসজিদে নববীতে অবস্থান করেছেন।

এদিন আমরা ইশার সালাতের পর স্থানীয় ওলামা-মাশায়েখদের নিয়ে একটা বৈঠক করলাম। স্থানীয় যারা ছিলেন, তারা শাপলার এত বড় একটা ঘটনা ঘটার কারণে হুজুরের সামনে একত্রিত হতে ইতস্তত করছিলেন। যারা হুজুরের কাছে আসলেন দেখা করতে, আমি তাদের জন্য হুজুরের অনুমতি নিলাম যে, হুজুর যেন তাদেরকে একটু সময় দেন, একটু আলোচনা করেন। খুব অল্প সময়ে স্থানীয় উলামাদের একটা অংশ উপস্থিত হলেন।

অনেক জামিয়ার ছাত্র ছাড়াও স্থানীয় ইমাম, বাংলাদেশি ইমাম এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আলেম-ওলামা উপস্থিত হলেন হযরত রাহ.-এর কামরায়। আগে থেকে ঠিক করা ছিল, হুজুর অল্প কিছু কথা বলবেন। এরপর যার যা প্রশ্ন আছে, সেগুলোর উত্তর দেওয়া হবে। মাওলানা সাজিদুর রহমান সাহেব খুব সুন্দর করে প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ সময় বিভিন্ন মানুষের মধ্যে অনেক ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। সেসবের প্রশ্নের উত্তরও তিনি খুব সুন্দর উত্তর দিলেন। তখন থেকে সাজিদুর রহমান সাহেবের সাথেও আমার পরিচয়-পর্ব আরও ঘনিষ্ঠ হল। আলহামদুলিল্লাহ, তিনি অনেক সুন্দর কথা বলে তিনি সবার মনের দ্বিধা দূর করতে পেরেছেন।

বয়ানে আলেমদের উদ্দেশ্যে শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফি রহ. বলেন, 'হেফাজতের আবির্ভাব হয়েছে সামাজিক ছোটোখাটো কাজ ও একটি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে। কিন্তু কিছু মুখলেস আলেমের নিরলস প্রচেষ্টায় আল্লাহ তায়ালা বাতিলের বিরুদ্ধে বাঁধার প্রাচীর হিসেবে এটাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।...

এরপর হজরত বলেন, দেশ-ধর্ম-ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরো অনেক রক্ত দিতে হবে। আল্লাহ তায়ালার দয়ায় আমরা এক পতাকা তলে একত্রিত হতে পেরেছি। এই ঐক্যের ভেতর যেন কোনো ফাটল সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।'

৭ জুলাই আমরা হুজুরের কাছে আবেদন করলাম, এখানে আপনার অনেক ভক্ত আছে। আমাদের একটু সময় দেওয়া হোক যাতে আমরা আপনার কিছু কথাবার্তা শুনতে পারি। এখানের উলামাদের মধ্যে যারা নেতৃস্থানীয়, আরও অনেকেই হুজুরের কথাবার্তা শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। সবার একটাই আর্জি আমরা হুজুরের মুখ থেকে কিছু কথা শুনতে চাই।

এদিকে হুজুর যে হোটেলে অবস্থান করছেন, সে হোটেল পাঁচতারা হলেও এর হলরুম ছিল অনেক ছোট। প্রথমে মাওলানা আনাস সাহেবের মাধ্যমে হুজুরকে বললাম, মাওলানা সাজিদুর রহমান সাহেবের মাধ্যমে একটা আলোচনা সভার আয়োজন করতে চাই। তিন দিনের প্রোগ্রামের প্রথম দিন চলে গেছে। তখন তিনি বললেন, এখন কথা বলার মতো কোনো পরিবেশ নেই। আর সৌদি আরবের অবস্থাও ভালো না। এ অবস্থায় কোনো ধরনের সমাবেশ করা ঠিক হবে না। তখন কায়কোবাদ সাহেবও খুব বাধা দিয়ে বললেন, না, কোনো অবস্থাতেই সমাবেশ করা যাবে না। আমাদের জন্য ব্যাপারটা খুবই খারাপ হবে। আমি বললাম, একটা দুআ মাহফিল তো করা যায়। হুজুর দুআর উসিলায় যতটুকু বলা যায় হুজুর ততটুকুই বলবেন। আমরা ইশার নামাজের পর থেকে রাত দশটার ভেতরই অনুষ্ঠানের ইতি টানবো।

তারা রাজি হলে  হোটেল রুয়া আন নূর মিলনায়তনে হুজুরের ভক্ত ও মদীনার উলামাগণ উপস্থিত হলেন। যাদের আমরা দাওয়াত দেইনি তারাও হজরতের কথা শুনে চলে এলেন। সমাবেশ নিষিদ্ধ করার কারণে আমরা যে কজন উপস্থিতির ঘাটতি অনুভব করছিলাম, তা পূর্ণ হয়ে গেল। এখানে বক্তৃতা করলেন মাওলানা সাজিদুর রহমান, মুফতি হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমি, মাওলানা মাসিহুল্লাহ, মাওলানা মোজাম্মেল হক, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা সুফিয়ান আনিস, মাওলানা বশির, মুফতি মাসুম বিল্লাহ ফিরোজি, মাওলানা আজিজ ফুরকান আল মাদানী, মাওলানা লোকমান হোসেন, মাওলানা আবদুল জলিল, হাফেজ মহিউদ্দিন, হাফেজ শাহাদাত, মাওলানা মনির হোসাইন, মুফতি কাজী মহিউদ্দিন আহমাদ, মুফতি জাকির হোসাইন, মাওলানা মেসবাহ আল মাদানী প্রমুখ।

সবশেষে হুজুরকে বললাম একটু দোয়া করতে। মোনাজাতের আগে হুজুর কথা বলা শুরু করলেন। আলহামদুলিল্লাহ তিনি এক প্রায় একঘণ্টা বয়ান করলেন।...

মানুষজন তন্ময় হয়ে হযরতের কথা শুনলো। এরপর হুজুরের দুআর মাধ্যমে আমাদের প্রোগ্রাম শেষ হল। এরপর হুজুর একদিন সেখানে ছিলেন। পরের দিন ফজরের পর থেকে জোহর পর্যন্ত আমি নিজের গাড়ি করে হুজুরকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘুরিয়ে দেখালাম। আমি হুজুরকে সেসব স্থানে পরিদর্শন করার জন্য নিয়ে গেলাম, যেগুলোর আলোচনা মানুষ করে না অথবা তাদের সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখে না সেগুলো হুজুরকে দেখালাম।

হযরত মদীনায় তিনদিন ছিলেন। পরে আবার তিনি মক্কায় চলে গেলেন। সেদিন আমি হুজুরের সাথে ছিলাম না। পরের দিন মক্কায় গিয়ে হুজুরের সাথে মিলিত হলাম। তখন নারায়ণগঞ্জের মাওলানা আবু সায়েম খালিদ ভাই ছিলেন। সঙ্গে আর কে জানি ছিলেন এখন আর মনে নেই। এ সময় জেদ্দায় আমরা প্রোগ্রাম করেছি। সেখানে একটা ইফতার মাহফিলও ছিল। জেদ্দায় আমরা রাত্রি যাপনও করেছি। সকাল নয়টায় ফ্লাইট ছিল রিয়াদে যাব। এটা দশ বা এগারো তারিখের ঘটনা। তারিখটা আমরার ঠিক মনে নেই। তখন একটা চমৎকার ঘটনা ঘটে। একটা স্মরণীয় ঘটনা।

আমরা সকাল ৯ টার ফ্লাইট ধরতে ঘর থেকে সকাল সাতটায় বের হয়েছি। রোজার দিন ইফতার মাহফিলের দাওয়াত ছিল রিয়াদে। আমরা সম্ভবত ৭ জন ফ্লাইটের টিকেট কেটেছি। সফরসঙ্গী মাওলানা রেজাউল করিম গাজীপুরী আরো ক’জন ছিল। কতজন ছিল সেটা আমার মনে নেই। আমরা এয়ারপোর্টে আগে থেকেই অবস্থান করছি, তার কারণ হল, ডোমেস্টিক ফ্লাইট তো আগেই বোডিং হবে। আমাদের বোর্ডিং নেওয়া হয়েছিল। আমরা শেষ মুহূর্তে যখন ভিড় কমেছে তখন দাঁড়ালাম। তখন দেখি যে বোডিং পাস আনি নাই। পাস বাসায় রেখে এসেছি ভুল করে। সেখানে দায়িত্বে ছিল যে মৌলানা তার বাসায় রয়ে গেছে পাস। কোনো বোর্ডিং পাস না থাকলে আমাদের পাস ক্যানসেল হওয়া ছাড়া আর কোনো গতি নেই। আমরা বুঝে নিয়েছি যে, আজ আমাদের ফ্লাইট যাবার কোনো ব্যবস্থা নেই। কারণ বোর্ডিং পাস ছাড়া ঢুকবো কিভাবে? আর মাত্র আধাঘণ্টা আছে; এ সময় গিয়ে বোর্ডিং পাস আনাও সম্ভব না। এক্ষণে নিজেদের করণীয় নিয়ে ভাবছিলাম। আমরা এয়ারপোর্টের এক কোণে বসে একটু পরামর্শও করলাম যে, এখন কি করা যেতে পারে? তখন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হল, আমরা যারা হুজুরের সফরসঙ্গী তারা গাড়ি করে চলে যাই। আর হুজুর রাতের ফ্লাইটে চলে আসবেন। ইফতার মাহফিল ভেস্তে গেলেও যাতে প্রোগ্রামটাতে হুজুর অংশ নিতে পারেন। ইফতার মাহফিলে আমরা অংশ নেবো। এছাড়াও হুজুরের আরও তিনদিনের প্রোগ্রাম সেগুলোতে তিনি অংশ নেবেন।

নাজুক পরিস্থিতির কারণে আমরা ঠিক করলাম হুজুরের সাথে কে কে আসবে আর আমরা গাড়ি করে রিয়াদে চলে আসব। তখন হুজুর বললেন, আমি অজু করতে ওয়াশরুমে যাব। খাদেম হুজুরকে নিয়ে ওয়াশরুমে গেলেন। হুজুরের অপেক্ষায় আমরা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এ সময় একজন ভদ্রলোক এসে আমাদের  উদ্দেশ্যে করে বললেন, তিনি কি বাংলাদেশের আল্লামা আহমদ শফী সাহেব? বললাম, হ্যাঁ। লোকটি বলল, আমি হুজুরের ছাত্র। অনেকক্ষণ যাবত আপনাদের দেখছিলাম কিন্তু আমার ড্রেস এমন থাকার কারণে আসতে পারছিলাম না। আপনাদের কী সমস্যা বলুন। আমরা আমাদের সমস্যার কথা বলার পর তিনি বললেন, আপনারা অপেক্ষা করুন। আমি দুই মিনিটের ভেতর আসছি। একথা বলে, ভেতরে চলে গেলেন, হয়তো তিনি তাদের কান্ট্রি ম্যানেজারকে বলেছেন। হুজুর অযু করে বাহির হওয়া মাত্র ওই লোক এসে বললেন, চলেন আপনাদের সকলকে ফ্লাইটে উঠিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহর মেহেরবানীতে, তিনি কম্পিউটার কী জানি দেখে অফিসের সবাইকে বলে আমাদের ফ্লাইটে উঠিয়ে দেয়। আর আমরা আল্লাহর রহমতে নির্দিষ্ট টাইমে রিয়াদে পৌছে যাই! এটা হুজুরের কারামত ছাড়া কিছুই না!

আমাদের তিনটা প্রোগ্রাম সম্পন্ন হয়েছে। একটা প্রোগ্রাম ছিল সাধারণ পাবলিকের। আবার পরের দিনটা ছিল বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য। রাজকীয় সৌদি আরবেরর গ্রেন্ড মূফতি শেখ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন মোহাম্মাদ  আল-শেখ আল তামিমীর সৌজন্য সাক্ষাত করেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাওলানা হাফেজ হেলাল উদ্দীন নানুপু,রী মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী, মাওলানা রেজাউল করিম গাজীপুরী, মাওলানা মোহাম্মাদ হোসেন, ক্কারী আব্দুল হকিম প্রমূখ। পরে আমরা আবার মক্কায় ফিরে এলাম। এরপর আবার মদীনায়। আমার প্রথম সফর ছিল তার সাথে। এর আগে দ্বিতীয় দিন আমি হজরতকে বললাম, হুজুর দেশে আমি আপনার হাতে বায়আত হবার সুযোগ পাইনি। তিনি আমাকে বায়আত করলেন, কিছু নসিহত করলেন, কিছু আমল দিলেন। এরপর আমি মদীনায় চলে এলাম। এরপর হজরত সেখান থেকে দেশে চলে গেলেন।

মদীনায় হজরতের দ্বিতীয় সফর ছিল দুই হাজার চৌদ্দ সালে। তখন হজের মৌসুম। সেপ্টেম্বরের ১৯ তারিখ হজরত মদীনায় এলেন। আমি হজরতের সঙ্গে সাথে দীর্ঘ সময় ছিলাম। তার খেদমত করেছিলাম। ১৯ তারিখ বিকেলে হজরত মসজিদে নববির ইমাম ও খতিব ড. আহমাদ তালেবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে তিনি মসজিদে নববির চত্বরে আসমাউল হুসনা প্রদশর্নী পরিদর্শন করেন। এসময় হজরতকে স্বাগত জানান প্রদর্শনীর মহাপরিচালক শেখ রেজা আল জুহানি।

২১ তারিখ বিকেলে মারকাজে তাইয়্যেবা কনফারেন্স হলে হেফাজতে ইসলাম মদীনা জোনের উদ্যোগে ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। হজরত এতে অংশগ্রহণ করেন। বেশ তাড়া ছিল সম্মেলনের প্রথম দিন। দ্বিতীয় দিন আমি আবার তার কাছে আমার বায়াতের ব্যাপার এবং আমলের ব্যাপার নিয়ে কথাবার্তা বললাম। সব শুনে তিনি বললেন, আপনি কাজ চালিয়ে যান এবং মানুষকে দাওয়াত দিতে থাকেন।

দ্বিতীয় সফরে তিনি ছয় বা সাতদিন ছিলেন। মদীনায় এই দুইবারই হুজুরের সাথে আমার দেখা হয়েছে। এমনি আমি প্রায় সময় হুজুর সাথে ফোনে কথা বলতাম। আলহামদুলিল্লাহ, হুজুর আমার খোঁজখবর নিতেন সবসময়। পরেও চার পাঁচবার গেছি হজরতের দরবারে, তিন-চারবার গেছি হাটহাজারি মাদ্রাসায় হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ করতে। যখনই দেশে যেতাম হুজুরের সাথে দেখা করতাম। আমি একবার হুজুরকে বললাম যে, হুজুর আমার মাদরাসায় আপনার দাওয়াত। আমি বুঝিনি যে হুজুর আমার দাওয়াত রাখবেন। ভাবছিলাম হুজুরকে সামলাতে পারবো কি-না। তবে আমাকে অবাক করে দিয়ে হুজুর রাজি হয়ে গেলেন। হুজুর অল্পসময় নসিহত করেছেন আমার মাদ্রাসায়। আমি তারিখটা সঠিক বলতে পারছি না, কিন্তু একটা ছবি আমার কাছে আছে। আমাদের গাজীপুরের আলেম-উলামা এবং বিভিন্ন মাদরাসার মুহতামিম, প্রিন্সিপাল ও শিক্ষকদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। সেখানে দশ-পনেরো মিনিট কথা বলেছেন। পরবর্তীতে আমি বারবার হুজুরের সাথে দেখা করেছি এবং ফোনে কথা হতো।

এই হল হুজুরের সঙ্গে আমার স্মৃতি। হুজুরের কাছ থেকে আমি অনেক আমল পেয়েছি, আমলের ব্যাপারে নসিহতের ব্যাপারে অনেক কিছু জানিয়েছি। যা আমার জীবনের পরম পাথেয় হয়ে থাকবে। অল্প যে কয়েকদিন বেঁচে আছি হুজুরের নসিহত অনুযায়ী আমলের পদ্ধতি অনুসরণ করার চেষ্টা করব।

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ