বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

১৮ মাস পর উচ্ছ্বাস ও শঙ্কা নিয়ে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর আবারও সচল হতে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সম্ভাবনা ও শঙ্কার মধ্য দিয়ে আগামীকাল রোববার থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হচ্ছে। সেজন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অপেক্ষার প্রহর গুনছে বাসা-বাড়িতে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠা শিক্ষার্থীরাও।

তবে, আজ শনিবার দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘করোনা সংক্রমণ কমে আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে, সংক্রমণ বেড়ে গেলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্বান্ত নেওয়া হতে পারে।’ এর আগে একই ধরনের বার্তা দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীও।

গত বৃহস্পতিবার এবং আজ শনিবার রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে চলছে ধোয়ামোছার কাজ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি আসবাবপত্র ও দেয়ালগুলোকেও রাঙানো হচ্ছে।

আজ রাজধানীর যাত্রাবাড়ির ডেমরা এলাকায় সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলে ধোয়ামোছার কাজ চলছে। চেয়ার, টেবিলসহ আসবাবপত্র গোছানো হচ্ছে।

পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার জন্য গাড়ি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের ইনচার্জ মামুনুর রশিদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর স্কুল খুলে দেওয়ার সিদ্বান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা স্কুলে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিশ্চিত করাব। এ ছাড়া নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাসে বসানো হবে।’

প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে যখন স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে গেল, আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি থাকায় পরদিন ১৮ মার্চ থেকে ইংলিশ ভার্সন শাখা থেকে ক্লাস শুরু করি।

বাংলা মাধ্যমে ২৭ মার্চ থেকে ক্লাস শুরু করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মধ্যে রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা পরবর্তীকালে দেখেছি, অনলাইনে শিক্ষার্থীদের একঘেয়েমি চলে আসছে। এই একঘেয়েমি দূর করে মনোযোগ বাড়াতে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে জুমের মাধ্যমে যুক্ত করে সহশিক্ষা চালিয়ে নিয়েছি।’

অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। বছরের শুরুতে এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আয়োজন করার কথা থাকলেও, এখনও তা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষা আয়োজন নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এসব বিষয় বিবেচনা করে আগামীকাল থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন সরকার। এ জন্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’ এদিকে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে রীতিমতো উৎসবের আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হবে।

নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের বরণ করে এ দিন পাঠদান শুরু করবেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষকেরা। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক জানান, ক্লাসের প্রথম দিন আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেবেন তাঁরা।

বেইলি রোড, আজিমপুর, ধানমন্ডি ও বসুন্ধরায় ভিকারুননিসার চারটি শাখার প্রবেশপথের সব ফটক বেলুন ও কাগজ দিয়ে সাজানো হবে। তিন ফুট দূরত্ব রেখে শিক্ষকেরা গেটের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবেন। ছাত্রীরা যখন প্রবেশ করবে, শিক্ষকেরা করতালি ও ড্রাম বাজিয়ে সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের ভেতরে প্রবেশ করানো হবে।

উদ্‌বেগ-উচ্ছ্বাসে অভিভাবকেরা

এক দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খোলার প্রস্তুতি চলছে, অন্য দিকে অভিভাবকদের মধ্যে চলছে নানামুখী আলোচনা। রাজধানীর একজন অভিভাবক জানান, স্বাস্থ্যবিধি মানলে খুলতে কোনো সমস্যা তিনি দেখছেন না।

রাজধানীর ধনিয়ার গ্রীন স্কলার্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই ছাত্রীর অভিভাবক মাহমুদুল হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর স্কুল খুলছে—এটা শোনার পর থেকে বাচ্চাদের আনন্দের শেষ নেই। দীর্ঘদিন পর স্কুলের ক্লাসে উপস্থিত হবে এবং বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবে—এ নিয়ে আমার দুটি বাচ্চা অপেক্ষার প্রহর গুনছে। অভিভাবক হিসেবে আমিও আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছি।’

তবে, সন্তানদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি অভিভাবকদের মধ্যে রয়েছে উৎকণ্ঠাও।

পুরান ঢাকার সেন্ট টমাস মিশন প্রাইমারী স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর বাবা রানা মজুমদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় আমরা খুশি। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতি এখনও চলমান থাকায়, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো নিয়ে উদ্‌বেগও কাজ করছে। কেননা, শুনেছি যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এক সপ্তাহে আড়াই লাখ শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।’

এদিকে, দীর্ঘ সময় পরে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে নির্দিষ্ট পোশাক (ইউনিফর্ম) নিয়ে স্কুলগুলোতে তেমন কড়াকড়ি থাকবে না। রাজধানীর নেভি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, স্যার জন উইলসন স্কুল, সেন্ট যোসেফ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সাধারণ শোভন পোশাকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারবে বলে নোটিশ দিয়েছে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক সিদ্বান্ত নেওয়া হয়—দেশে করোনার সংক্রমণ দ্রুত কমে যাচ্ছে। জুলাই মাসের তুলনায় সংক্রমণ ৭০ শতাংশ কমেছে।

এ অবস্থায় ১২ সেপ্টেম্বর (আগামীকাল) থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। প্রথম দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে এই ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে।

পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে আলাদাভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনাসহ বেশ কিছু সতর্কতা ও সচেতনতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

অভিভাবকদের জন্য ৮ নির্দেশনা

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) গত বৃহস্পতিবার নতুন এক নির্দেশনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে মানসম্পন্ন কার্যপ্রণালি বিধি (এসওপি) ঠিক করে দিয়েছে। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পরিচালনা কমিটি এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য মোট ৬৩টি নির্দেশনা রয়েছে।

এগুলোর মধ্যে অভিভাবকদের আটটি বিষয় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এগুলো হলো সন্তানকে মাস্ক পরিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে উৎসাহ দেওয়া, নিজ স্বাস্থ্য সম্পর্কে (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) সচেতন করা, প্রতিষ্ঠানে সঠিক সময়ে পাঠানো ও বাসায় আসা নিশ্চিত করা, সন্তান অথবা পরিবারের কোনো সদস্য করোনায় আক্রান্ত হলে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জানানো, প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুসরণ করা এবং স্কুলে যাওয়ার সময় পানি ছাড়া অন্য কোনো খাবার সন্তানের কাছে না দেওয়া এবং বাইরের খাবার না খাওয়ার বিষয়ে সন্তানকে সচেতন করা।

প্রাথমিকে দিনে তিনটি ক্লাস

মাধ্যমিক পর্যায়ে দিনে কয়টি ক্লাস হবে, তা মাউশি আগেই জানিয়েছে। এবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দিনে তিনটি করে ক্লাস হবে। এই সময়সূচি সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়।

সময়সূচি অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণিতে প্রতিদিন তিনটি করে ছয় দিন ক্লাস হবে। শনিবার চতুর্থ শ্রেণি, রোববার তৃতীয় শ্রেণি, সোমবার দ্বিতীয় শ্রেণি ও মঙ্গলবার প্রথম শ্রেণির ক্লাস হবে। সময়সূচিতে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এই সূচি আপাতত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ