মাওলানা শামসুল আরেফীন
গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা প্রতিটি মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য বা আবশ্যক। গুনাহের সব চেয়ে বড় ক্ষতি হলো গুনাহ করার দ্বারা বান্দা প্রভুর সান্নিধ্য অর্জন করা থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।
ইবনে আব্বাস রা. বলেন নিশ্চয় নেক আমলের কারণে চেহারা উজ্জ্বল হয়।অন্তর আলোকিত হয়। রিজিক বৃদ্ধি পায়।আয় রোজগারে বরকত হয়।দেহের শক্তি বৃদ্ধি পায়।মানুষের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। পক্ষান্তরে গুনাহের কাজ করলে চেহারা কুৎসিত হয়। অন্তর অন্ধকার হয়।রিজিকের মধ্যে সংকীর্ণতা দেখা দেয়।মানুষের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা ভাব জম্মায় ফলে তাকে কেউ ভালো দৃষ্টিতে দেখে না।
মুসনাদে আহমদে বর্নিত হয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন বান্দা গুনাহ করার দ্বারা রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।
অন্যত্রেএভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, গুনাহের কারণে হায়াত কমে যায় এবং জিন্দেগীর বারাকাত শেষ হয়ে যায়। গুনাহ এবং পাপাচার শুধু মানুষের দেহকে দুর্বল করে না বরং সাথে সাথে অন্তরকেও দুর্বল করে দেয়।অন্তর যেহেতু শরীরের অধীনে এই জন্য শরীরের প্রভাব অন্তরের ওপরও পড়ে ফলে গুনাহগার ব্যক্তি দুনিয়া এবং আখেরাতে বিপদগ্রস্থ হয় চরম ভাবে।
গুনাহ করার দরুন গুনাহগার ব্যক্তির দিল থেকে গুনাহের ঘৃণা ভাব দূর হয়ে যায় ফলোশ্রুতিতে সেই গুনাহ তার নিকটে মজ্জাগত অভ্যাসে পরিনত হয়। অনেক সময় এমনও দেখা যায় গুনাহ করতে করতে সেই গুনাহের প্রতি কোনো স্বাদ যখন অবশিষ্ট থাকে না, কিন্তু অভ্যাসের কারণে সেই গুনাহ করতে সে বাধ্য হয়।
গুনাহ করার কারণে পৃথিবীতে যে সমস্ত বিপর্যয় দেখা দেয় তা হচ্ছে নিম্নরূপ গুনাহ করার কারণে পৃথিবীতে নানান রকম ফাসাদ এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।গুনাহের কারণে অন্যান্য মাখলুকেরও ক্ষতি হয় ফলে তারা গুনাহগারের প্রতি লালত করে।
গুনাহের কারণে পৃথিবীতে অনাবৃষ্টি দেখা দেয় এবং নদ-নদীর পানি শুকিয়ে যায়। গুনাহের কারণে আবহাওয়ার মধ্যে প্রতিকূলতা সৃষ্টি হতে থাকে।
গুনাহ মানুষের জ্ঞান বুদ্ধিকে ধ্বংস করে দেয়।যেমনি ভাবে আগুন শুকনো কাঠকে নষ্ট করে দেয়। প্রত্যেক ভালো জিনিসেরই একটি নূর বা আলো থাকে আর গুনাহ সেই আলো বা নূরকে নিভিয়ে দেয়। গুনাহ করার ব্যাপারে কাফের এবং মুমিনের মাঝে পার্থক্য হচ্ছে এমন মুমিন গুনাহকে এমন ভাবে ভয় করে যে,একটি বিশাল পাহাড়ের নিচে সে অবস্থান করছে তার নিকট আশংকা হচ্ছে সেই পাহাড়টা তার মাথার ওপর ভেঙ্গে পড়বে পক্ষান্তরে কাফের ব্যক্তির কাছে গুনাহটা হচ্ছে একটা মাছির মত তার নাকের ডগায় একটি মাছি বসে আছে আর সে মাছিকে হাত দ্বারা নাড়া দিলো আর মাছিটি চলে গেলো।
গুনাহের কারণে গুনাহগার ব্যক্তি রাসুল সা. এর লানতের তলে পড়ে যায়।কেননা অনেক গুনাহের জন্য রাসুল সা. লালত করেছেন।প্রত্যেক পাপ কাজই আল্লাহ তায়ালার কোনো না কোনো দুশমনদের দ্বারা শুরু হয়েছে সেই সূত্রে প্রত্যেক পাপী ব্যক্তি পাপকাজেরওয়ারিশ বলে গণ্য হবে।
পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন কখনও না, বরং তারা যা করে, তাই তাদের হৃদয় মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে"।
সুরা মুত্বাফ্ফিফীন- ১৪
যখন কোনো মুমিন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। তারপর যখন সে গুনাহ থেকে বিরত থাকে এবং তাওবা করে তখন তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে যায় এবং তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তার পর মুমিন আবার গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে কালো দাগটা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
মুমিনের ব্যাপারে কুরআনে বর্ণিত রাইন তথা অন্তরে মরিচা বিস্তার লাভ করা আর এখানে এমনটি বুঝানোই মুখ্য উদ্দেশ্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "কখনো না ররং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে জং লাগিয়ে দিয়েছে। আমাদের পাপগুলোই আমাদেরকে আন্তরে জং বসিয়ে দিয়েছে যদি আমরা এসব গুনাহ থেকে তাওবা না করি হতে পারে আমাদের পাপের কারণে আমার পিতা - মাতা ছেলে মেয়ে বউ ইত্যাদির ওপর পাপের প্রভাব পড়তে পারে।
তাই আমাদের জন্য উচিৎ হবে নিজেও গুনাহ থেকে সংযোমী হওয়া এবং পরিবার পরিজনকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর ব্যাপারে সচেতনতার ব্যাপারে তৎপর এবং উদ্যোমী হওয়া। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে গুনাহ পরিহার করে যাপিত জীবনকে আরো সুন্দর করে দিক।আমিন।
লেখক: শিক্ষক জামিয়া আনওয়ারিয়া মাদরাসা। শ্রীপুর, গাজীপুর।
-এটি