আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে করোনার ভারতীয় ধরন। যে কোনো ভাইরাসই ক্রমাগত নিজের ভেতরে নিজেই মিউটেশন ঘটাতে থাকে অর্থাৎ নিজেকে বদলাতে থাকে, এবং তার ফলে একই ভাইরাসের নানা ধরন তৈরি হয়। করোনাভাইরাসের ভারত ভ্যারিয়েন্ট - যেটার বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.৬১৭ - প্রথম ভারতে শনাক্ত হয় অক্টোবর মাসে।
কত দ্রুত এবং কতদূর নতুন ধরনের এই ভাইরাসটি ভারতে ছড়িয়েছে তার সুনির্দিষ্ট ধারণা পেতে যে মাত্রায় নমুনা পরীক্ষা করতে হয় তা এখনও ভারতে সম্ভব নয়।
পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩৬১টি নমুনা পরীক্ষায় ২২০টির মধ্যে নতুন ধরনের এই ভাইরাসটি শনাক্ত হয়।
ওদিকে, সংক্রামক রোগের তথ্য সংগ্রহ এবং আদান-প্রদানে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থা জিআইসএইড-এর ডাটাবেজ অনুসারে, এরই মধ্যে কমপক্ষে ২১টি দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সনাক্ত হয়েছে।
যাতায়াতের কারণে ব্রিটেনেও করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনটি পাওয়া গেছে। ২২শে ফেব্রুয়ারি থেকে ১০৩ জন কোভিড রোগীর দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখনও জানতে পারেননি যে ভারতে প্রথম শনাক্ত এই করোনাভাইরাসটি অন্যগুলোর তুলনায় দ্রুত সংক্রমণ ঘটায় কিনা, বা এটির বিরুদ্ধে টিকা কার্যকর কিনা।
যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ভাইরোলজিস্ট ড জেরেমি কামিল বলেন ভারত ভ্যারিয়েণ্টে শনাক্ত একটি মিউটেশনের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্টে শনাক্ত মিউটেশনের মিল রয়েছে।
এই মিউটেশনটি দেহে রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থায় তৈরি অ্যান্টিবডিকে পাশ কাটিয়ে যেতে ভাইরাসকে সাহায্য করতে পারে। সংক্রমণ এবং ভ্যাকসিন নিয়ে আগের বিভিন্ন পরীক্ষায় এটি দেখা গেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে এখন পর্যন্ত যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে তার অধিকাংশই অসম্পূর্ণ।
বিজ্ঞানীদের হাতে নমুনার সংখ্যাও খুব কম। ভারতে এই নমুনার সংখ্যা মাত্র ২৯৮, আর সারা বিশ্বে ৬৫৬। সেই তুলনায় ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্টের পূর্ণাঙ্গ নমুনার সংখ্যা কমপক্ষে ৩৮৪,০০০।
ভারতের এই ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর সারা পৃথিবীতে তা পাওয়া গেছে চারশোরও কম, বলছেন ড. কামিল।
ভারতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণ কি এটি ?
ভারতে ১৫ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন নতুন কোভিড রোগী শনাক্তের সংখ্যা দুই লাখের ওপর। একদিনে ৩ লাখেরও বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে। অথচ গত বছর প্রথম দফা সংক্রমণের সময় দিনে সংক্রমণের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৯৩,০০০। শুধু সংক্রমণই নয়, মৃত্যুর সংখ্যাও হু হু করে বাড়ছে।
“ভারতের উচ্চ জনসংখ্যা এবং ঘনবসতি মিউটেশনের জন্য এই ভাইরাসকে আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে, “ বলছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক রবি গুপ্তা।
তবে, ভারতে এখন যে উঁচু মাত্রায় সংক্রমণ দেখা যাচেছ - তার পেছনে বিশাল গণ-জমায়েত এবং সেই সাথে মাস্ক-না-পরা এবং সামাজিক দূরত্ব অগ্রাহ্য করার মত আচরণও কাজ করতে পারে।
কেন ভারতে দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ এত বিধ্বংসী
ওয়েলকাম স্যাংগের ইন্সটিটিউটের ড. জেফরি ব্যারেট বলছেন, করোনাভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের সাথে ভারতের বর্তমান এই ভয়াবহ পরিস্থিতির যোগসূত্র থাকতে পারে, কিন্তু তা নিয়ে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ এখনও নেই।
তিনি বলেন, ভারতীয় এই ভ্যারিয়েন্টটি গত বছরের শেষ দিক থেকেই সেদেশে রয়েছে।
“যদি সত্যিই ঐ ভ্যারিয়েন্টের কারণেই বর্তমানের এই উঁচু সংক্রমণ হয়ে থাকে, তাহলে সেটি কাজ করতে কয়েক মাস সময় নিয়েছে। তার অর্থ এটির চেয়ে কেন্ট বি ১১৭ ভ্যারিয়েন্টটি (ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্ট) অনেক বেশি সংক্রামক।“
টিকা কি কাজ করবে?
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের যেসব টিকা রয়েছে তা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের চরম অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে রক্ষা করবে।
তবে নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত অধ্যাপক গুপ্তা এবং তার সহযোগীদের করা একটি গবেষণা রিপোর্ট বলছে, এখন যেসব টিকা রয়েছে করোনাভাইরাসের কিছু ভ্যারিয়েন্ট সেগুলোতে মরবে না। ফলে, নতুন ধরণের ভ্যাকসিন আনতে হবে এবং বর্তমানের টিকাগুলোকে অদল-বদল করতে হবে।
তবে, যেসব টিকা এখন তৈরি হয়েছে সেগুলো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বা বিপদ কমাতে সক্ষম।
ড কামিল বলেন, সিংহভাগ মানুষের ক্ষেত্রে যেটা সত্য তা হলো, ভ্যাকসিন নেওয়া বা না নেওয়ার ওপর নির্ভর করবে - তারা সংক্রমণ মুক্ত বা বড়জোর স্বল্পমাত্রায় সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবেন, নাকি প্রাণ হারানোর ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে যাবেন। ভ্যাকসিন দেওয়ার সুযোগ পেলে দয়া করে তা লুফে নিন। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন না। শতভাগ অব্যর্থ কোনো ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষায় বসে থাকার মত ভুল করবেন না।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
এনটি