মোহাম্মদ ওয়াসিম হোসাইন ফারুক
মালয়েশিয়া থেকে
মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম উন্নয়নশীল দেশ । এ দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩২ মিলিয়ন। যার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৩% ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তারপরও বলতে হবে বহুজাতিক ও বহুভাষী মানুষের দেশ মালয়েশিয়া। ফলে মালয়েশিয়ার সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়। জাতিগত বৈচিত্র্যের মাঝেও মালয়েশিয়ানদের ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন অনেক গভীর। পবিত্র রমজানে এই বন্ধন আরো স্পষ্ট হয়। মালয়েশিয়ায় রমজান আসে ধর্মীয় গাম্ভীর্য ও উৎসবের আবহ নিয়ে। রমজান মাসকে মালায় ভাষায় বলা হয় ‘বুলান পচা’। প্রথম রোজার দিন মালয়েশিয়া পেনাং, মালেক্কা, জহুর রাজ্যে ছুটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও পুরো রমজান মাস জুড়ে অফিসগুলোতে এক ঘণ্টা আগে ছুটি দেয়া হয়। যাতে বাসায় গিয়ে পরিবারের সবার সাথে ইফতার করতে পারে।
রমজানে ইফতার: মালয়েশিয়ানরা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে ইফতার ও সেহরি খেতে ভালবাসে। রমজান মাসে ইফতারে মালয়েশিয়ার একটি জনপ্রিয় খাবারের নাম ‘বুবুর লাম্বুক’। দেশটির মসজিদগুলোতে বর্তমানে লকডাউনের নিয়ম মেনে রোজাদারদের জন্য একসঙ্গে রান্না হয় খাবারটি। এতে ব্যবহৃত হয় নারিকেলের দুধ, মাংস, আচার, মসলাসহ নানা উপাদান। দেখতে অনেকটা হালিমের মতো, তবে রং সাদা। এটি একইসঙ্গে মজাদার ও পুষ্টিকর।
মালয়েশিয়ানদের আরেকটি পছন্দের ইফতার ‘নাসি কেরাবু’ নামের নীল ভাতের সঙ্গে হরেক তরকারির এক প্রকার প্ল্যাটার। সাধারণত বাজার থেকে কিনতে হয় এ খাবারটি। বাজারে আরও পাওয়া যায় নানা ধরনের কাবাব। আস্ত গরু কিংবা খাসি গ্রিল করতেও দেখা যায় কোনো কোনো স্থানে। মালয়েশিয়া ইফতারের বাজারেরে জন্য বিখ্যাত। দেশটির প্রায় সব জায়গায় ইফতারের বাজারে থাকে হরেক রকমের খাবার। এর সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে দেশটির চারপাশ। ইফতার ও সেহরিতে মালায়েশিয়ানরা সাধারণত ‘বুবুর লাম্বুক’, কেদু পাক, লন্দক, আইয়াম বারগিক, নামি কিবারুসহ আর অনেক খাবার খেয়ে থাকে।
নিজেদের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোই প্রাধান্য পায় মালয়েশিয়ানদের ইফতারের টেবিলে। বাড়িতে বাড়িতে রান্না হয় ‘পুলুত পাংগাং’ (কলাপাতার ভেতর রান্না করা ভাত), ‘কারা বেরালাউক’ নামের এক প্রকার চিংড়ির বড়া ও বিভিন্ন জাতের হালুয়া। আরও রান্না হয় বিভিন্ন সবজি ও মাছ-মাংসের স্যুপ। পানীয় হিসেবে থাকে আখ ও মালবেরির শরবত।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে রমজান পালন করে মালয়েশিয়ানরা। নাইট ক্লাব, বার, মদের দোকানগুলোর ওপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আনা হয়। এমনকি দিনে কোনো মুসলমান রেস্তারাঁয় বসে খাবারও খেতে পারেন না। তবে করোনা মহামারির মধ্যে এবারের রমজান কিছুটা ব্যতিক্রম। সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ মেনে সবাইকে ঘরেই বেশিরভাগ সময় কাটাতে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে বিরতি দিয়ে লকডাউন চলছে। রমজান এমন একটি মাস যা মালয়েশিয়াবাসীদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। ইবাদতের মাধ্যমে সারা বছরের কর্মব্যস্ত জীবনটা একটু গুছিয়ে নেন সবাই।
এমডব্লিউ/