জগলুল হায়দার।।
মাগো তুমি কেমন আছো; কেমন আছেন আব্বা
আমায় নিয়ে আর কেন মা তোমরা অতো ভাববা?
এই যে শুনো, তোমায় দারুণ খুশির খবর দিচ্ছি
পুরাদুস্তর হাফেজ এখন তোমার পাগল পিচ্চি।
সত্যি মাগো ইন্টার্ভিউয়ে পাশ করেছি আমি
এ রমজানে পড়বো কালাম সবচেয়ে যা দামি।
চাটখিলে মা চাকরি হলো বাবাকে দাও বলে-
এই তারাবি কাটবে আমার পুণ্য কোলাহলে।
মা বললেন, মাশাল্লাহ! কবুল করুক আল্লা
ভালো কাজে ভালোর সাথে নিত্য দিবি পাল্লা।
এই বলে মা আবার শুধায়; বাড়ি আসবি কবে-
পরীক্ষা শেষ আর দেড়ি নয় জলদি আসা হবে।
মায়ের চোখে ভাসছে খোকার মায়াবি মুখ ছবি
আজ বিশ্যুদ, শুক্কুর-শনি পার হলেই তো রবি।
সেই রবিবার আসবে খোকা মায়ের খুশি কতো
খোকার প্রিয় খাবারগুলার যোগারে মা রত।
টানাটানির সংসারে মা নিজে খেয়ে বাসি
ছেলের মুখে দেন তো তুলে রাজ্যের সব হাসি।
সেই হাসিটা এবার বুঝি করবে বড় আরো
হাফেজ ছেলের মা যে তিনি, গর্ব কি কম তারো?
বাবা এবং ভাইবোনেরাও আনন্দে পথ চেয়ে
আসবে রবি, রবিবারে এবার ছুটি পেয়ে।
কিন্তু রবি- সেই রবিউল রবিবারের আগে
অস্ত গেলো; মায়ের বুকে নুহুর প্লাবন জাগে।
নুহুর প্লাবন রুহুর মাঝে হু হু কাঁদে নিজে
রবিবারের পথ এসেছে রবিই আসেনি যে।
কেমনে আসি, বদলা নিতে তোমার ছেলের খুনে
সাথীরা যে হরতালে আজ পথে মিছিল বুনে।
সেই মিছিলের মুখে মাগো আমায় খুঁজো তুমি
প্রাণ দিয়েছি দেইনি ঈমান জানুক জন্মভূমি।
নোট: ‘মা আমি চাটখিলের একটি মসজিদে ইন্টারভিউ দিয়ে রমজানের খতমে তারাবির জন্য ইমাম নির্বাচিত হয়েছি। গতকাল আমার পরীক্ষা শেষ, রোববার বাড়ি ফিরবো।’
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে শেষবারের মতো মাকে ফোন দিয়ে এ কথাগুলো বলেছিল হাফেজ রবিউল হোসাইন। কিন্তু হাফেজ রবিউল হোসাইন এর আর বাড়ি ফেরা হলো না! স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে হাটহাজারীতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান এ কোরআনে হাফেজ।
-এটি