যাকওয়ানুল হক চৌধুরী
সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলাধীন শাল্লা থানার একজন হিন্দু যুবক তার ফেসবুক আইডিতে আপত্তিকর কথাবার্তা বলার প্রেক্ষিতে সেখানে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির তৈরী হয়। এ বিষয়ে গতকাল বুধবার লাইভে এসে বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার শাইখুল হাদিস মাওলানা মামুনুল হক।
তিনি বলেন, কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির তৈরী হয় সুনামগঞ্জের শাল্লায়। দুঃখজনকভাবে সেখানের বিষয়টির সাথে অপ্রত্যাশিতভাবে আমার নামও জড়িয়ে গেছে। নিউজে যতটুকু আমরা দেখেছি, সেই হিন্দু যুবকের আপত্তিকর কথাগুলো আমরা জানতে পারিনি। আমরা শুধু বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন নিউজপোর্টালগুলোতে যে সংবাদ আমরা দেখছি যে, আমি মামুনুল হকের নামে সে কিছু আপত্তিকর কথা বলেছে, ইসলাম বিষয়ে কিছু আপত্তিকর বক্তব্য রেখেছে। এটা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে জনমনে ক্ষোভ তৈরী হয়েছে। সেই ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটেছে এভাবে যে, স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ক্ষুব্ধ হয়ে সেই হিন্দু যুবককে পাকড়াও করেছে, এবং তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে। এটি গতকাল (১৬মার্চ মঙ্গলবার) এর ঘটনা। আজ (১৭মার্চ বুুুধবার) সেই ঘটনার সূত্র ধরে যা ঘটেছে, বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে যে সংবাদ আমরা জানতে পেরেছি তা হলো- সেখানে কিছু মানুষ সেই সংখ্যালঘু হিন্দু কিছু পরিবারের উপর তারা চড়াও হয়েছে। এবং সংবাদ এটিও এসেছে যে, স্থানীয় আলেমসমাজ মানুষদেরকে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ থেকে বারণ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আলেম-ওলামাদের বিধি-নিষেধের উপেক্ষা করে কিছু মানুষ আক্রমণাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
এই বিষয়ে আমার স্পষ্ট বক্তব্য হল- সুনামগঞ্জে শাল্লার পূর্বে ফরিদপুরেও এরকম কিছু ঘটনা ঘটেছে। কোন একজন সংখ্যালঘু যুবক আমি মামুনুল হককে কটাক্ষ করার প্রেক্ষিতে কিছু ধর্মপ্রাণ মুসলমান তারা এতে ক্ষোব্ধ হয়েছেন, এবং সেই যুবককে এরজন্য জবাবদিহিতা করেছেন। জবাবদিহিতার এক পর্যায়ে তারা তাকে সামাজিকভাবে সাজা দিয়েছেন।
এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে, এবং যারা এ কাজটি করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, নানাধরণের হয়রানিও করা হয়েছে।
প্রিয় দর্শক! এদুটির ঘটনা থেকে যে বিষয়টি আমাদের সামনে চলে এসেছে, সেটি হলো- প্রথমত এ ধরণের সংখ্যালঘু হোক, ইসলাম বিদ্ধেসি হোক অথবা যারাই কোন ব্যক্তি, বিশেষ করে কোন আলেম বা ইসলাম নিয়ে নিয়ে কটুক্তি করার যে প্রবণতা রয়েছ , তা বন্ধ হওয়া উচিত।
সে ক্ষেত্রে যে সকল ভাইয়েরা বা হিন্দু সংখ্যালঘুরা রয়েছেন, দায়িত্বশীল মহলের, সকলের এবিষয়ে সতর্ক এবং সোচ্চার থাকা চাই। দেশে যেন কোন সম্প্রদায়ী বিশৃঙ্খলা তৈরী না হয়, আমরা যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করছি, আমাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশকে বহাল রাখার জন্য আমাদের সকল মহলের দায়িত্বশীল আচরণ করা নেহায়েত জরুরি। কাজেই হিন্দু এবং সংখ্যালঘু ভাইদের প্রতি আমাদের আহবান থাকবে যে, আপনারা কখনোই এধরণের উষ্কানিমূলক কার্যকলাপ করবেন না।
.
২য় বিষয হলো- যদি কোন ব্যক্তির ব্যপারে তারা কোন অভিযোগ দায়ের করে, তার চরিত্র হরন করে, অথবা তাকে কটাক্ষ করে, সেক্ষেত্রেও দেশের প্রচলিত আইন রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছ, আমাদের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি বিনিত অনুরোধ থাকবে, কঠোর নির্দেশ থাকবে, এবং শক্তিশালী পরামর্শ থাকবে যে, কখনোই কোনভাবে এধরণের ক্ষেত্রে আপনারা আইন নিজেদের হাতে তুুলে নেবেন না। নিজেরা অপরাধীকে শায়েস্তা করার জন্য কোন প্রদক্ষেপ নিবেন না। আপনারা আইনশৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতা নিবেন, সর্বোচ্চ আপনারা সেখানে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন যে, এধরণের কাজ একজন করেছে, যার কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরী হতে পারে, শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্ন হতে পারে। অবশ্যই এসমস্ত বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিবেন।
এটি হলো যদি কোন ব্যক্তি বিশেষকে নিয়ে কোন কার্যকলাপ করে থাকে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দারস্ত হওয়া চাই। কিন্তু একজন ব্যক্তির অপরাধকে কেন্দ্র করে কোন পরিবার, গোষ্ঠী বা এলাকার উপর এধরণের চড়াও হওয়া, এটাতো অবশ্যই গর্হিত, ঘৃণিত এবং উষ্কানিমূলক কাজ। আমাদের ইসলামে এধরণের কোন অবকাশ নেই, বিশেষ করে আলেম-ওলামারা সর্বদাই মানুষকে এবিষয়ে সতর্ক করে থাকেন, তাদেরকে বাধা প্রদান করেন।
দুর্ভাগ্যজনিত কিছু অতিউৎসাহী মানুষ রয়েছেন, যারা আলেমদের বাধাকে উপেক্ষা করে তারা অনেক সময় এরকম অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরী করেন। যার কারণে বদনামের সম্মুখীন হতে হয় ইসলামপ্রিয় জনতাকে এবং আলেম-ওলামদেরকে।
যারা ইসলামকে ভালোবাসেন, ইসলামের পক্ষে সত্য কথা বলার কারণে সাহসিকতার সাথে সময়ের সঠিক কথা উচ্চারণ করার কারণে যারা আমাকে ভালোবাসেন, তাদের সকলের প্রতি আমার পক্ষ থেকে নির্দেশ থাকবে যে, যদি কেউ ব্যক্তি আমাকে কটাক্ষ করে, সেক্ষেত্রে আপনারা কখনোই পরিস্থিতি উত্তপ্ত করবেন না। আপনারা যদি বেশি আহত হন, তাহলে সর্বোচ্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দারস্ত হবেন। এবং তাদের কাছে আপনারা বিচার দায়ের করবেন।
প্রিয় দর্শক! এব্যপারে আমাদেরকে খুব সোচ্চার থাকতে হবে, আমাদেরকে বুঝতে হবে বারবার আমাদের দেশে এরকম পরিস্থিতি তৈরী হয়। এরচেও সতর্কতার যে বিষয়, অনেক সময় তিলকে তাল বানানো হয়, ক্ষুদ্র বিষয়কে ভিন্নখ্যাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি চক্র ওঁতপেতে থাকে। তারা একরকম কোন বিষয় পেলে, এটিকে নিয়ে তারা পরিবেশ ঘোলাটে করতে চায়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিশ্বের কাছে বদনামি করার জন্য, এবং তাদের বিরূপ মনভাব তৈরী করার জন্য, তাদেরকে উগ্র সম্প্রদায়ি গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য একটি মহল সব সময় লেগে আছে।
কাজেই সংখ্যালঘুদের ব্যপারে আমাদের অনেক সতর্ক থাকা চাই। তাদের যে কোন বিষয়ে আমাদের কে অনেক বেশি সতর্ক, অনেকবেশী ধর্য্য থাকা থাকা চাই। সেখানেই প্রকৃতই যদি কেউ অপরাধ করে থাকে, নিজেরা শায়েস্তা না করে, আইনের আশ্রয় নেয়াটাই হবে যুক্তিযুক্ত কর্মপন্থা। আর এর বাহিরে যেটা আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কোন প্রতিবাদ করতে পারি। আমরা সেটার বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারি। আমাদের বিরুদ্ধে কোন অপপ্রচার চালালে, আমরা প্রচারের মাধ্যমে তার জবাব দিতে পারি।
কাজেই শাল্লায় যে ঘটনা সংবাদমাধ্যম প্রচারিত হয়েছে, সেটি যদি আসলেই এমন থাকে যে, মুসলমানদের মধ্যথেকে কিছু লোক হিন্দুদের বাড়িতে আক্রমণ করে থাকে, তাহলে এর দায়ভার কোন আলেম নিবে না, নেওয়ার প্রশ্নই আসে ন।
সেখানের যে সংবাদ এসেছে, আলেমদের নির্দেশ উপেক্ষা করে কিছু লোক এমন কার্যক্রম চালিয়েছেন। কাজেই আমি সেসব যুবকদের কে, আবেগি প্রজন্মকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করছি যে, আপনারা এসব কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন। আপনারা যদি আমাদেরকে ভালোবেসে থাকেন, আলেমদেরকে ভালোবেসে থাকেন, আপনারা যদি প্রকৃতই ইসলামের কল্যাণ চান, তাহলে আপনাদের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশ ও পরামর্শ থাকবে, আরেমসামজের পরামর্শ মোতাবেক আপনারা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
সাড়া দেশে এখন ইসলামি গণজাগরণ লক্ষ করতে পারছি, যুব সমাজ ব্যপকভাবে উদ্দিপ্ত এবং উৎসাহিত হচ্ছে। সুতরাং এ পরিবেশটিকে আমাদের কাজে লাগানো প্রয়োজন, এটিকে ষড়যন্ত্রমূলক যেন কেউ ভিন্নখ্যাতে প্রবাহিত করার প্রয়াস না পায়। সে জন্য আমি স্পষ্ট নির্দেশনা দিচ্ছি, ভালোবাসা যেন শুধুমাত্র আবেগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে, এটি যেন দ্বীনের কাজে ব্যবহার করতে পারি, সেটার জন্য প্রযোজন হলো- দায়িত্বশীলতার সাথে আলেমদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সাংগঠনিক ভাবে সঙ্গবদ্ধ হবেন, কোন দায়িত্বশীলের তত্বাবধানে আপনারা যে কোন কাজ পরিচালনা করবেন, এজন্য আমাদের দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলামের সংগঠন রয়েছে, যারা ইসলামের ব্যপারে কার্যকলাপ পরিচালনা করতে চান, আপনারা হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় দায়িত্বশীলের সাথে পরামর্শ করে করবেন। এর বাহিরে যারা আরো বেশী তৎপরতা দেখাতে চান,তাহলে তারা সাড়া বাংলাদেশ ব্যাপী বাংলাদেশ খেলাফত বিশেষত যুব সমাজের জন্য যুব মজলিম রয়েছে।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে উপরের সকল নির্দেশনামত কাজ করার তাওফিক দান করুন।
-এটি