আবু তালহা তোফায়েল: মুমিনরা মৃত্যুকে কখনো ভয় পায় না, কিন্তু সবসময় স্মরণ করে; আর মৃত্যুকে স্মরণ করা ছাওয়াবের কাজ। তাই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাবো সেই ভয়ে ইসলামকে এবং ইসলামের বিধানকে ভেঙে দেবো, তা হতে পারে না। আমরা মুমিন, আমরা এসবে বিশ্বাস করে মসজিদে তালা লাগাতে পারবো না। করোনা আক্রান্ত রোগীকে ছুঁয়েছি, তার সাথে বসেছি, খেয়েছি, কিন্তু আল্লাহর হুকুম নয়, তাই করোনা আক্রান্ত হইনি। তাই এইসব ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা ফেলা যাবে না। আমরা প্রকৃত মুমিন পরিচয় দিতে হলে পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে মেনে নিতে হবে এবং স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরানে বলেছেন "তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর।" তাই আমরা ইসলামকে কিছু বাদ দিয়ে কিছু মেনে নেবো তা হতে পারে না। ইসলামকে কাটছাট করা যাবে না। বরং নিজের জান, মাল, সন্তানাদি থেকেও বেশি ভালোবাসতে হবে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আমরা যারা প্রকৃত মুমিন, তাঁরা সবকিছুর উপরে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলকে বেশী ভালোবাসি।
গতককাল (১৬ মার্চ) মঙ্গলবার রাত ৯টায়- সিলেটের সাদারপাড়াস্থ মারকাযুল হিদায়ার দোয়া ও ইসলাহী মাহফিলের প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওলি ইবনে ওলি মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক (বর্ণভী পীর) উপরিউক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি আরও বলেন, ইসলামকে মেনে নিলে, ইসলামের কথা বললে, ইসলামের বিধান জারি করতে চাইলে, ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দিলে জঙ্গিবাদী উপাদি দেয়। ওরা জানে না যে, ইসলাম জঙ্গিবাদী নয়, বরং 'জঙ্গ' তথা সন্ত্রাসকে দমন করতে ইসলাম এসেছে। নানান ষড়যন্ত্রের ফাঁদ ফেলে রেখেছে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে। তাই সবাই খুব সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।
মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক আরও বলেন, মিডিয়ায় আজ যা প্রকাশ হচ্ছে, তাই মানুষ গিলে ফেলছে। এর ফল দাঁড়িয়েছে, বিশ্বে মুসলিম জাতির সংখ্যা অন্যান্য ধর্মের চেয়ে বেশি হলেও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ ইসলামী খানকাগুলো তালাবদ্ধ, এগুলো কাঁদছে। আমরা মিডিয়ার এই অপপ্রচারের বাদ ভেঙে দিতে হবে। তার ভালো জিনিস গ্রহণ করবো আর অপপ্রচারে কান দেবো না। তা না হলে আজ তারা বলছে মসজিদে গেলে করোনা ধরে মরে যাবে, কাল বলবে রুকু-সিজদা করলে করোনায় পাবে, আসন্ন রমজানে বলবে ২-৩ ঘন্টা পর পর খানাপিনা না করলে করোনা সংক্রমণ হবে। এসব আজগুবি কথা দিয়ে মুসলিম উম্মাহকে ধর্ম পালন থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করবে।
তিনি দ্বীনি শিক্ষা ও বস্তুবাদী শিক্ষা নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, পৃথিবীতে দু'ধরনের শিক্ষা আছে। এক. দ্বীনি শিক্ষা। যা আমাদের অস্তিত্বকে বুঝিয়ে দেয়, আমাদের গন্তব্য কোথায় তা দেখিয়ে দেয়, মানুষত্ব-মানবতা শিখিয়ে দেয়, সম্মান-মর্যাদা বুঝিয়ে দেয়।
দুই. বস্তুবাদী তথা আধুনিক শিক্ষা। এই শিক্ষায় অতি শিক্ষিত কিছু পণ্ডিতরা মানুষের মান মর্যাদা ধুলোয় মিশে দেয়। মানুষকে বানায় বানর আর বানরকে বানায় মানুষ। এরকম ভিত্তিহীন কথা বলা শিখিয়ে দেয় আধুনিক শিক্ষা।
বর্ণভী পীর পরিশেষে বলেন, পৃথিবীর সব যায়গায় ইসলামি খানকাহগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে, তাই বলে দ্বীনি ইলিম থেকে বিরত থাকা যাবে না। বরং আমাদের প্রতিটি ঘরকে নববী কানন বানাতে হবে। তাই আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের কার্মসূচী হচ্ছে প্রতিটি ঘরে সপ্তাহে একদিন একঘন্টা দ্বীনি ইলমি আলোচনা চালাতে হবে। একটা কেরাতের মশক্ব, একটা মাস'আলা ও একটা কালিমার ব্যাখ্যা এবং দ্বীনি কিছু ইলমি মুজাকারা করা। আমরা যদি গভীরভাবে তিনটি কথা চিন্তা করি যে, কোথায় ছিলাম, কোথায় এসেছি এবং কোথায় যাবো? তাহলে আমাদের আত্মশুদ্ধি হয়ে যাবে। এগুলোই হচ্ছে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের কার্যক্রম। আমরা এই কাজগুলো চালিয়ে যাবো। দ্বীনি মারকাজগুলোর প্রতি সুদৃষ্টি রাখবো, এগুলোতে আমাদের আগামীর ভবিষ্যতেরা গড়ে ওঠে।
মারকাযুল হিদায়া সিলেটের মুহতামিম মাওলানা নুরুজ্জামান সাঈদের সভাপতিত্বে এবং মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল্লাহ সালমানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট কাজির বাজার মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস শায়েখ আহমদ আলী (চিল্লা), হরিপুর মাদ্রাসার নায়েবে শায়খুল হাদীস শায়েখ আব্দুল কাদির বাগেরখালী, বিশিষ্ট লেখক ও ইসলামী চিন্তাবিদ শাহ নজরুল ইসলাম, মাওলানা উনাইস বরকতপুরী, মাওলানা মাহবুব সিরাজী, মুফতি আজিজুর রহমান, মাদ্রাসার আমিনুত তা'লীম শায়েখ মাওলানা আব্দুর রহমান কফিল প্রমুখ।
-এটি