বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

অনলাইনে ইসলামী একাডেমীর নামে প্রতারণা (দ্বিতীয় পর্ব)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ: মাইনুদ্দীন আহমেদ। জেনারেল পড়ুয়া এক তরুণ যুবক। সম্প্রতি তিনি দাবি করেছেন তিনি একটি মাদরাসা থেকে দাওরা হাদিস দিয়েছেন। শেষ করেছেন ইফতাও। সেই সাথে আরব থেকে তিনি পড়েছেন অসংখ্য কিতাব। যার ফিরিস্তি অনেক লম্বা। এ সকল কিতাব যাদের কাছে পড়েছেন তাদের ফিরিস্তিও একেবারে ছোট নয়। শায়েখ মাইনুদ্দীন আহমেদ নিজেকে হাম্বলী মাযহাবের ইমাম বলে দাবি করছেন। তিনি বলেছেন আমি বাংলাদেশের হাম্বলী মাযহাব কে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার না আছে কোন পড়াশোনা? না আছে কোন একাডেমিক পড়াশোনার ব্যাকগ্রাউন্ড। কিন্তু তিনি খুলে বসেছেন একটি অনলাইন একাডেমি। সেখানে তাঁর কাছে দরস নিচ্ছেন অসংখ্য শিক্ষার্থীরা। যার কিনা নিজের একাডেমিক সার্টিফিকেট নেই কিংবা নেই কোন পড়াশোনার সনদপত্র। তিনি কিভাবে একটি একাডেমী পরিচালনা করেন? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে! তাকে নিয়ে গতকাল ছিলো প্রথম পর্ব। আজ থাকছে সমাপণী পর্ব।

মাইনুদ্দীন আহমেদ। ধূর্ত প্রকৃতির তরুণ। সে যে কোনো সময় পাল্টাতে পারে তার রং রুপ। কথার ফাঁকে লুকাতে পারে কথা। তার একাডেমীর সার্টিফেকেটগুলো জাল করে বানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়টি বিস্তারিত দলীল প্রমাণসহ তুলে ধরেছেন মাহমুদ সিদ্দিকী নামক এক ভদ্রলোক। তিনি তার ফেসবুক আইডিতে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি লিখেন, এখন পর্যন্ত সরেজমিন অনুসন্ধান থেকে ভাই মাইনুদ্দিনের শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে ভয়াবহ রকমের কিছু তথ্য উঠে এসেছে।

১| তিনি কাওলায় ‘আল-জামিয়াতুল মুহাজিরিন’ নামক যে মাদরাসার কথা বলেছেন, তা মাওলানা আফফান বিন শরফুদ্দীন ভাইয়ের সরেজমিন অনুসন্ধানে অসত্য প্রমাণিত হয়েছে। আফফান ভাই নিকুঞ্জের বাসিন্দা। পুরো কাওলায় নিজে লোকজন দিয়ে সরেজমিনে খোঁজ লাগিয়ে, কাওলার উলামায়ে কেরামের সাথে যোগাযোগ করে, এলাকার স্থানীয় প্রবীণদের সাথে কথা বলে, বিভিন্ন মসজিদের ইমাম সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করে-মোটকথা সব উপায়ে খোঁজ নেবার পর আফফান ভাই এই নামের কোনো মাদরাসার অস্তিত্বই খুঁজে পাননি। মাওলানা আফফান বিন শরফুদ্দীন ভাইয়ের সরেজমিন অনুসন্ধানে লিংক : https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=757849528491183&id=100027984286303

২| ‘জামিয়াতুস সুনান’ নামক যে মাদরাসার আকিদা ও ফিকহ বিভাগের উস্তাদ হিসেবে তিনি নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন, সেই মাদরাসায় আকিদা ও ফিকহ বিভাগ নেই। সেই মাদরাসার উস্তাদ মুহতারাম মাওলানা ইয়াকুব শরীফ জানিয়েছেন-সেই মাদরাসার সাথে মাইনুদ্দিনের কোনো সম্পর্কই নেই।

No description available.

৩| মাইনুদ্দিন নিজেকে DUO এর পাঁচ বছরের আলিম কোর্স সম্পন্নকারী হিসেবে সবসময় পরিচয় দিয়েছেন। এ বিষয়ে দারুল উলুম অনলাইনের প্রধান ডক্টর ইয়াসির নাদিমের সাথে তার ছাত্র মোহাম্মাদ তাজবীদ উল্লাহ নাবীল যোগাযোগ করেন। ইয়াসির নাদিম জানান, মাইনুদ্দিন তার একাডেমিতে পড়েননি। ইয়াসির নাদিম সরাসরি মাইনুদ্দিনকে কল দেন। মাইনুদ্দিন এড়িয়ে যান। এরপর মাইনুদ্দিনের ভক্তদের কাছ থেকে প্রাপ্ত দাওরার সার্টিফিকেট শো করলে ইয়াসির নাদিম জানান-এটা সম্পূর্ণ ফ্রড ও জালিয়াতি। এরপর নির্দিষ্ট প্রসিডিউর ফলো করে DUO এর অফিসিয়াল পেইজ থেকে মাইনুদ্দিনের আইডির স্ক্রিনশটসহ তার সার্টিফিকেট জালিয়াতির বিরুদ্ধে অফিসিয়াল বিবৃতি ঘোষণা করেন। লিংক : https://www.facebook.com/330936830272317/posts/4133779353321360/

No description available.

এখানকার প্রতিটা দাবিই এখন পর্যন্ত অসত্য ও জালিয়াতি বলে প্রমাণিত। ভাই মাইনুদ্দিন আহমাদ এর কোনটার জবাব দিতে পারেননি।

এসব কিছু লেখার পর মাহমুদ সিদ্দিকী লিখেন, এবার আমি আরও কিছু ভয়াবহ জালিয়াতির তথ্য দিই। গতকাল রাতে (সময়টি তার পোস্ট মোতাবেক) মাইনুদ্দিন আহমাদের এরাবিক একটি অ্যাকাডেমিতে পড়ার তিনটি সার্টিফিকেট হাতে আসে। এগুলো বছরখানেক আগে মাইনুদ্দিন আহমাদ দিয়েছেন ফারশিদ খানকে। ফারশিদ খান দিয়েছে তার এক সিনিয়র ভাইকে। সার্টিফিকেট তিনটি ইয়েমেনের একটি সালাফি অ্যাকাডেমির। অ্যাকাডেমিটির নাম—মা’হাদু শাবাকাতিল-ইলমিশ শারঈ (معهد شبكة العلم الشرعي)। তিনটি সার্টিফিকেটে মোট চারটি কিতাব পড়ার কথা বলা হয়েছে।

সার্টিফিকেট এক : এই সার্টিফিকেটে বলা হয়েছে-মা’হাদু শাবাকাতিল-ইলমিশ শারঈ প্রত্যয়ন করছে এই মর্মে যে, ‘মাইনুদ্দিন আহমাদ হাম্বলি’ ফিকহের কিতাব ‘আল-ফুরূ লিবনিল মুফলিহ’র পরীক্ষায় ৭৮% নাম্বার পেয়েছে। এই কিতাবটি পড়িয়েছেন শাইখ আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ আস-সিক্কির (أبو عبد الله محمد الصقير)। এর প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান থেকে এই সার্টিফিকেট দেওয়া হলো।

সার্টিফিকেট দুই : এই সার্টিফিকেটে বলা হয়েছে-‘মা’হাদু শাবাকাতিল-ইলমিশ শারঈ প্রত্যয়ন করছে এই মর্মে যে, শিক্ষার্থী ‘মাইনুদ্দিন আহমাদ হাম্বলি’ ফিকহের কিতাব ‘আশ-শারহুল কাবির আলা মাতনিল মুকনি’র পরীক্ষায় ৭৮% নাম্বার পেয়েছে। এই কিতাবটি পড়িয়েছেন শাইখ ইউসুফ আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (يوسف عبد الله بن محمد)। এর প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান থেকে এই সার্টিফিকেট দেওয়া হলো।’

সার্টিফিকেট তিন : এই সার্টিফিকেটে বলা হয়েছে-‘মা’হাদু শাবাকাতিল-ইলমিশ শারঈ প্রত্যয়ন করছে এই মর্মে যে, ‘মাইনুদ্দিন আহমাদ হাম্বলি’ ফিকহ ও উসূলে ফিকহের কিতাব ‘আল-কাফি ফি ফিকহিল ইমাম আহমাদ’ এবং ‘রাউযাতুন নাযির’ কিতাবের পরীক্ষায় ৮৮% নাম্বার পেয়েছে। এই কিতাবটি পড়িয়েছেন শাইখ সা’দ বিন নাসির আশ-শাসারি (سعد بن ناصر الشثري)। এর প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান থেকে এই সার্টিফিকেট দেওয়া হলো।’

প্রতিটি সার্টিফিকেটে একটি বড় ধরনের ভুল আছে। ‘কোথাও কোর্সের দিন, তারিখ-এমনকি সনও লেখা নেই।’ এর প্রেক্ষিতে মা’হাদু শাবাকাতিল ইলমিশ শারঈতে পিডিএফ সার্টিফিকেটগুলোসহ মেইল করি। মেইলের স্কিনসর্ট।

May be an image of text এর দুই ঘণ্টা পর তাঁরা ফিরতি মেইলে নিচের জবাবটি দেন। জবাবের স্কিনসর্ট।May be an image of ‎text that says '‎PM 11:26 0.1KB/s 34 pm 8:29 شبكة العلم الشرعي me to وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته الحمد نسأل الله ولكم العافية في الدارين الشهادات التي أرسلتها فنقول :فيها تم التلاعب بالشهادات ببرنامج الفوتوشوب نعرف مدرسیها بالمعهد ولم ونحمل من قام بهذا المسئولية الكاملة بالتزوير لشهادات .المعهد وحرر شعبان إدارة معهد شبكة العلم الشرعي للدراسة عن بعد الإرسال من البريد 10」 Windows :من ۔ddiqui Mahmud :إرسال 1442/08/01 :4803 إلى al3ilmchat@gmail.com: المو تحقیق رسمي عن طالب قرأ لديكم text quoted Show‎'‎(জবাবি মেইলের অনুবাদ) ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের ও আপনাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের আফিয়ত কামনা করি। যে-সার্টিফিকেটগুলো আপনি পাঠিয়েছেন, এর সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য হলো-সার্টিফিকেটগুলো আগাগোড়া ফটোশপের কারসাজি। এই কিতাবগুলো আমরা অ্যাকাডেমিতে পড়াই না; যেসব শিক্ষকের নাম উল্লেখ করা আছে, তাদেরকেও আমরা চিনি না। যিনি এই কাজ করেছেন, তাকে আমরা অ্যাকাডেমির সার্টিফিকেট জালিয়াতির জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী করছি। পহেলা শাবান, ১৪৪২ হিজরি।’

হতাশার বিষয় হলো-এতগুলো সার্টিফিকেট জাল করে একজন ভাই শত-শত ভাইবোনকে ধোঁকাগ্রস্ত রেখে অ্যাকাডেমি চালাচ্ছেন। আলিম সেজে জনগণের মনে শাইখের আসন দখল করে আছেন, অথচ ইলম শেখার একটা ভ্যালিড সোর্স দেখাতে পারছেন না। অনলাইনও না, অফলাইনও না।

প্রতারক মাইনুদ্দীন আহমেদের বিপক্ষে এসেছে এসব শত শত মন্তব্য। কিন্তু এর যুক্তিসংগত কোন জবাবই দিতে পারেননি তিনি।

এমডব্লিউ/

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ