আওয়ার ইসলাম: আয়ারল্যান্ডে ওয়ার্ক পারমিট সংক্রান্ত মামলায় জয় পেয়েছেন এক বাংলাদেশি অভিবাসী। দুই দফায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তার ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন প্রত্যাখান করার পর হাইকোর্টে গিয়ে এই মামলায় জয় পেয়েছেন প্রবাসী মো. লিটন। আদালত তার ওয়ার্ক পারমিট দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়কে। ৩ মার্চ আইরিশ হাইকোর্টের রায়ের নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে মে মাসে এক ব্রিটিশ নারীকে বিয়ে করেন ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশি মো. লিটন হোসেন।
২০১৫ সালের নভেম্বরে ওই দম্পতি আয়ারল্যান্ড যান বসবাসের উদ্দেশ্যে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে আয়ারল্যান্ড সরকারের আইন অনুযায়ী তাকে বসবাস ও কাজের অনুমতি হিসেবে স্ট্যাম্প-৪ পারমিশন দেয়া হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের পরিবারের সদস্য হিসেবে তাকে এই অনুমতি দেয় আইরিশ সরকার।
ইউরোপীয় নাগরিকদের অবাধ চলাচল নীতির অধীনে এই অনুমতির ফলে লিটন আয়ারল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজের অনুমতি পান। কিন্তু চার মাস পার না হতেই ওই ব্রিটিশ নারীর সঙ্গে লিটনের বিচ্ছেদ হয়। ব্রিটেনে ফিরে গিয়ে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন তার স্ত্রী। আয়ারল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কিলকেনি শহরের একটি হোটেলে চাকরি করেন লিটন; কিন্তু ইউরোপীয় নাগরিকের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। বাতিল না হলেও চলতি বছরের ২ নভেম্বর মেয়াদ পূর্তির পর সেটি যে আর নবায়ন করা হবে তা বুঝতে পেরে অভিবাসী হিসেবে নতুন করে ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করেন লিটন।
কারণ অভিবাসী হিসেবে ওয়ার্ক পারমিট না পেলে তিনি আর কাজ করতে পারবেন না। আইন অনুযায়ী, লিটনের স্ট্যাম্প-৪ পারমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর (২ নভেম্বর) থেকে চাকরি করলে তিনি ও তার চাকরিদাতা উভয়ই অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবেন। দেশটির আইনে এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। আবার ইইউ নাগরিক স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় এই স্ট্যাটাস নবায়নেরও সুযোগ নেই। উপরন্তু মেয়াদ পূর্তির আগেই যে কোনো দিন সরকার এটি বাতিল করতে পারে। যে কারণে তিনি নতুন করে ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করেন। কিন্তু দুই দফায় তার আবেদন প্রত্যাখান করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
এই সিদ্ধান্তের পক্ষে আইরিশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, যেহেতু লিটন একটি আইনের অধীনে দেশটিতে রয়েছেন এবং তার সেই স্ট্যাম্প-৪ স্ট্যাটাস এখনো বাতিল বা মেয়াদপূর্ণ হয়নি, তাই নতুন করে তাকে ওয়ার্ক পারমিট দিতে অস্বীকৃতি জানান মন্ত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে আইরিশ হাইকোর্টে যান লিটন ও তার আইনজীবী। অবশেষে মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিচারপতি অ্যান্থনি বারের আদালত এ বিষয়ে রায় দেয়। রায়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত স্থগিত করে লিটনকে ওয়ার্ক পারমিট দেয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।
রায়ের বিবরণে আদালত বলেছে, কোনো ব্যক্তির স্ট্যাম্প-৪ পারমিশন থাকলে তাকে ওয়ার্ক পারমিট দিতে আইনে কোনো বাধা নেই। যেহেতু তার আইরিশ রেসিডেন্সি পারমিট (আইআরপি) কার্ড রয়েছে এবং তিনি পর্যাপ্ত পরিমাণে উপার্জন করেন। এছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যক্তির অবস্থার বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে বলে আদালত মনে করছে। আদালত আরো বলেছে, বাদী যেহেতু ওয়ার্ক পারমিট পেলে তার স্ট্যাম্প-৪ স্ট্যাটাস ত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছে সেটিও বিবেচনায় নেয়া উচিত।
বাণিজ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাতিল করে লিটনের আবেদনটি পুনরায় যথাযথ কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এই মামলায় বাদীর যাবতীয় খরচ বহন করতেও মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়। আদালতের এই পর্যবেক্ষণের ফলে দেশটিতে প্রবাসীদের ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া আরও সহজ হবে বলে ভুক্তভোগীরা মনে করছেন। বর্তমানে ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছেন আয়ারল্যান্ডে। যাদের বেশির ভাগই কর্মজীবী। শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ীও রয়েছেন। ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যেসব প্রবাসীরা নানাবিধ সমস্যায় রয়েছেন এই রায় তাদের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
এমডব্লিউ/