আওয়ার ইসলাম: ২০০১ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১১টার দিকে রাজেশ্রী হলে পুলিশ হানা দেয়। সুরাটের এই হলে আব্দুল হাই এবং আরো ১২০ জন লোক অবস্থান করছিলেন। তাদের সবাইকে পুলিশ বিভিন্ন অভিযোগ গ্রেপ্তার করে। বেআইনি কার্যকলাপ এবং কঠোর সন্ত্রাস বিরোধী আইনে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদেরকে স্টুডেন্ট ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া (এসআইএমই)-এর সদস্য হিসেবে মিথ্যাভাবে চিহ্নিত করা হয়। এই সংগঠনটি ভারতে নিষিদ্ধ। সব মিলিয়ে ১২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের সবাই ছিলেন মুসলিম।
এইভাবে গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রায় সবাই জামিন পেয়েছেন ঠিক; কিন্তু তাদের বিচার চলেছে প্রায় দুই দশক ধরে। গত রোববার ১৯ বছরের বিচার শেষে সবাইকে নিরাপরাধ হিসেবে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই সুদীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় ১২৭ জনের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি এসআইএমআই ভারতের বিভিন্ন স্থানে বোমাবাজির জন্য দায়ী এবং পাকিস্তানের অস্ত্রধারী কোনো সংগঠনের সাথে তাদের সংযোগ আছে। এই সংগঠনের শত শত সদস্যকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু তাদের দাবি তারা শুধুই ভারতীয় মুসলিমদের ইসলামি জীবন ব্যবস্থা শিক্ষা দেওয়ার জন্য কাজ করে। প্রায় ২০ বছরের দীর্ঘ অগ্নীপরীক্ষার পর চলতি মাসের ছয় তারিখে সুরাত কোর্ট এক রায়ে বলেছে যে, অভিযোগকারিরা নির্ভরযোগ্য, অকাট্য ও সন্তোষজনক কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি, এমনকি এসআইএমআই-এর সাথে আব্দুল হাই বা অন্য কারো কোনো সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারেননি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না।
তাদের মধ্যে একজন আব্দুল হাই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এই মামলা আমার এবং আমাদের সবার জীবনে ও পরিবারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। আমাদের অনেকে সরকারি চাকরি হারিয়েছে, অনেকে আর কোনো চাকরিই পাননি জীবনে।
তিনি আরো বলেন, ২০০১ সালের ২৭ ডিসেম্বর আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ছিলাম। ২০১৫ সালে আমি একই পদ থেকে অবসরে যাই। এই দীর্ঘ সময়ে আমাকে কোনো পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া সরকারি চাকুরেরা অবসরের সময় যে ভাতা পায়, আমাকে সেটাও দেওয়া হয়নি।
২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে ভারতের বেশির ভাগ মুসলিম দেশটির পুলিশ কর্তৃক বৈষম্যের ভয় পান। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে অলাভজনক সংস্থা কমন কজ অ্যান্ড লোকনিটি। গবেষণাটির ফলাফলে বলা হয়েছে, ৪৭ শতাংশ ভারতীয় মুসলিম সন্ত্রাসবাদের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ভয় পান।
২০১৯ সালে একই প্রতিষ্ঠানের আরো একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ভারতের পুলিশ মুসলমান নাগরিকদের বিরুদ্ধে স্পষ্টত বৈষম্য করে। ভারতীয় পুলিশের অর্ধেক লোকবলই মনে করেন যে, “মুসলমানরা প্রকৃতিগতভাবেই অপরাধপ্রবণ”।
দক্ষিণ এশিয়ার মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা হিউম্যান রাইটস ডকুমেন্টেশন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক রাভি নাইর এ বিষয়ে বলেন, সত্য কথা হলো দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চললে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাদেরকে আসলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। একই সাথে যে পুলিশ সদস্যরা মিথ্যা মামলা সাজান, ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ করেন, তাদেরও কোনো বিচারের ব্যবস্থা নেই। এতেই বোঝা যায় বিচার প্রক্রিয়ায় জটিলতা আছে।
মানবাধিকার লংঘনের পরও পুলিশ এবং সরকারি কর্মীরা কোনো সাজা পান না। কিন্তু তাদেরকে অবশ্যই, সবার আগে, চাকরিচ্যুত করতে হবে, না হলে বিচার ব্যবস্থা ঠিক হবে না, এমন মন্তব্য রাভি নাইরের।
আসিফ শেখ অবশ্য বলছেন, তিনি ক্ষতিপূরণ চান না। তার চাওয়া হলো ভারতের মুসলিমরা যাতে অন্য মুসলিমদের ভালোর জন্য কাজ করেন।
তিনি বলেন, ভুয়া ও বানোয়াট মামলা মুসলমানদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি করেছে। শিক্ষা দেওয়ার আয়োজন থেকে যদি ২০ বছরর মামলা পড়তে হয়, তাহলে এটা কী মানে বোঝায়? এটা শুধু ভয় তৈরি করে। যে ভয়ের কারণে মুসলমানদের পক্ষে কেউ কথা বলে না।
-এটি