শায়খ আহমাদুল্লাহ
জনপ্রিয় ইসলামী স্কলার ও দাঈ
আবাসিক মাদরাসায় বলাৎকার এবং হেফজখানার বেদম প্রহারের ইস্যুই মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংসের জন্যে যথেষ্ঠ। এ দু'টি বিষয় এখন ইসলাম বিদ্বেষী মহলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। ‘স্কুলেও এসব হয়, মাদরাসার বদনাম বেশি হয়। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ এ জাতীয় মন্তব্য সমস্যাকে আরো প্রকট করবে। কোনো প্রকার ইতস্তত: না করে পরিস্কারভাবে এ ধরণের অনাচারের বিরুদ্ধে সবাইকে মুখ খুলতে হবে। তাহলেই সমাধানের পথ বের হবে এবং বিদ্বেষী মহলের অস্ত্রটি ভোঁতা হয়ে যাবে।
এদেশে সিনিয়র উলামাগন যে কোনো পরিস্থিতি অনুধাবন করতে অনেক দেরি করে ফেলেন। সমস্যা অনেক দুর গড়িয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁরা কোনো বিষয়ে সিরিয়াস হয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। সতুরাং সমস্যার সমাধানে জুনিয়রদেরই কথা বলতে হবে, যেন সিনিয়রদের টনক নড়ে।
এর আগে বলাৎকারের ঘটনা বন্ধে আমি সুনির্দিষ্ট ৭টি প্রস্তাবনা পেশ করেছিলাম। অমানবিক প্রহার বন্ধে আমার প্রস্তাব হলো সকল হিফজ মাদারাসাকে একটি বোর্ডের অধীনে এনে সকল শিক্ষকের জন্য বোর্ড কতৃক প্রশিক্ষণ গ্রহণে বাধ্য করতে হবে। প্রশিক্ষণের পরও কোনো শিক্ষক এমন কাজ করেছেন প্রমাণ হলে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং আজীবন যেন শিক্ষকতা করতে না পারেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি প্রতিষ্ঠানের কোনো গাফিলতি প্রমাণিত হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দিতে হবে।
এছাড়াও ভোর থেকে টানা রাত পর্যন্ত শুধু একটি সাবজেক্ট (হিফজ) পড়ানোর প্রচলিত পদ্ধতিতে সংস্কার আনতে হবে। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই ক্রেজি হয়ে যান। আরো কিছু করণীয় আছে।
কতৃপক্ষ ও সিনিয়ররা আন্তরিক হলেই মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে শকুনের থাবা ও অভ্যন্তরীণ অনাচার থেকে বাঁচানো সম্ভব ইনশা আল্লাহ।
এর আগে গতকাল তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি ‘কুরআনের শিক্ষার্থীকে প্রহারকারী শিক্ষক নয়, জল্লাদ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
ভিডিওতে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে যতক্ষণ পর্যন্ত একজন লোক বালেগ না হয় তথা নাবালেগ থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে শিশু বলেই গণ্য থাকে। আর কোনো শিশুর প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশ-নিষেধ, শাস্তিমুলক কোন বিধান বা দন্ডবিধি প্রযোজ্য হয় না। এ ব্যাপারে সারাবিশ্বের ওলামায়েকেরাম একমত।
যেখানে সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টির প্রতি এরকম দৃষ্টিভঙ্গি, সেখানে মা-বাবা অথবা অভিভাবক অথবা শিক্ষক বা কারোর জন্য কোনো শিশুর প্রতি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কোন অধিকার নেই। এজন্য শিশুদের প্রতি তা’জীরের (শাস্তি) কোন কথা ইসলাম বলে না। তবে তা’দীব তথা আদবের কথা, তাদেরকে শিষ্টাচার শেখানো, প্রশিক্ষণ দেওয়া, শৃংখলা শিখানো-এগুলোর কথা ইসলাম বলে।
বিশেষ করে একজন শিক্ষকের শিক্ষার্থীর প্রতি কী ধরনের আচরণ হওয়া উচিত, সে ধরনের নির্দেশনা পাই আমরা সূরা আর-রহমান থেকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, ‘যিনি রহমান। যিনি পরম দয়ালু। তিনি মানবজাতিকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন।’ এখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানবজাতির কোরআনের শিক্ষক হিসেবে নিজে অবতীর্ণ হয়েছেন। নিজেকে পেশ করেছেন বা উপস্থাপন করেছেন। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শিক্ষক হিসেবে নিজের যে গুণটি উপস্থাপন করেছেন সেটি হলো, ‘তিনি পরম দয়ালু এবং অত্যান্ত মায়াময়।’
এখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আরো যে গুণবাচক নাম রয়েছে, ‘অধিক জ্ঞানী’, ‘অত্যন্ত জ্ঞানী’-এসকল গুণবাচক নামগুলোর তিনি প্রয়োগ না করে ‘দয়ালু’ গুণবাচক নাম তিনি এক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন। তিনি এখানে এই দয়ালু গুণবাচক নাম ব্যবহার করে এ বার্তা দিয়েছেন যে, যারা শিক্ষক হিসাবে অবতীর্ণ হবে তাদেরকে দয়ালু হতে হবে। তাদের অন্তরে থাকতে হবে মায়া। যেমনটি আল্লাহ তাআলা তার নিজের ক্ষেত্রে উল্লেখ করেছেন।
অতএব একজন কোরআনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে বেদম প্রহার করতে পারেন না। অমানবিক আচরণ করতে পারেন না। যদি করেন তাহলে তিনি কোরআনের শিক্ষক নয় বরং জল্লাদ।
আবু দাউদ শরীফের রাসূলে করিম সা. ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ করো। আর তারা যখন দশ বছর বয়সে উপনীত হয় তখনও যদি নামাজ আদায় না করে, তাহলে শাসনমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করো। অর্থাৎ প্রহার করো। আর এ প্রহারটা হবে শাসনমূলক। আজকাল প্রহার করার নামে যে দৃশ্য আমরা দেখতে পাই এখানে সেটি মোটেও বুঝানো হয়নি।
ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহমদ, ইমাম মালেক রহ.সহ সকল উলামায়ে কেরাম বা স্কলারগণ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, সর্বোচ্চ শিশুকে তিনটি বাড়ি দেয়া যেতে পারে। নামাজ না পড়ার কারণে এবং সেটি শাস্তিমুলক নয় সেটি শাসনমূলক। শুধুমাত্র তাকে নামাজের প্রতি গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এবং তার গায়ে দাগ পড়তে পারে, সে অনেক বেশি ব্যথা পেতে পারে, এরকমভাবে কোন ভাবেই প্রহার করা যাবে না।
এমডব্লিউ/