মোস্তফা ওয়াদুদ: পবিত্র কুরআনুল কারীমের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ কিতাব বুখারি শরিফ। যা পৃথিবীব্যাপী প্রসিদ্ধ।
বুখারি শরিফের মাঝে নবি করিম সা. এর জবানে বর্ণিত হাদিস জমা করা হয়েছে। জমা করেছেন শায়খ ইসমাঈল বুখারি রহ.।
প্রিয় নবি সা. এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র কুরআনুল কারীম। আর কুরআনুল কারীম শুধু আলফাজের (শব্দ) নামই না। বরং আলফাজ এবং অর্থের সমন্বয়ের নাম কুরআনুল কারীম।
যে শব্দ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হজরত জিবরাঈল আ. কে বলেছেন। জিবরাঈল আ. প্রিয় নবি সা. এর কাছে সেভাবেই নিয়ে এসেছেন। এরপর সে শব্দই নবি করীম সা. সাহাবায়ে কেরামকে বর্ণনা করেছেন। এর মাঝে কোনো পরিবর্তন পরিবর্ধন হয়নি।এটাকে বলা হয় ওহীয়ে মাতলু।
যেভাবে জিবরাঈল আ. থেকে নবিজি শুনেছেন। যেভাবে নবি থেকে সাহাবায়ে কেরাম শুনেছেন। যেভাবে সাহাবা থেকে তাবেয়ী শুনেছেন। যেভাবে তাবেয়ী থেকে তাবে-তাবেয়ীন শুনেছেন। এভাবে প্রায় ২০০ বছর পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা ফরদান ফরদান মাহফুজ রেখেছেন। এরপর কিতাব আকারে সেটা মাহফুজ হয়।
যার ফলে প্রায় ১৪ শ বছর অতিক্রম করে ফেলেছে। কিন্তু প্রিয় নবি কিভাবে ঘুমাতেন? ঘুমানোর সময় কি করতেন? কি কাজ করে ঘুমাতেন? ঘুমানোর পরে কি করতেন? ঘুম থেকে কি বলে উঠতেন। কিভাবে ঘুম থেকে উঠতেন? এসব কিছু আমাদের সামনে চলে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, মানুষ মৃত্যুর পর যখন তার আমলনামা সামনে পেশ করা হবে। তখন সে আফসোস করতে থাকবে। বলবে এটা কি আমলনামা? এখানে ছোটো গুনাহও ছাড়া হয়নি। বড় গুনাহও ছাড়া হয়নি। বুখারী শরিফের মাঝে এ বিষয়টাই বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমলের যখন কোনো জিসম নেই। তখন ওজন কিভাবে হবে? যে আমলের নাম আমলে সালিহা। সেই আমলের ওজন আলাদা। আর যেটা আমলে সালিহা না। তার ওজন আলাদা।
তিনি বলেন, এটা শেষ হাদিসের দরস। আমি সর্বদা বলে থাকি যে, কোনো বিশেষ ব্যক্তি দ্বারা বুখারী শরীফ পড়ানো ঠিক নয়। কারণ যিনি পাখীর বাচ্চার মতো আদর করে সারাবছর আপনাকে পূর্ণ কিতাব পড়িয়েছেন তিনিই এটার হকদার। তবে আমাকে বারবার হুকুম করার কারণে আমি নির্দেশ পালন করেছি।
সবশেষে তিনি বলেন, যে যতবেশি কুরআন তেলাওয়াত করবেন। তিনি ততবেশি আল্লাহর নৈকট্যলাভ করবেন। মৃত্যুর পর জান্নাত মিলবে। কেয়ামাতের দিন রাব্বুল আলামিন বলবেন, তুমি কুরআন পড়তে থাকো। যেখানে গিয়ে তোমার কুরআন পড়া শেষ হবে সেখানেই তোমার জান্নাত।
সবশেষে তিনি আকাবিরে দেওবন্দের নকশে কদমের উপর চলার শর্তে বিদায়ী ছাত্রদের হাদিসের সনদ দেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) বাদ মাগরিব রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসায় বুখারী শরীফের শেষ হাদিসের দরস শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
বারিধারার খতমে বুখারীতে বসেছিলো দেশসেরা আলেমদের মিলনমেলা। এবছরই প্রথম মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহ. কে ছাড়া বারিধারার খতমে বুখারী সম্পন্ন হলো। আল্লামা কাসেমী গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন। বারিধারার খতমে বুখারীতে এ বছর ২১৪ জন ছাত্র দাওরায়ে হাদিস, ৪৮ জন ছাত্র ইফতা ও ২৩ জন ছাত্র হাফেজে কুরআন হয়ে সম্মাননা পাগড়ী গ্রহণ করে।
আজ বাদ আছর মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা মাসউদ আহমদের পরিচালনায় তারা পাগড়ী গ্রহণ করেন। এ সময় তাদের মাথায় সম্মাননা পাগড়ী তুলে দেন মাদরাসার শায়খুল হাদিস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদের আহবায়ক মুফতী মুনীর হোসাইন কাসেমী, শায়খুল আদব মাওলানা আবুল হাসান মোহাম্মাদ আলাউদ্দীন, মুফতী ইকবাল হোসাইন কাসেমী, মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ, মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, মুফতী জাবের কাসেমী বিন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীসহ মাদরাসার অন্যান্য আসাতিজায়ে কেরাম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সিলেটের আজাদ দীনি ইদারার সভাপতি আল্লামা শায়খ জিয়াউদ্দীনসহ দেশসেরা বিশিষ্ট আলেমগণ।
-এটি