আওয়ার ইসলাম: গবেষণায় জালিয়াতির দায়ে গত জানুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমানকে সহকারী অধ্যাপক পদে অবনমন করে কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় এতদিন চুপ থাকলেও এবার মুখ খুলেছেন এই অধ্যাপক। অভিযোগ করে বলেছেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিহিংসা এবং শিক্ষক রাজনীতির শিকার।
আজ সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র উদঘাটনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে নিজের পক্ষে দালিলিক প্রমাণ তুলে ধরে সামিয়া রহমান বলেন, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার নামে অভিযাগ করে বলা হয় যে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সোশ্যাল সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত 'অ্যা নিউ ডাইমেনশন ইন কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: অ্যা কেস স্টাডি অব কালচারাল ইম্পেরিয়ালিজম’ প্রবন্ধটি শিকাগো জার্নালে প্রকাশিত মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ প্রবন্ধটির অংশ বিশেষের অনুকরণ। এ নিয়ে জার্নালের অ্যাডমিনিস্ট্র্যাটিভ অ্যাসিসটেন্ট অ্যালেক্স মার্টিন চিঠির মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বলে জানানো হয়।
সেই প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং আমার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে মিডিয়া ট্রায়াল চালিয়ে শাস্তির সুপারিশ করেছে, ডিমোশন দিয়েছে। ওই চিঠিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুয়া ও বানোয়াট।''
তিনি দাবি করে বলেন, শিকাগো জার্নাল থেকে অভিযোগ করে এই ধরনের কোনো চিঠি কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পাঠানো হয়নি এবং অ্যালেক্স মার্টিন নামে সেই জার্নালে কেউ কাজও করে না। এমনকি শিকাগো ইউনিভার্সিটি এবং শিকাগো প্রেসেও এই নামে কেউ নেই। এ তথ্য জানিয়েছেন শিকাগো জার্নালের এডিটর ক্রেইগ ওয়াকার।
চিঠিটি সম্পূর্ণভাবে দেশে বসেই তৈরি করা হয় বলে এ সময় অভিযোগ করেন আলোচিত এই মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ ও অপরাজেয় বাংলার সদস্য সচিব এইচ রহমান মিলুসহ সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি ঢাবির মাসিক সিন্ডিকেট সভায় অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে সামিয়া রহমানসহ আরো দুই জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও মাহফুজুল হক মারজান যৌথভাবে একটি গবেষণা প্রবন্ধ লিখেন। ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শীর্ষক আট পৃষ্ঠার প্রবন্ধটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে অভিযোগ ওঠে, গবেষণা প্রবন্ধটিতে ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল করা হয়েছে।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগে নকলের কথা ঢাবিকে জানায় ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। এ ছাড়া বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম' গ্রন্থের কয়েকটি পাতাও হুবহু নকল করেন তারা।
সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাবির তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তারা গত বছর প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তির সুপারিশ করা হয়নি।
পরে বিষয়টি নিয়ে আইনি সুপারিশ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ এফ এম মেজবাহউদ্দিনকে দায়িত্ব দেয়। সেই প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেটের সভায় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট উত্থাপন করা হয়েছে।
-এটি