আওয়ার ইসলাম: সম্প্রতি বারুইগ্রাম মাদরাসায় যান দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। বারুইগ্রাম মাদরাসাটি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানায় অবস্থিত।পূর্ণ নাম জামিয়া আরাবিয়া আহাদিয়া বারুইগ্রাম মাদরাসা।
জানা যায়, কিছুদিন পূর্বে এ মাদরাসার মাহফিলে দাওয়াতি মেহমান ছিলেন মাওলানা হাবীবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী। কিন্তু বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে মাদরাসার কমিটি তাকে মাহফিলে আসতে নিষেধ করেন। এতে ছাত্রদের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করতে থাকে। এরপর মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ মাদরাসায় আগমন করলে সে চাপা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। মাদরাসায় সৃষ্টি হয় অস্থির পরিবেশ। অশান্ত হতে থাকে মাদরাসার পরিস্থিতি। মাদরাসার নাজমুল ইসলাম নামের এক ছাত্র উক্ত ঘটনাকে ফেসবুকে পোস্ট দিলে দেশব্যাপী জানাজানি হয় বিষয়টি। বিতর্কিত পোস্ট দেয়ার অপরাধে নাজমুলকে বহিস্কারও করা হয় মাদরাসায় থেকে।
এরপর চলমান এ উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করতে জামিয়া আরাবিয়া আহাদিয়া বারুইগ্রাম মাদরাসার প্যাডে এক প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়,
‘অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানানাে যাচ্ছে যে, বিগত ১৭ জানুয়ারি ২০১১ ইং তারিখ, রবিবার ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমাম আল্লামা ফরিী উদ্দীন মাসউদ সাহেব ইসলাহী পােগ্রামের উদ্দেশ্যে কেন্দুয়া নেত্রকোনা যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে জামিয়া আরাবিয়া আহাদিয়া বারুইগ্রাম মাদরাসা নান্দাইল, মােমেনশাহী এর মুহতামিমসহ আসাতিজায়ে কেরাম এবং অত্র জামিয়া কমিটির সভাপতি ও উপস্থিত সদস্যবৃন্দের জোড় অনুরােধে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউস সাহেব মাদরাসার অফিসে তাশরিফ আনেন। অতপর উপস্থিত সকলেই হুজুরের কাছে দােয়ার আবেদন করেন। দোয়ার উদ্দেশ্যে সকল ছাত্রকে মসজিদে একত্র করা হয়।
আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব মাদরাসার অফিস থেকে মসজিদে যাওয়ার পথে একটি মহল আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব ও মাদরাসার সুনাম-সুখ্যাতি নষ্ট করার জন্য হৈচৈ করে পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করে। অতপর আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব ছাত্র-শিক্ষক ও উপস্থিত সকলকে নিয়ে দোয়া করে বিদায় নেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাজমুল ইসলাম নামের ফেসবুক আইডি হতে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব ও মাদরাসার সুনাম-সুখ্যাতি নষ্ট করার লক্ষে মিথ্যা, বানােয়াট, আপত্তিকর ও ভিত্তিহীন পােষ্ট করা হয়। এতে আমরা সকল শিক্ষকবৃন্দ ও কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দ খুবই দুঃখিত। উক্ত মিথ্যা অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পরিশেষে অপপ্রচারকারী এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোড় দাবি জানাই।
এদিকে মাদরাসার মুহতামিম মুফতী আব্দুল্লাহ আল-মাদানী আওয়ার ইসলামকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন, ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি মিথ্যা। তবে মামলা করা হবে এমন একটি বিষয় চলমান ছিলো। কিন্তু আজ আমরা জানতে পারলাম মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটি এখন আর চলমান থাকবে না। যে ছাত্রটি ফেসবুকে এমন স্টাটাস দিয়েছে তার বহিস্কারাদেশ প্রথ্যাহার করা হয়েছে ও তাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
এর আগে অনুষ্ঠিত মাদরাসার মিটিংয়ে ছাত্রদের পক্ষ থেকে চার দফা দাবী পেশ করা হয়। তাতে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো ছিলো এমন, ১. আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের বিষয়ে যে ছাত্র ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার কারণে বহিস্কার করা হয়েছে তাকে অচিরেই মাদরাসায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
২. জমহুর উলামায়ে কেরাম আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত কোনভাবেই মাদরাসায় আসতে না দেয়া।
৩. কমিটির কতক সদস্য (বিশেষত বরফ ব্যবসায়ী আব্দুল হেকিম, দারোগাসহ যারা মুহতামিমকে বাধ্য করেছে ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে মাদরাসায় আনতে তাদের চিরস্থায়ী কমিটি থেকে বহিষ্কার করা।
৪. অবিলম্বে মাদরাসার উস্তাদ ও ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
মাদরাসার মুহতামিম মুফতী আব্দুল্লাহ আল-মাদানী আরও জানান, আজ মজলিসে শূরার বৈঠক শেষে ছাত্রদের সকল দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে মাদরাসায় শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার সম্ভাবনাও এখন নেই বলে মনে করেন মাদরাসার এ মুহতামিম।
এমডব্লিউ/