আবু তালহা তোফায়েল।।
আজ যুবসমাজের অবক্ষয়ের কারণে জাতি হতাশায় নিমজ্জিত। যুবসমাজের অবক্ষয় জাতির বুকে গভীর ক্ষত তৈরি করছে। গোটা সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে অনিশ্চিত অন্ধকারের দিকে। আর এই সমস্যার প্রতিকার না হলে দেশ, জাতি ও ধর্ম ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হবে। আজ যুবসমাজ মাদকাসক্ত, প্রতিটি বর্ডারে, প্রতিটি রাস্তায় রাস্তায় চেকপোস্ট; টার্গেট একটাই যে, যুবসমাজকে মাদকাসক্ত হতে দেওয়া যাবে না। যাগায় যাগায় বিট পুলিশিং সভা সমাবেশ চলছে। কোথায় মাদক সেবনকারী কমে আসবে, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। কারণ একটাই যে, যেভাবে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে মাদক থেকে ফিরিয়ে আনা যাবে, সেভাবে রাষ্ট্র কাজ করছে না।
আজ রাষ্ট্রে নগ্ন-অর্ধনগ্ন নাটক সিনেমার ওয়েবসাইটগুলো ওপেন। সংস্কৃতির নামে অশ্লিল নাটক-সিনেমা চালিয়ে অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলেই এতো এতো পদক্ষেপ নিয়েও যুবসমাজকে মাদক থেকে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। যত দিন যাচ্ছে, ততই দিহান-আনুশকা তৈরী হচ্ছে, ঐশীর মত সন্ত্রাসী মেয়ে জন্ম নিচ্ছে। কারণ সংস্কৃতির নামে অশ্লিলতার প্রমোট করা হচ্ছে। অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা আর বোতল টানা শিখানো ছাড়া কিছুই নেই নাটক সিনেমায়।
গত ১৭ জানুয়ারি, রবিবার সিলেটের মোগলাবাজার থানাধীন সিরাতুন নাবী সা. বাস্তবায়ন কমিটির সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা লালবাগ মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি সাখাওত হোসাইন রাজি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন যে, রাষ্ট্র আজ কার তাবেদারী করছে? কাকে খুশী করার চেষ্টা করছে? ওয়াজ মাহফিলগুলোতে বাধা দিয়ে দেশের প্রতিটি উপজেলায় সিনেমা হল তৈরী করার জন্য এক হাজার কোটি টাকার বাজেট হাতে নেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে।
আজ মোবাইলের স্কিনে অশ্লীল সিনেমা দেখে যদি রাষ্ট্রে এতো মাদক কারবারি, ধর্ষণ, খুন, শ্লীলতাহানি বৃদ্ধি পায়, তাহলে বুঝে নাও প্রতিটি উপজেলায় সিনেমা হল তৈরী হলে প্রতিটি উপজেলায় ধর্ষণ আর বোতল টানা বৃদ্ধি পাবে। ইউরোপীয় রাষ্ট্রের মতো রাস্তায় প্রকাশ্যে ব্যভিচার হবে।
তিনি যুবসমাজকে আহ্বান করে বলেন, হে যুবক ভাইয়েরা, তুমি যদি তোমার যৌবনকে হেফাজতে রাখো, তাহলে তোমার সন্তানও হেফাজতে থাকবে। তোমরা কি কেউ তোমার মা,বোন,স্ত্রী ও মেয়েকে নগ্নভাবে দেখতে চাও? জেনে রেখো, তুমার সিদ্ধান্তের উপর ডিফেন্স করবে তোমার পরিবার কীভাবে থাকবে। তোমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হও, তাহলে সিনেমা হল তো দূরের কথা, সিনেমা হলের লাল বাতি জ্বলে যাবে। তোমরা যুবকরা যদি তোমাদের পরিবারকে হেফাজতে রাখতে চাও আর সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা থেকে বিরত থাকো, তাহলে তারা যতই সিনেমা হল তৈরী করে না কেনো, সিনেমা হলে কুকুর ঘুমাবে, কিন্তু একটা পোকাও পাবে না সিনেমা দেখার জন্য।
তিনি সরকার দলীয় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, কাল কিয়ামত দিবসে সবার আগে আল্লাহ আপনাদের ধরবে, যদি আপনারা আপনাদের এলাকায় সিনেমা হল তৈরী করতে বাঁধা না দেন। জেনে রেখো, এটা আপনার এবং আপনার পরিবারকে পতিতা বানানোর ভিনদেশীয় গভীর ষড়যন্ত্র। এই রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ইসলামের ঝাণ্ডা উড়ছে, আর এই মিশন দামানোর জন্যই এই হিংস্র উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
হে যুবসমাজ! আগামীর ভবিষ্যৎ তোমরাই। তোমাদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটানোর জন্যই আজ এই ফন্দী, কাল সেই ফন্দী এরকম হাজারো ষড়যন্ত্র আসবে। তোমরা আলেমদের সাথে থাকো; খোদার কসম! আলেমরা তাঁদের পেটের ধান্ধায় কিছু বলে না, এই জাতি, এই যুবসমাজকে সঠিক পথে শান্তির সুগম পথে চলার জন্যই কথা বলে।
আলেমদের কথা বলার সুযোগ করে দিও, তোমাদের পথ তাঁরা দেখিয়ে দিবে৷ যে যতই বলুক ২২ বছর থেকে তাহাজ্জুদ পড়েছি, নিজে নিজে আলিফ বা শিখে মাওলানা হয়েছি কিংবা ৪ বার কুরান খতম করেছি, জেনে রেখো হে যুবক, তোমার পা পিছলানোর জন্যই সব পন্থা অবলম্বন করছে। তুমি সঠিক পথে চলতে হবে। তোমার নৈতিক অবক্ষয় ঘটানো যাবে না। আগামীর বাংলাদেশ তোমার হাত ধরে চলবে, আগামীতে এই দ্বীনের ঝাণ্ডা তোমাকেই ধরতে হবে। তোমার নীতি-নৈতিকতা তোমাকেই ধরে রাখতে হবে।
মুফতী সাখাওত হোসাইন রাজি সর্বশেষ সিরাতুন নাবী সা. বাস্তবায়ন কমিটিকে ৩টি মিশন চালু করার জন্য বলেন; ১) এই এলাকার প্রতিটি মসজিদে বয়স্কদের কুরান শিক্ষার ব্যবস্থা করা। ২) প্রতিটি স্কুল,কলেজ বা যেকোনো পেশাদারী যুবককে কমপক্ষে ১০টা সূরা শুদ্ধভাবে শিখানো। ৩) সর্বশেষ এলাকায় যুবকদের নামাজ পড়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া তথা তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া।
-এটি