কাউসার লাবীব: গাজীপুরের শ্রীপুরে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে জুতা দিয়ে পিটিয়েছে ওয়ার্ড আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। এর প্রতিবাদে শনিবার মসজিদের মুসুল্লীরা সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মসজিদটি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের উত্তর চকপাড়ায় অবস্থিত।
মিছিল শেষে মসজিদের সভাপতি মো. আবু সায়েম গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাত ১১ টার সময় হুজুর তাঁর রুমেই ঘুমিয়ে ছিলেন। পাশের বাড়িতে গরু জবেহ করার জন্য ইমাম সাহেবকে ডাকছিলেন এক যুবক। কিন্তু হুজুর উঠছিলেন না এবং কোনো সাড়া শব্দও করছিলেন না। এমন সময় পাশের রুমেই শুয়ে থাকা ওয়ার্ড আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম হুজুরকে চিল্লাইয়া বকা শুরু করেন।
মসজিদের সভাপতি বলেন, এক পর্যায়ে হুজুরের ঘুম ভাঙলে তিনি বলেন ‘দেখুন সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছি। তাছাড়া গতরাতেও অনুষ্ঠানের কারণে ঘুমাতে পারিনি। কেনো ডাকছেন বলুন।’ এ কথা শুনে রফিক বকছে আর বলছে, ‘আপনাকে কি টাকা দিয়ে রাখেনি, ডাকলে উঠেন না কেনো?’ হুজুর বললেন, আমি শুনিনি, কিভাবে উঠবো? আর আপনি এভাবে বকছেন কেনো? আমি আপনার কাছে জবাব দিতে রাজি নই। প্রয়োজনে আমার মসজিদ কমিটির কাছে জবাব দিবো। দয়া করে এভাবে বকবেন না। এটুকু বলতেই রফিক পায়ের জুতা খুলে ইমাম সাহেবকে বেদারক পিটাতে শুরু করেন। পরে হুজুর দৌড়িয়ে নিরাপদ স্থানে যান।
তিনি আরো বলেন, এই ঘটনা এলাকার আরো কয়েকজন দেখেছে এবং রাতেই আমাকে ফোনে জানিয়েছে। ফজরের নামাজ পরে আমি মুসুল্লিদের সাথে বসি এবং এর সত্যতা পাই। কাজেই আমরা এর কঠোর বিচার দাবী করছি। হুজুর অনেকদিন ধরেই আমাদের মসজিদের ইমাম হিসেবে রয়েছেন। তিনি খুব ভালো মানুষ। আইনি বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে মসজিদের ইমাম মুফতি আব্দুল মজিদ জানান, কোনো অপরাধ না করে এভাবে কেউ আমাকে জুতা দিয়ে পিটাবে। কিভাবে সহ্য করবো? রফিক আমাকে শুধু জুতা দিয়ে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি; আজকে সকালেও হুমকি দিয়েছে, আমাকে নাকি জুতার মালা গলায় পরিয়ে রাস্তায় ঘুরাবে। মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি স্থানীয় মারকাযু সুন্নাতিন্নাবী (সা:) মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করি। অনেক শিক্ষার্থীদের পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন শিক্ষা দিই। আমি কিভাবে মুখ দেখাবো?
তিনি বলেন, প্রথমে ঘটনাটি আমি কাউকে বলিনি। যারা ঘটনাস্থলে ছিলো তারাই সভাপতিকে জানিয়েছেন। আলেম সমাজ ও আমার ছাত্রদের কাছে আমি কিভাবে মুখ দেখাবো? আল্লাহর রাসূলকে ভালোবেসে মুখে দাঁড়ি রেখেছি। ইসলাম প্রচারে নিজেকে উৎসর্গ করেছি। সেই দাঁড়ি রাখা মুখে কিভাবে জুতা মারলো, বলতে পারবেন?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ড আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, গতরাতে হুজুরের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়েছে। কিন্তু গায়ে হাত দিইনি। তাছাড়া এর জন্য রাতেই হুজুরের সাথে স্যরি বলে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছি। এলাকায় আমার বিপক্ষের কেউ কেউ এটা নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে, সকালে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিষয়টি জটিল করেছে। অথচ আমি রাতেই শেষ করেছি।
‘হুজুরকে কিছু করেননি বা মারেননি তাহলে স্যরি বলেছেন কেনো?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে রফিক বলেন ওই তো একটু খারাপ ব্যবহার করেছিলাম তাই ক্ষমা চেয়েছি।
রফিকুল ইসলাম যদিও এখন বিষয়টি অস্বীকার করছে। কিন্তু বিষয়টি সত্য। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মী সোলাইমান মোহাম্মদ আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমি নিজে গিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেছি। আমার কাছে এর ভিডিও আছে।
-এটি