আওয়ার ইসলাম: মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদিসহ ৬টি দেশে বগুড়ায় উৎপাদিত সবজি রপ্তানি হচ্ছে। সেখানে অবস্থানরত বাঙালিদের কাছে বগুড়ার কাঁচা সবজি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এ অবস্থায় স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি গত বছর বিদেশের বাজারে প্রক্রিয়াজাত করে সবজি রপ্তানি হয়েছে ১১ হাজার মেট্রিক টন। চলতি শীত মৌসুমে এবার ২০ হাজার মেট্রিক টন বিদেশের বাজারে বগুড়ার সবজি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শিবগঞ্জ উপজেলায় আলু সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করে ফলন পাওয়া যাবে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন। আর আলু বাদে মোট সবজি চাষ হয়েছে ১৭০০ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি ফলন ধরা হয়েছে ৩০ মেট্রিক টন।
সেই হিসাবে শুধু একটি উপজেলাতেই প্রায় ৫১ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হবে। যদিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও উপজেলায় সবজি উৎপাদন হবে।
আলুর হিসাব ধরে মোট সবজি উৎপাদন হবে সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন। উপজেলার মহাস্থান সবজির হাট থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক বিভিন্ন সবজি পরিবহন করে থাকে। এর সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের বাজারেও বগুড়ায় উৎপাদিত সবজি বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়ার শিবগঞ্জের সবজি বিক্রি হচ্ছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও সৌদি আরবের বিভিন্ন অঞ্চলের বাংলাদেশিদের মাঝে। গত বছর এই ছয়টি দেশে প্রক্রিয়াজাত করে মোট সবজি রপ্তানি হয়েছে হয়েছে ১১ হাজার মেট্রিক টন। চলতি শীত মৌসুমে এবার ২০ হাজার মেট্রিক টনের চাহিদা পড়েছে। এই চাহিদা আরও বাড়তে পারে।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বগুড়ার প্রতিনিধি মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর সাগর হোসেন জানান, ঢাকার একটি এগ্রো ফার্ম তার মাধ্যমে বগুড়া থেকে সবজি ক্রয় করে থাকে। পরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সেই সবজিগুলো চট্টগ্রামে পাঠান। সেখান থেকে জাহাজে করে বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষকদের ন্যায্য মূল্য প্রদান করা হচ্ছে।
বাজারে বাঁধাকপি ১৫ টাকা কেজি হলে স্থানীয় কৃষকদের প্রদান করা হচ্ছে ১৭ থেকে ১৮ টাকা কেজি। আবার আলুর দাম যদি ৩৫ টাকা হয় তবে দাম দেওয়া হচ্ছে ৩৮ টাকা কেজি। পাইকারি বাজার থেকে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি দামে কৃষকের কাছ থেকে ভালো মানের সবজি ক্রয় করা হচ্ছে। বর্তমানে বিদেশের বাজারে বগুড়া থেকে আলু, বাঁধাকপি, গাজর, ফুলকপি পাঠানো হচ্ছে। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার জানান, ঢাকার মাসওয়া এগ্রো লি. নামের একটি প্রতিষ্ঠান কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি চার থেকে পাঁচটি সবজি কিনে প্রতিনিধির মাধ্যমে বিদেশের বাজারে বিক্রি করছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় শীত (রবি) ও গ্রীষ্মকালীন (খরিপ) সবজি চাষাবাদ করা হয়। গ্রীষ্মকালীন সবজি উত্তোলন শেষ হয়েছে। মাঠে মাঠে এখন শীতকালীন সবজির ফলন চলমান রয়েছে। চাষিরা বাঁধাকপি, মুলা, ফুলকপি, পালং শাক, সরিষার শাক, মুলা শাক বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। জেলায় চলতি বছর চাষের জন্য মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৮১৩ হেক্টর। শীত সবজি চাষাবাদ চলমান থাকায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে।
চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। এর আগে গত ২০১৮ সালে বগুড়া জেলায় রবি মৌসুমে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়। আর ফলন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন। আর ২০১৯ সালে রবি মৌসুমে জেলায় ১২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে রকমারি সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।
যা থেকে ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। বগুড়ার ১২টি উপজেলার মধ্যে সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, শিবগঞ্জ, সারিয়াকান্দি ও গাবতলী উপজেলা সবজি এলাকা হিসেবে পরিচিত। এসব উপজেলায় বছরের ১২ মাসই রকমারি সবজি ফলান কৃষকরা।
-এটি