আওয়ার ইসলাম: জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর, স্বজন-ডাক্তারদের মধ্য ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রোগীর স্বজন ডাক্তার পুলিশসহ ১০ জন আহত হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে পৌর শহরের ইকবালপুর আহলে হাদিস জামে মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা করিমন নেছা (৫৫) নামে এক মহিলা মসজিদের দ্বিতীয় তলা থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন। আহত করিমনকে তার স্বজনরা জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
রোগীর ভাতিজা শহিদুল জানান, জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করেন। পরে স্বজনরা আহত করিমন নেছাকে ওয়ার্ডে নিয়ে যায়। আহত রোগীকে মহিলা ওয়ার্ডে নিয়ে গেলে সেখানে অক্সিজেন সাপ্লাই না থাকায় পাশের পুরুষ ওয়ার্ডে নিয়ে যায়। সেখানেও অক্সিজেন না থাকার কারণে আহত করিমন নেছাকে আবার নিচতলায় জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার রোগীর কাছে আসতে বিলম্ব করে। পরে আহত করিমন নেছা মারা যায়। পরে মৃত রোগীর স্বজনদের সঙ্গে ডাক্তার ও ইন্টার্ন ডাক্তারদের তর্ক-বির্তক হয়। এ ঘটনায় জরুরি বিভাগের আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক চিরঞ্জীব সরকার ও রোগীর স্বজন শহিদুল ইসলাম (৪২), নিহাদ (১৭) আহত হন।
মৃত করিমন নেছা পৌর শহরের ইকবালপুর এলাকার মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী। আহত শহিদুল ইসলাম একই এলাকার মৃত আব্দুর রহিমে ছেলে আর আহত নিহাদ মৃত করিমন নেছার মেয়ের ঘরের নাতি। পরে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। এরপর স্বজনরা লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ইন্টার্ন ডাক্তাররা মৃত করিমন নেছার মেয়ের জামাই ও মাদারগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মির্জা গোলাম কিবরিয়ার ম্যানেজার এবং পৌর শহরের ৩নং আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমানের উপর হামলা চালায়।
হামলায় সাইদুর রহমান আহত হয় এবং তার সাথে থাকা মেয়র মির্জা গোলাম কিবরিয়ার মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ডাক্তারসহ আট ইন্টার্নি ডাক্তারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হাসপাতালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আহত চিরঞ্জীব সরকার জানান, রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি দেয়া হয়। ভর্তির সময় রোগীর অবস্থা ভালো না থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুরে নিতে হতে পারে। পরে তারা রোগীকে ওয়ার্ডে নিয়ে যায়। সেই ওয়ার্ডে অক্সিজেন সাপ্লাই না থাকায় রোগীর স্বজনরা রোগীকে নিচে নিয়ে আসে এবং হট্টগোল শুরু করে। পরে বাইরে বের হয়ে রোগীকে দেখি। রোগীর স্বজনরা জরুরি বিভাগের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ও আমাকে লাঞ্ছিত করে।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম খান জানান, হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডাক্তার ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। হাসপাতালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।
-এএ