মাওলানা মুহাম্মদ কালিম সিদ্দিকী।।
বিখ্যাত আরবি সাহিত্যিক শায়েখ সুলাইমান আল জিলানির বর্রণা করা একটি ঘটনা আমার হৃদয়ে আটকে আছে। তিনি বলেন, একবার তিনি গাড়িতে করে তার আরো দুইজন আলেম সাথী নিয়ে সফরে রওনা করেন।এক জায়গায় রাস্তার উপর কতগুরো উট দেখেতে পেলাম। রাস্তার অপর পাশে একটি গাড়িতে বৃদ্ধ একজন লোক বসে আছে।আমি গাড়ি সামনে নিতে পারছিলাম না উটগুলোর কারণে। উটের রাখালরা উটগুলোকে হাঁকাচ্ছে কিন্তু সেগুলো রাস্তা ছাড়ছিলো না।
আমি ভাবলাম হরণ বাজালে হয়ত উটগুলো রাস্তা ছেড়ে দিবে। আমি তাই আমার গাড়ির হরণ বাজালাম। এমনি গাড়িতে বসা বৃদ্ধ উটের মালিক আমাকে গালিগালজ করতে শুরু করলো। আমার বাবা নিয়ে অভিশাপ দিতে থাকলো। বলল অভিশাপ পড়ুক এমন বাবার উপর যে তোমার মত ছেলেকে জন্ম দিয়েছে, আমার উটের উপর হরণ বাজানোর তুই কে! তোকে যে জন্ম দিয়েছে তার উপরও অভিশাপ। যা তা বলে আমাকে গালি দিতে থাকলো।
বৃদ্ধর উপর আমার প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হলো। সাধারণ একটি হরণের জন্য এভাবে গালিগালাজ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমি তো ভালোর জন্যই হরণ বাজিয়েছিলাম, হয়ত আমার হরণ শুনে উট চলতে শুরু করবে। আর এর বদলায় এমন গালি শুনতে হলো?
আমি খুব রাগান্বিত হয়ে গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে গায়ের জোড়ে দরজাটি বন্ধ করি। জামার হাতা গুটাতে গুটাতে বৃদ্ধের দিকে যেতে থাকি। গাড়িতে থাকা আমার দুই সাথীর মধ্যে একজন বললেন আপনি কী করতে যাচ্ছেন। আমি বললাম আজ নতুন কিছু দেখবেন। আমি এটা বলে হনহন করে বৃদ্ধের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম।
গিয়ে খুব জোড়ে শব্দ করে তার গাড়ির দরজা খুললাম। বৃদ্ধ আমার ভাবসাব দেখে ভয় পেয়ে গেলো। আমি দরজা খুলেই তার কপালে চুমু দিলাম। আমি বললাম আমাকে আপনি ক্ষমা করে দেন, আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি, আমি আপনার উটকে কষ্ট দিয়েছি। তার অর্থ আমি আপনাকেই কষ্ট দিয়েছি। আসলেই আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন।
বৃদ্ধ আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল। বেটা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি তোমার বাবা মা কে গালি দিয়েছি, অভিশাপ দিয়েছি। আর তুমি আমার কপালে চুমু খেয়েছ আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছ। তুমি বরং আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তখন বললাম, আপনি আমার বাবা-মা এমনকি আমাকে অভিশাপ দিয়েছেন, গালিগালাজ করেছন।
আল্লাহর কসম, আমি কিয়ামত পর্যন্ত আপনাকে ক্ষমা করব না। তবে আপনি ক্ষমা পেতে পারেন এক শর্তে। শর্ত যদি মানেন তাহলে আমি আপনাকে ক্ষমা করবো। বৃদ্ধ লোকটি বলল কী তোমার শর্ত বল। আমি শর্ত মানতে রাজি আছি। আমি বললাম আমাদের উটের দুধ পান করাতে হবে। বৃদ্ধ খুশি হয়ে বলল অবশ্যই।
বৃদ্ধ তার খাদেমদের আদেশ দিলেন, তাড়াতাড়ি গদি বসাও। গালিচা বিছাও। আরেকজন গিযে দুধ দোহন করে নিয়ে আসো। আমার সঙ্গীরাসহ পেটভরে দুধ পান করি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি শের পারেন? তিনি আমাদের শের শুনাতে শুরু করে। অনেক কবিতা শুনায় আমাদের। আমাদের এ মাহফিল আধাঘণ্টা পর্যন্ত চলে। আমরা যখন ওঠার অনুমতি চাই, বৃদ্ধ আমাদের তিনজনকে জড়িয়ে ধরে বলল আমি তোমাদেরকে ছাড়বো না।
আল্লাহর কসম তোমাদেরকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। তোমাদেরকে এভাবে যেতে দিবো না। আমি বৃদ্ধকে বললাম আমাদের এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে হবে। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আবার একদিন আপনার মেহমান হবো। এখন আমাদের অনুমতি দেন। বৃদ্ধ তার উটের পেছনে পর্দা করা তিনটি মেয়েকে দেখিয়ে বলল আমার তিনটি মেয়ে আছে, তোমরা তিন জনও আলেম ও বুদ্ধিমান। তোমরা তাদেরকে বিয়ে করে আমাকে সম্মানিত কর।
সম্মানিত পাঠক! আপনাদের কী মনে হয়? গালির বদলায় একটি নয় তিন তিনটি প্রস্তাব। এটা এজন্যই যে, আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন, ভাল ও মন্দ সমান নয়। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শুত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। (সুরা হা-মীম ৪১:৩৪)
আমি যদি বৃদ্ধের গালির বিপরিতে ভালো আচরণ না করতাম, তাহলে চিত্রটা অন্যরকমও হতে পারতো। গালির বিপরিতে ভালো আচরণের কারণে এ ঘটনাটা কত সুন্দর হয়ে গেলো। আমরা যদি কুরআনের এ ছোট্ট আয়তটার উপর আমল করি, তাহলে আমাদের পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও জান্নাতের মত আনন্দময় হয়ে যেতো। সূত্র: আরমোগান বাংলা সাইট
-এটি