ফরহাদ খান নাঈম।।
মহিলাদের জন্য প্রচারের উদ্দেশ্যে ইসলামী সংগীত গাওয়া জায়েয নেই; এমনকি বাদ্যযন্ত্র ছাড়াও নয়। তদ্রƒপ গাইরে মাহরাম পুরুষদের জন্য কোনো মহিলা শিল্পীর গাওয়া সংগীত শোনাও জায়েয নেই। কেননা কেউ যখন কোনো সংগীত গায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই সে তার কণ্ঠকে নমনীয় ও সুন্দর করে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করে।
আর এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করছেন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, এতে করে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে; তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। সূরা আহযাব: আয়াত ৩২।
আল্লাহ তায়ালা যেরূপভাবে নারী জাতির দেহ-বৈচিত্রে পুরুষের জন্য যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি করেছেন, অনুরূপভাবে তিনি নারীদের কণ্ঠস্বরেও প্রকৃতিগতভাবে মন কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা, কোমলতা ও মধুরতা রেখেছেন, যা পুরুষকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে থাকে। সুতরাং সেই কণ্ঠস্বর ব্যবহার করার ব্যাপারেও উপরোক্ত আয়াতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, পরপুরুষের সাথে বাক্যালাপের সময় ইচ্ছাপূর্বক এমন কণ্ঠ ব্যবহার করবে, যাতে কোমলতা ও মধুরতার পরিবর্তে সামান্য শক্ত ও কঠোরতা থাকে। যাতে ব্যাধিগ্রস্ত অন্তরবিশিষ্ট লোক কণ্ঠের কোমলতার কারণে তাদের দিকে আকৃষ্ট না হয়ে পড়ে এবং তাদের মনে কুবাসনার সৃষ্টি না হয়।
যদিও নারীদের কণ্ঠ আওরাহ (এমন অঙ্গ যা গাইরে মাহরাম থেকে অবশ্যই গোপন রাখতে হবে) এর অর্ন্তভুক্ত নয়, তবু কোনো নারী যদি কোমল সুরে ও আকর্ষণীয় কণ্ঠস্বরে কথা বলে, তাহলে তার কণ্ঠ শোনা জায়েয হবে না। কেননা কোনো নারীকে তার স্বামী ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠস্বরে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমনটি উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন।
স্বভাবতই একজন শিল্পী চাইবে, তার কণ্ঠকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে ও তার কণ্ঠস্বর দ্বারা শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করতে, তাই অবাঞ্ছিত ফিতনা এড়াতে নারী শিল্পীর গাওয়া সংগীত শোনাকে পুরুষদের জন্য নাজায়েয বলা হয়েছে। আর যেহেতু কোনো সংগীত প্রচার হয়ে যাবার পর, উক্ত সংগীতের জন্য শ্রোতা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার সুযোগ নেই, তাই নারী শিল্পীকেও ইসলামী সংগীত পরিবেশন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
শুধুমাত্র ইসলামী সংগীতই নয়; গাইরে মাহরাম পুরুষের শুনে ফেলার আশঙ্কা থাকলে নারীদের জন্য উচ্চস্বরে কুরআন তেলাওয়াতের ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে নারীদেরকে এমনভাবে হাঁটতেও নিষেধ করেছেন, যাতে করে তাদের অলংকারের আওয়ায শোনা যায়। তিনি বলেন, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। সূরা নূর: আয়াত ৩১।
শরীয়াত যেখানে নারীদের অলংকারের আওয়াজকে গোপন রাখার জন্য জোরে পদচারণা করতে নিষেধ করেছে, সেখানে জনসাধারণের জন্য নারী শিল্পী কর্তৃক কোমল ও আকর্ষণীয় কণ্ঠে সংগীত উপস্থাপনার উপর শরয়ী নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কোনো সন্দেহই নেই।
আল্লাহ না করুন! যদি কোনো শ্রোতার মনে নারী শিল্পীর গাওয়া ইসলামী সংগীত শুনে কোনোরূপ অশ্লীল চিন্তা এসে যায়, তাহলে কিন্তু উভয়েরই যিনার মতো কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, মানুষ তার সমগ্র ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে যিনা করে। দেখা হচ্ছে চোখের যিনা, ফুঁসলানো কণ্ঠের যিনা, তৃপ্তির সাথে কথা শোনা কানের যিনা, হাত দিয়ে স্পর্শ করা হাতের যিনা, কোনো অবৈধ উদ্দেশ্যে পথ চলা পায়ের যিনা, এভাবে ব্যভিচারের যাবতীয় ভূমিকা যখন পুরোপুরি পালিত হয়, তখন লজ্জাস্থান তার পূর্ণতা দান করে অথবা পূর্ণতা দান থেকে বিরত থাকে’ (বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ)।
আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
ইসলামওয়েব থেকে ফরহাদ খান নাঈমের অনুবাদ।
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম