আওয়ার ইসলাম: ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অসুস্থতা বাড়িয়ে তোলে। ডায়াবেটিস পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে সচেতন থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কিন্তু এখনও অনেকের মাঝে সেভাবে সচেতনতা বাড়েনি। চিকিৎসকদের মতে, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা, মাত্রাছাড়া খাওয়া-দাওয়ার ফলে বাড়ছে ডায়াবেটিসের সমস্যা। এছাড়া মানসিক চাপ ও অনিয়ম থেকেও অনেকের শরীরে বাসা বাঁধে এই রোগটি।
তবে অনেক সময়ে ডায়াবেটিস রোগীরা বুঝে উঠতে পারেন না এই রোগটি কখন নিয়ন্ত্রণ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু লক্ষণ আছে তাতে বোঝা যায় শরীরে সুগারের মাত্রা বাড়ছে। এবার সেই লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নিন-
বেশি বার বাথরুমে যাচ্ছেন: বার বার প্রস্রাব হওয়া কিন্তু ডায়াবেটিসের লক্ষণ। সুস্থ স্বাভাবিক যে কোনও মানুষ দিনে চার থেকে সাতবার বাথরুমে যান। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে তা অনেক বেশি হয়। এর কারণ হল শরীর অতিরিক্ত গ্লুকোজ তৈরি করে, তা প্রস্রাবের মধ্যে দিয়েই বাইরে আসে। যে কারণে অল্প পানি খেলেও বারে বারে বাথরুমে যেতে হয়।
সবসময় তৃষ্ণা পাওয়া: ১০ মিনিট আগেও পানি খেলে যেন মনে হচ্ছে আবারও গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। মুখ আর গলার চারপাশ সবসময় শুকনো থাকছে। প্রয়োজনের থেকে বেশি পানি খেয়েও তৃষ্ণা মিটছে না। এরকম সমস্যা হলে একবার সুগার টেস্ট করিয়ে নিন।
ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া: মুখ আর ত্বক আগের থেকে খসখসে হয়ে যাচ্ছে। চামড়া সবসময় শুকনো থাকছে। এছাড়াও কোন কারণ ছাড়াই সবসময় গা চুলকাচ্ছে। মুখের ভেতর চুলকোনো, পায়ের পাতা জ্বালা করা এসবও কিন্তু ডায়াবেটিস বাড়ার লক্ষণ।
খিদে বেড়ে যাওয়া: শরীর যখন খাবার হজম করায় তখন শক্তি উৎপন্ন করে। গ্লুকোজ ভেঙে সেই শক্তি আসে। কিন্তু ইনসুলিন যখন ঠিক মতো কাজ করে না তখন এই প্রক্রিয়া থাকে পুরোপুরি বন্ধ। ফলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজের মাত্রা। আর প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার খেলেও তখন মনে হয় পেট ভরেনি।
ক্লান্ত লাগা: ডায়াবেটিস বাড়লে শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগে। থেকে থেকে ঘুম পায়। এছাড়াও কমে যায় পরিশ্রম ক্ষমতা। এমনকী পর্যাপ্ত ঘুমালেও মেটে না ঘুমের চাহিদা। ফলে তারা যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়েন। তবে এই বিষয়টি অবহেলা করবেন না। পরিশ্রম করলে সবারই ক্লান্তি আসে, ঘুম পায়। কিন্তু শরীরে সুগারের মাত্রা বাড়লে এই ঘুম পাওয়া হল অন্যতম লক্ষণ। সব সময় মনে হবে ঘুম কম হচ্ছে।
দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া: চশমা ছাড়াই সব দেখতে পেতেন। কিন্তু কয়েকদিন ধরে সমস্যা হচ্ছে। সব আবছা লাগছে। দৃষ্টিশক্তি পরিস্কার হচ্ছে না, এসবই কিন্তু সুগারের লক্ষণ। কারণ সুগার বাড়লে তার প্রথম প্রভাব পড়ে চোখে আর কিডনিতে। যে কারণে কোমর ব্যথা, পায়ে ব্যথা ইউরিনের সমস্যা আসে। সেই সঙ্গে চশমা ছাড়া দেখতেও অসুবিধা হয়। চোখ সবসময় জ্বালা করে।
পায়ে ব্যথা: পেশির টান, পায়ের তলায় ব্যথা ও জ্বালা সুগার বাড়লে এই সমস্যাও আসে। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারা যায় না। চামড়া ফেটে যায়। সুগার খুব বেশি বাড়লে এই সমস্যা কিন্তু আসতে বাধ্য। এছাড়াও পায়ের চামড়া মোটা হয়ে যাওয়া (কড়া পড়ে যাওয়া) সুগারের লক্ষণ।
ঘা শুকাতে সময় লাগে: সামান্য কোনও ঘা যদি শুকাতে সময় লাগে তাহলে মনে রাখবেন আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি। সুগার থাকলেই যে কোনও কাটা থেকে রস গড়ায়। ওষুধ লাগালেও ক্ষত সহজে সারতে চায় না। কাটার জায়গা লাল হয়ে ফুলেও যায়। যদি দেখেন ১০ দিনেও কোনও কাটা শুকাচ্ছে না তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন অবিলম্বে।
খুব দ্রুত ওজন কমে যাওয়া: ওজন বেড়ে যাওয়া যেমন ভালো নয়, তেমনই দ্রুত ওজন কমে যাওয়াও খুব খারাপ। যারা টাইপ-১ ডায়াবেটিসের শিকার তাদের খুব দ্রুত ওজন কমে যায়। ওটাও ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ।
ইউরিন ইনফেকশন: কোন কারণ ছাড়াই ইউরিন ইনফেকশন, জ্বর হচ্ছে? তাহলে ইউরিন ইনফেকশনের ওষুধের পাশাপাশি ডায়াবেটিস চেক করয়ে নিন। আপনার অজান্তেই হয়তো শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। যে কারণে বার বার ইনফেকশন হচ্ছে, বাথরুমে সমস্যা হচ্ছে। এসব হলে একদম অবহেলা করবেন না। অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
-এএ