আল-আমিন(বাপ্পি)>
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
সারাদেশে ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতন,ধর্ষণসহ নারীর প্রতি বর্বরতার প্রতিবাদে, কুরআন-সুন্নাহর আইন বাস্তবায়ন ও ৬দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ময়মনসিংহের সমমনা ইসলামী দলসমূহ বিক্ষোভ সমাবেশ এবং গণমিছিল করেছে।
আজ (১৬অক্টোবর) শুক্রবার জুমার পর নগরীর বড় মসজিদ চত্বরে এ বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও নেজামে ইসলাম পার্টির জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি শরিফুর রহমানের সঞ্চালনায়, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুফতি মাহবুবুল্লার সভাপতিত্বে শুরু হয় বিক্ষোভ সমাবেশ।
মিছিলপূর্ব সমাবেশের শুরুতেই মুফতি শরিফুর রহমান ৬দফা দাবি ঘোষণা করেন। দাবিগুলো হলো-
এক. জিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণ প্রতিরোধে জনসম্মুখে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
দুই. পর্ণোগ্রাফির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তিন. মাদকদ্রব্যের অবাধ-প্রাপ্তি ও ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
চার. নারীর অশ্লীল উপস্থাপনা ও পণ্য হিসাবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
পাঁচ. আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ এবং বিচার কাজকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখতে হবে।
ছয়. নারীর মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণে কুরআন-হাদিসের শিক্ষাসমূহ জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এসময় সভাপতির বক্তব্যে মুফতি মাহবুবুল্লাহ্ বলেন, আমরা বাংলাদেশে নিরাপত্তার সাথে বসবাস করতে চাই। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, আজ আমার বাংলাদেশের কতক মানুষ মানবতাকে বিসর্জন দিয়ে ধর্ষণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। এটা কোন সভ্য-ভদ্র মানুষের পরিচয় হতে পারে না। এটা কখনই মানবতার কথা হতে পারে না। আজকে যেখানে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে দেশের সমস্ত মানুষ আন্দোলনে নেমে এসেছে, সেখানে আমরা দেখতে পাই কতক মানুষ ধর্ষকদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, ধর্ষণ করা যেমন অপরাধ ঠিক তেমনি ধর্ষণকারীদের সহযোগিতা করাও সমান অপরাধ। সুতরাং ধর্ষণকারীদের যেমন শাস্তি হবে ঠিক তেমনি তাদের সহযোগিতাকারীদেরও সমান শাস্তি দিতে হবে।
আমরা পরিস্কার ভাষায় বলবো, দেশে কোন বিশৃঙ্খলা নয় বরং শান্তিময় পরিবেশ দেখতে চাই। আজ সরকার ধর্ষণের যে আইন করেছে তাতে ধর্ষণ কোনদিনও বন্ধ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৯৭ধারায় লেখা আছে যে, একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে এবং মেয়ে দুজনের ইচ্ছায় যদি কখনো এমন গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে তাদের জন্য কোন শাস্তি নাই। (নাউজুবিল্লাহ) অথচ শরিয়তের দৃষ্টিতে এটা সবচেয়ে জঘন্যতম একটি গুনাহ। ৩য় পর্বে একথাটি উল্লেখ আছে যদি জোরপূর্বকভাবে ধর্ষণ করা হয়, তাহলে মেয়ের কোন শাস্তি নেই। ৩য় নাম্বার ধারায় উল্লেখ আছে, ৩বছর থেকে ১০বছর পর্যন্ত এমন কাজ সংগঠিত হলে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৫০হাজার টাকা জরিমানা নির্ধারণ করা হবে।
অপর দিকে শরিয়তের দাবি হলো, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি এমনটা হয় তাহলে সেটা হবে জিনা। আর শরিয়ত বর্ণিত জিনার শাস্তির মাধ্যমেই এইসকল ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব। এছাড়া অন্য কোনপ্রকার পদ্ধতির মাধ্যমে এই ধরণেন কোন অপরাধ বন্ধ হতে পারে না। সুতরাং আমরা সরকারকে বলতে চাই, আপনি ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু শুধু ধর্ষণ নয় জিনার শাস্তিও বাস্তবায়ন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন, আপনি যে স্বপ্নের বাংলাদেশ দেখতে চান। এর বাস্তবায়ন তখনই সম্ভব হবে, যখন কুরআন-সুন্নাহর আইন ও ৬দফা দাবি বাস্তবায়ন করা হবে।
আজ গোটা বাংলাদেশের মানুষ কুরআন-সুন্নাহর আইন বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। যদি এই আইন ও ৬দফা দাবি বাস্তবায়ন না করা হয়, তাহলে সেই ২০১৩সালের ৫ মেতে যেভাবে শাপলা চত্বরে ৭০লক্ষ তৌহিদী জনতা একত্রিত হয়েছিলো, ঠিক সেভাবে আবার আজকের ঘোষিত ৬দফাকে বাস্তবায়ন করার জন্য ৭০লক্ষ নয় বরং আরো দিগুণ তৌহিদী জনতা শাপলার প্রান্তরে জমা হবে। ইনশাআল্লাহ।
এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন, নেজাম ইসলাম পার্টি ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি মুফতি ওয়ালিউল্লাহ কাসেমী, নেজামে ইসলাম পার্টি ময়মনসিংহ জেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শেখ ফিরোজ, খেলাফত যুব মজলিস ময়মনসিংহ মহানগর সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম, খেলাফত মজলিস বাংলাদেশ ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট মো. রফিকুল ইসলাম, ছাত্র জমিয়ত ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি চৌধুরী নাসীর আহমাদ, খেলাফত যুব মজলিসের ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি মাওলানা রেজাউল করিম।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, খেলাফত মজলিস ময়মনসিংহ জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি যোবায়ের আহমাদ,যুব জমিয়ত ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহিল বাকি, ছাত্র জমিয়ত ময়মনসিংহ মহানগর সভাপতি মাওলানা শরিফুল ইসলাম, প্রভাষক মাওলানা আব্দুল করীম, মাওলানা মাহবুবুর রহমান সাগর, মো.বিপুল সরকার, ছাত্র মজলিস ময়মনসিংহ মহানগর সভাপতি মো.নাজমুস সাকিব প্রমুখ।
এমডব্লিউ/