আল-আমিন(বাপ্পি)>
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের উসূলে হাসতেগানাহ তথা অষ্ট উসূলের উপর ভিত্তি করেই দেশের কওমি মাদরাসা পরিচালিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত ‘তাহাফফুজে ফিকরে দেওবন্দ’ আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা।
আজ (২২সেপ্টেম্বর)মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ময়মনসিংহের প্রাচীনতম দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া আরাবিয়া মাখজানুল উলুম মাদরাসার মিলনায়তনে ‘তাহাফ্ফুজে ফিকরে দারুল উলুম’ দেওবন্দ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, সরকারের সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে দেওয়ার, নেওয়ার নয়। আমরা সরকারের কাছ থেকে আর্থিক কোন সুবিধা লাভ করবো না। আর এটা দেওবন্দের উসূলে হাসতেগানাহ তথা ৮ উসূলের একটি উসূল। যেখানে সরকারের কাছ থেকে দেওবন্দ অনুসারী কোন প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহযোগিতা নিতে পারবে না। আমরা দেওবন্দের উসূলের বাহিরে গিয়ে কোন কাজ করবো না।
বর্তমান বেফাকের চলমান সংকটের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তারা বলেন, বেফাকে সমস্যা সৃষ্টিকারী কোন ব্যক্তিকেই বর্তমান কওমি প্রজন্ম মেনে নিবে না। সরকারের সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে তাদের কোন স্থান নেই। কওমি মাদ্রাসার প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কেউ সরকারের কাছ থেকে কোন অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করবে এটা এই জাতি কখনই মেনে নিবে না।
আল্লামা আব্দুর রহমান হাফেজ্জীর সভাপতিত্বে, আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহ্ সা'দীর আহবানে ও মুফতি আমীর ইবনে আহমাদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দারুল উলুম দেওবন্দের ইতিহাস ঐতিহ্যের উপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। বলা হয় দেওবন্দ শুধু ইলমে দীন চর্চার জন্যই তৈরী করা হয়নি। বরং দারুল উলুম দেওবন্দের ফিকির হলো, মাদ্রাসাগুলোতে এমন সৈনিক তৈরী করা যারা রাতের বেলায় হবে তাহাজ্জুদগুজার আর দিনের বেলায় হবে ঘোড়সওয়ার মুজাহিদ। দারুল উলুম দেওবন্দ খানকা পরিচালনা করবে। আবার প্রয়োজন হলে সে খানকার সমস্ত মুরিদরা, সমস্ত সালেকীনরা তরবারি হাতে জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বে।এটাই হলো দারুল উলুম প্রতিষ্ঠার মুল মাকসাদ।
যেখানে খানকাহী মেহনত নেই সেটাও দারুল উলুম দেওবন্দের ফিকির নয়। যেখানে প্রয়োজনের বেলায় বাতিলের মোকাবেলায় তরবারি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া হয় না। সেটাও দারুল উলুম দেওবন্দের ফিকির নয়। এই যোগ্যতাগুলো অবশ্যই আমাদের মাঝে থাকতে হবে যদি আমরা আমাদের দেওবন্দের অনুসারী বলতে চাই।
আলোচনা সভায় আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, দেওবন্দের সাথে সম্পৃক্ত উলামায়ে কেরামগণ কখনো কারো সাথে কম্প্রোমাইজ করবে না। এটা তাদের বৈশিষ্ট্য। যত বড় শাসকেই হোক, যদি জালিম শাসকও হয় তবুও দেওবন্দী উলামায়ে কেরাম তাদের সাথে কোন প্রকার কম্প্রোমাইজ করবে না আর এটা ইলমে ওহীর তাকাজাও নয়, দেওবন্দী ফিকিরও নয়।
তিনি আরও বলেন, দেশের দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে যদি আমরা কম্প্রোমাইজ করে চলতে থাকি। আর আমরা যদি স্বাধীনচেতা হয়ে আমাদের দ্বীনের প্রচার না চালিয়ে শুধু আরাম করে বসে থাকি। তাহলে সে আলেম হতে পারে কিন্তু দারুল উলুম দেওবন্দের সাথে তার কোন সম্পর্ক হতে পারে না।
আলোচনা সভায় আগত বৃহত্তর ময়মনসিংহের কওমি মাদ্রাসা সমূহের আলেমগণ বেফাকে চলমান সংকট নিরসনে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। এই সংকটপূর্ণ অবস্থার দ্রুত নিরসন না হলে কওমি অঙ্গণের বড় ক্ষতির আশংকা আছে বলে তারা মনে করেন।
অনুষ্ঠান আরও বক্তব্য রাখেন, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা হাসান জামিল, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা লোকমান মাজহারী, মাওলানা ফজলুল হক কাসেমী, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, আল্লামা আব্দুল হক, মুফতি ফজলুল হক, মুফতি মুহিব্বুল্লাহ, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মুফতি মাহবুবুল্লাহ, মুফতি শরিফুর রহমান প্রমুখ।
এছাড়াও বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা উপজেলা পর্যায়ের ইত্তেফাকের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দগণ, এবং ময়মনসিংহের কওমি মাদরাসা সমূহের দায়িত্বশীল আলেমগণও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে আল্লামা আব্দুর রহমান হাফেজ্জী শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমাদ শফী রহ. এর মাগফিরাত ও বেফাকে চলমান সংকট থেকে যেনো দ্রুত উত্তরণের এজন্য দোয়া পরিচালনা করেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ইং শনিবার, কওমি মাদরাসায় চলমান সংকট উত্তরণে দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরামের উপস্থিতিতে কামরাঙ্গীরচর মাদরাসায় গুরুত্বপূর্ণ ইসলাহী মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে চার দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। চার দফার প্রথম দফায় বলা হয় কওমি মাদরাসার ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা রক্ষার্থে ‘তাহাফফুজে ফিকরে দেওবন্দ’ শিরোনামে সারাদেশে আলোচনা সভা করা হবে। তারই ভিত্তিতে প্রথম ময়মনসিংহ তাহাফ্ফুজে ফিকরে দারুল উলুম দেওবন্দ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হলো।
এমডব্লিউ/