এম. মিজানুর রহমান
লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি>
বান্দরবানের লামা-আলীকদম ও চকরিয়া সড়কের গণপরিবহনে সাম্প্রতিক করোনার কারণে বর্ধিত ভাড়া আদায়ে সচেতন হলেও স্বাস্থ্যবিধি পালনে খুবই অসচেতন। সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব পরিবহন পরিচালনার নির্দেশনা থাকলেও তার পুরোপুরি পালনে কোনদিন দেখা যায়নি।
লামা পৌর বাস টার্মিনাল থেকে চকরিয়াগামী বাসে দেখা যায়, হেলপাররা আগের মতো জোর করে টেনে টেনে যাত্রী তুলছেন। এসময় কোনও পরিবহনে জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায়নি। সরকারের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী দু’টি আসন থেকে একটি ফাঁকা রাখার কথা থাকলেও দুটো আসনে যাত্রী বসিয়ে ৬০% বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এমনকি বাসের দুই পাশের সিটের মধ্যবর্তী খালি জায়গায় দাঁড় করিয়ে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ছোট্ট ইঞ্জিন বক্সে ৫ থেকে ৬ জন যাত্রী চাপাচাপি করে যাত্রী বসানো হচ্ছে।
একই সাথে, উপজেলার অভ্যন্তরীন ও বহি:সড়কে চলাচলকারী বাস, জীপ, সিএনজি, অটোরিকশা ও মাহিন্দ্রা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে চলছে গণ পরিবহনগুলাে। কিন্তু মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। লামা-রুপসীপাড়া, লামা-গজালিয়া, লামা-ক্যয়াজুপাড়া, লামা-আলীকদম ও লামা- চকরিয়া সড়কেও একই অবস্থা দেখা যায়।
উল্লেখ্য যে, গত দু মাস ধরে লকডাউনের দোহাই দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষাসহ সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে পরিবহন কর্তৃপক্ষ। যেমন, লামা বাজার থেকে মধুঝিরি পর্যন্ত টমটমের ভাড়া ছিল ৫ টাকা, বর্তমানে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। লামা থেকে চকরিয়া বাসের ভাড়া ছিল ৪০ টাকা, বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ৭০টাকা, জীপ গাড়িতে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। লামা থেকে বান্দরবান ভাড়া ছিল ১২৫ টাকা, বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। লামা থেকে চট্রগ্রাম ভাড়া ২৫০ টাকা, বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। লামা থেকে ঢাকার ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা, বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ১৩০০ শত টাকা।
এদিকে, করােনায় মানুষের আয় কমলেও ভাড়া বাড়ানোর কারণে যাত্রীদের কষ্ট হচ্ছে বলে জানান অনেকে। যেসব গণ পরিবহন স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি সড়ক পরিবহন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা/প্রচলিত বিধি-বিধান অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট বাতিল করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।
সৈয়দ আলম, মংশৈহ্লা মার্মা ও আবদুল করিম নামের তিন যাত্রী বলেন, আমরা আলীকদমের রেপার পাড়া বাজার থেকে মাহিন্দ্রা গাড়ি যােগে লামা বাজার আসছিলাম। আমাদের কাছ থেকে ৬০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। কারন জানতে চাইলে ড্রাইভার বলছে এটা নাকি নির্ধারিত।
যাত্রী সােহেল, জসিম উদ্দিন, জহিরসহ অনেকে জানায়, আমরা লামা থেকে বাস গাড়ি যােগে চকরিয়া যাচ্ছি। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েও ভাড়া নির্ধারিত হারের চেয়ে অতিরিক্ত নেয়া হয়েছে।জীপ গাড়ি অর্ধেক যাত্রী নিলেও ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেখা উচিৎ।
তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযােগ অস্বীকার করে চকরিয়া-লামা-আলীকদম ও বান্দরবান বাস মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল হােসেন ও জীপ মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বলেন, লকডাউনের সময় প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া ও বিধি মােতাবেক যানবাহন চলছে। প্রশাসনের নির্দেশনা পেলে কয়েক দিনের মধ্যেই ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজা রশীদ বলেন, গণ পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে যানবাহন মালিক পক্ষের সাথে বৈঠক হয়েছে, তারা ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তিনদিন সময় চেয়েছেন। এর মধ্যে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণে না আনলে, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহা. মােস্তফা জামাল জানান, লকডাউনের পূর্বে যে ভাড়া নির্ধারিত ছিল, সেটাই বহাল রাখতে গত বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। দ্রুত পরিবহন সেক্টরগুলােকে ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে।
-এএ